মিয়ানমারের প্রবল প্রতাপশালী সেনাপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লেইং

ক্ষমতা ছিনিয়ে মিয়ানমারের অভ্যুত্থানের মূলহোতা সেনাবাহিনীর প্রতাপশালী জেনারেল মিন অং হ্লেইং নিজের ও তার পরিবারের আর্থিক স্বার্থ এবং অর্থনীতিতে সেনাবাহিনীর একচ্ছত্র আধিপত্যের সুরক্ষা নিশ্চিত করেছেন। সামরিক কর্মজীবনের বেশিরভাগ সময় শান্ত থাকলেও গত ১ ফেব্রুয়ারি ভোরের আলো ফোটার আগেই এক সময়ের লাজুক এই সেনা কর্মকর্তা শান্ত মাথায় দেশের ক্ষমতার সর্বোচ্চ আসনে বসেছেন। রক্তপাতহীন অভ্যুত্থানে ক্ষমতার চূড়ায় নিজেকে আসীন করেছেন আগামী ৩ জুলাই ৬৫ বছর বয়সে বাধ্যতামূলক অবসরে যাওয়ার মাত্র পাঁচ মাস আগে।

তার এই অভ্যুত্থানের নেপথ্যে নিজেকে এবং পরিবারের সদস্য ও সামরিক সহকর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিস্তৃত লাভজনক আর্থিক চুক্তি ও অর্থনৈতিক ব্যবসা-বাণিজ্যে নয়-ছয়ের সম্ভাব্য সরকারি তদন্ত থেকে পরিষ্কারভাবে বাঁচানোর প্রত্যাশাও কাজ করেছে। দেশটির সামাজিক আন্দোলন কর্মীদের গ্রুপ জাস্টিস ফর মিয়ানমার এক বিবৃতিতে বলেছে, সেনাপ্রধানের আর্থিক স্বার্থকে অবশ্যই অভ্যুত্থানের উদ্দেশ্য হিসেবে বিবেচনা করা উচিত।

মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর দুই বড় প্রতিষ্ঠান মিয়ানমার ইকোনমিক করপোরেশন (এমইসি) এবং মিয়ানমার ইকোনমিক হোল্ডিংস লিমিটেডে (এমইএইচএল) সেনাপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লেইংয়ের চূড়ান্ত কর্তৃত্ব রয়েছে।

মিন অং হ্লেইয়ের ছেলে অং পায়ে সোনের এঅ্যান্ডএম নামের একটি মেডিক্যাল সরঞ্জাম সরবরাহ কোম্পানি রয়েছে। এই কোম্পানি দেশটিতে খাদ্য এবং ওষুধ প্রশাসন দফতরের ছাড়পত্র বিক্রি, আমদানিতে মধ্যস্থতার পাশাপাশি ফার্মাসিউটিক্যালস এবং মেডিক্যাল প্রযুক্তি পণ্য বাজারজাত করে।

চং থার ইরাবতি অঞ্চলের সমুদ্র সৈকতে অং পায়ে সোনের মালিকানাধীন আজুরা বিচ রিসোর্ট ইয়াঙ্গুনের অভিজাত শ্রেণির কাছে তুমুল জনপ্রিয়। পশ্চিমা ধাঁচের বিলাসবহুল এই রিসোর্টে দেশটির অভিজাত শ্রেণির লোকজন কোটি কোটি ডলার উড়ান।

মিয়ানমার সেনাপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লেইংয়ের পরিবারের রয়েছে বিশাল ব্যবসা-বাণিজ্য

স্কাই ওয়ান কনস্ট্রাকশনকে কয়েক বছর আগে সরকারের কাছ থেকে ইজারা নেওয়া ২২ দশমিক ২২ একর জমির ওপর একটি বিশাল রিসোর্ট তৈরির অনুমতি দেয়া হয়েছে। স্কাই ওয়ান কনস্ট্রাকশনও সেনাপ্রধানের ছেলে অং পায়ে সোনের মালিকানাধীন। অং পায়ের স্ত্রী মিও ইয়াদানার তাইকও রয়েছেন ব্যবসায়। স্বামীর সঙ্গে নিয়েন চ্যান পায়ে সোনে ম্যানুফ্যাকচারিং অ্যান্ড ট্রেডিং কোম্পানির একজন পরিচালক তিনি।

ব্যবসা বাণিজ্যে আরেক ধাপ এগিয়ে সেনাপ্রধানের মেয়ে খিন থিরি থেট মন। সেভেনথ সেন্স নামের একটি মিডিয়া প্রোডাকশন প্রতিষ্ঠান রয়েছে; যে প্রতিষ্ঠান থেকে বিশাল বিশাল বাজেটের সিনেমা তৈরি হয়। সেভেনথ সেন্সের সঙ্গে চুক্তি রয়েছে বৃহৎ দুই কোম্পানি নায়ে টো এবং ওয়াট মোনে শিওয়ে ইর।

২০১৯ সালে জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর আর্থিক সক্ষমতায় সহায়তা দিয়ে আসছে এমইসি এবং এমইএইচএল। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন ও স্থানীয় মানবাধিকার আইন লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে সেনাবাহিনীর কাজে ভূমিকা রাখে এসব প্রতিষ্ঠানের আর্থিক সহায়তা।

মিয়ানমার সেনাপ্রধানের পারিবারিক ব্যবসা-বাণিজ্যের এই তালিকার ফিরিস্তি ব্যাপক এবং সুদীর্ঘ।

অভ্যুত্থানের হোতা মিন অং হ্লেইংয়ের প্রতি তার সহকর্মী ছাড়াও সেনাবাহিনীর বিভিন্ন ব্যবসায়িক উদ্যোগের সুবিধাভোগীদেরও শক্তিশালী সমর্থন রয়েছে। সম্প্রতি চীন, রাশিয়া, ইসরায়েল এবং অন্যান্য কিছু দেশ থেকে সেনাবাহিনীর জন্য ব্যয়বহুল অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম কেনার চুক্তি করে ঊর্ধ্ব এবং অধঃস্তন কর্মকর্তাদের সন্তুষ্ট করেছেন তিনি।

বন্ধুমহলে লাজুক হিসেবে পরিচিত এক সময়ের সেনা কর্মকর্তা মিন অং হ্লেইয়ের রাজনৈতিক উচ্চাশায় অবাক অনেকে 

বার্লিনভিত্তিক ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) দুর্নীতির ধারণা সূচকে বিশ্বের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় ওপরে থাকা দেশগুলোর একটি মিয়ানমার। দেশের কঠোর নিয়ন্ত্রণ মিন অং হ্লেইংয়ের হাতে থাকায় তার পরিবার এবং সামরিক কমরেডরা খুশি। কারণ তাদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে বিশেষ কোনও সমস্যার সৃষ্টি হলে তা সরকারি তদন্তের বাইরে থেকে যাবে এবং জবাবদিহিতা করতে হবে না। এই ব্যবসা-বাণিজ্যের লাভ এবং মালিকানা স্থানান্তরেও কোনও ধরনের ঝামেলায় পড়তে হয় না।

গত ১ ফেব্রুয়ারির অভ্যুত্থানের বদলে মিন অং হ্লেইং যদি আগামী জুলাইয়ে অবসরে যেতেন, তাহলে অং সান সু চির ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসি (এনএলডি) নেতৃত্বাধীন নতুন সরকারের সম্ভাব্য আর্থিক তদন্তের মুখে পড়তে হতো তাকে। গত বছরের ৮ নভেম্বরের নির্বাচনে সেনাবাহিনী সমর্থিত রাজনৈতিক দল ইউনিয়ন সলিডারিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির (ইউএসডিপি) বিরুদ্ধে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় সু চির এনএলডি।

 রোহিঙ্গা সঙ্কট ঘিরে আগামীতে মিয়ানমার সেনাপ্রধান মিন অং হ্লেইংয়ের ওপর পশ্চিমা বিশ্বের চাপ তীব্র হওয়ার আশঙ্কা ছিল।

লন্ডন ইউনিভার্সিটির স্কুল অব ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজের অধ্যাপক অভিনাশ পালিওয়াল বলেন, অং সান সু চি যখন আরেকটি নির্বাচনে বিশাল জয় পেলেন, তা প্রকৃত গণতন্ত্রায়নের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিল– এমনকি সু চির দল স্বাভাবিকভাবে উদারপন্থী হলেও সেনাবাহিনীর অবস্থানকে তাদের জয় দীর্ঘমেয়াদে ক্ষুণ্ন করতে পারে বলে আশঙ্কা ছিল সেনাপ্রধানের।

চীনের সঙ্গে সু চি এবং এনএলডির ক্রমবর্ধমান বাণিজ্যিক সম্পর্ক; বিশেষ করে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের আওতায় মিয়ানমারে বেইজিংয়ের বিশাল অবকাঠামো উন্নয়ন স্বার্থের বিষয়গুলো মিন অং হ্লেইং এবং সামরিকবাহিনী কীভাবে নিয়েছে সেটি খুব বেশি পরিষ্কার নয়।

সড়ক, রেলপথ থেকে শুরু করে বন্দর উন্নয়নের বিশাল চুক্তির টিকেট এনএলডি কীভাবে নিয়ন্ত্রণ এবং পরিচালনা করেছে সেটিও অস্পষ্ট। এসব চুক্তিভিত্তিক উন্নয়ন কাজের সঙ্গে সেনাবাহিনীর সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা তাও পরিষ্কার নয়। ২০১৭ সালের আগস্টে  রাখাইনে শুরু হওয়া সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিম জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্মম অভিযানের পর থেকেই আন্তর্জাতিক চাপে ছিলেন মিন অং হ্লেইং।

মিয়ানমারের সেনা জেনারেল মিন অং হ্লেইং

গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনের প্রতীক হিসেবে অতীতে নোবেল শান্তি পুরস্কারসহ আন্তর্জাতিক অনেক পদক পেয়েছিলেন অং সান সু চি। গত কয়েক বছরে রোহিঙ্গাদের ওপর সেনাবাহিনীর রক্তাক্ত অভিযানের জেরে এসব পদকের অনেক কিছু হারানোর পরও দেশটিতে ব্যাপক জনপ্রিয় তিনি।

পশ্চিম মিয়ানমারে রোহিঙ্গা গণহত্যা, ধর্ষণ এবং দেশ ছাড়তে বাধ্য করার দায়ে আন্তর্জাতিক আদালতে দেশটির সেনাবাহিনীকে বিচারের মুখোমুখি করা উচিত

জাতিসংঘের তদন্তকারী দল

তিন বছর আগে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অভিযানে ৭ লাখ ৩০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা প্রতিবেশি বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। অং সান সু চি এবং মিয়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালানোর অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, নিরাপত্তা বাহিনী আত্মরক্ষার্থে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেছে।

রোহিঙ্গা নিপীড়নে সংশ্লিষ্টতার দায়ে ২০১৯ সালে মিন অং হ্লেইং ও দেশটির সেনাবাহিনীর অন্য তিন শীর্ষ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। গ্লোবাল ম্যাগনেটস্কি হিউম্যান রাইটস অ্যাকাউন্টেবিলিটি আইনে এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় মিন অং হ্লেইং এবং ওই তিন কর্মকর্তার যুক্তরাষ্ট্রে থাকা সম্পদ অবরুদ্ধ (ফ্রিজ) হয়। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে তাদের সঙ্গে কেউ ব্যবসায়িক সম্পর্ক রক্ষা করলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনে তাৎক্ষণিকভাবে মিয়ানমারে অভ্যুত্থানের নিন্দা এবং অভ্যুত্থান বাতিল না করা হলে আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবেন বলে হুমকি দেন। ১০ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর প্রধানসহ শীর্ষ কয়েকজন জেনারেলের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা মিন অং হ্লেইং এবং সামরিক বাহিনীকে ক্ষমতা থেকে পিছু হটতে বাধ্য করবে বলে মনে হয় না।

আগামী জুলাইয়ে বাধ্যতামূলক অবসরে যাওয়ার কথা ছিল মিন অং হ্লেইংয়ের

১৯৬২ সাল থেকে শুরু করে ধারাবাহিকভাবে দশকের পর দশক ধরে মিয়ানমার শাসন করেছে দেশটির সেনাবাহিনী। প্রায় পাঁচ দশকের সেনা শাসনের পর মিয়ানমারে গণতন্ত্রের যাত্রা শুরু হয় ২০১৫ সালে। 

নভেম্বরের নির্বাচনে অং সান সু চির এনএলডির জয়ে দেশটিতে গণতন্ত্রের যাত্রা পোক্ত হওয়ার আগেই আবারও ধাক্কা খেল।

মিয়ানমার সামরিক বাহিনী দেশটির পার্লামেন্টের যেকোনও সিদ্ধান্তে ভেটো দিতে নিজেদের জন্য এক চতুর্থাংশ আসন সংরক্ষিত রেখেছে। রাজনীতিতে ভূমিকা রাখার পাশাপাশি স্বরাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা এবং সীমান্ত কল্যাণবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণও সেনাবাহিনীর হাতে।

এই অঞ্চলের অন্যতম সম্ভাবনাময় অর্থনীতি থেকে মিয়ানমারকে একেবারে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গিয়েছিল অতীতের স্বৈরশাসকরা; যা দেশটিতে ব্যাপক বৈষম্যের সৃষ্টি করে। আর এর নেপথ্যে কাজ করেছে দশকের পর দশক ধরে লেগে থাকা আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা।

অং সান সু চি নেতৃত্বাধীন দেশটির নির্বাচিত সরকারের আমলের বিদেশি বিনিয়োগকারীরা অভ্যুত্থানের ঘটনায় কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাবেন সেটি এখনও পরিষ্কার নয়। রোহিঙ্গা গণহত্যার পরও দেশটিতে বিনিয়োগ অব্যাহত রাখায় অনেক বিনিয়োগকারী ইতোমধ্যে নিজেদের সুনাম হারিয়েছেন।

বিদেশি বিনিয়োগকারীরা যদি দেশটির অর্থনৈতিক এবং আর্থিক কিছু প্রধান খাত থেকে বিনিয়োগ প্রত্যাহার করে নেন কিংবা সরে যান, তাহলে তা এক বছরের জরুরি অবস্থাকালীন মিন অং হ্লেইং এবং তার সহকর্মীদের জন্য অর্থনীতিকে বাঁচিয়ে রাখা কঠিন করে তুলতে পারে।

অভ্যুত্থানের পর সম্প্রতি থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী স্বৈরশাসক প্রায়ুথ চান-ওচার সমর্থন চান মিন অং হ্লেইং

মিয়ানমারে অভ্যুত্থানের একদিন পর গত ৩ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) ‘মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর নিপীড়নে তহবিলের জোগান দেওয়া কি আপনার কাজ?’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

দেশটিতে ব্যবসা পরিচালনাকারী বিদেশি অংশীদারদের ওপর ইতোমধ্যে চাপ প্রয়োগ শুরু করেছে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা।

এতে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী সংশ্লিষ্ট দুটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জাপানের মদ্য এবং কোমলপানীয় কোম্পানি কিরিন হোল্ডিংসের ব্যবসা পরিচালনার উদ্যোগের বিশেষ সমালোচনা করা হয়। অভ্যুত্থানের প্রতিক্রিয়ায় ৫ ফেব্রুয়ারি জাপানের এই কোম্পানি সামরিক বাহিনী সংশ্লিষ্ট এমইএইচএলের মিয়ানমার ব্রেওয়ারি এবং মান্দালয় ব্রেওয়ারির সঙ্গে ব্যবসায়িক অংশীদারিত্ব বাতিলের ঘোষণা দেয়।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের জ্যেষ্ঠ পরামর্শক অরুণা ক্যাশাপ বলেন, ‘মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর সঙ্গে ব্যবসা অব্যাহত রাখা হলে তাতে মানবাধিকার, সুনাম এবং আইনি ঝুঁকি আসন্ন।’

তিনি বলেন, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা মুসলিম গণহত্যা এবং জাতিগত সংখ্যালঘুদের ওপর যুদ্ধাপরাধ সংঘটনের অভিযোগ রয়েছে। আর এখন মিয়ানমারের প্রভাবশালী এই বাহিনী দেশটির বেসামরিক সরকার হটিয়ে ক্ষমতার মসনদে বসেছে; যে সরকার গত নির্বাচনে ৮০ শতাংশের বেশি ভোট পেয়ে পুনরায় দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হয়েছিল।

অভ্যুত্থান পরবর্তী নতুন নিষেধাজ্ঞার ফলে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীরা নিষিদ্ধ হতে পারেন আশঙ্কায় মিয়ানমারে এক বিলিয়ন মার্কিন ডলারের একটি শিল্পাঞ্চল উন্নয়ন প্রকল্পে বিনিয়োগ স্থগিত করেছে থাইল্যান্ডের আমাতা গ্রুপ। 

আমরা এবং আমাদের গ্রাহকরা মিয়ানমারে পশ্চিমা বিশ্বের সম্ভাব্য বাণিজ্য বর্জন নিয়ে উদ্বিগ্ন

আমাতার প্রধান বিপণন কর্মকর্তা (সিএফও) ভিবুন ক্রোমাদিত

অভ্যুত্থান পরবর্তী পরিস্থিতি স্থিতিশীল না হওয়া পর্যন্ত জাপানের বহুজাতিক কোম্পানি সুজুকি মিয়ানমারে তাদের মোটর উৎপাদনের দু’টি কারখানা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মিয়ানমারে চীনের ক্রমবর্ধমান বাণিজ্যিক স্বার্থের ওপর অভ্যুত্থানের প্রভাব কম হবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। কারণ ইতোমধ্যে বেইজিং মিয়ানমারের সামরিক অভ্যুত্থানে সমর্থন জানিয়ে দিয়েছে। দেশটি বলেছে, এটি মিয়ানমারের মন্ত্রিসভায় ব্যাপক রদবদলের ঘটনা মাত্র।

সূত্র: এশিয়া টাইমস, রয়টার্স, বিবিসি।

এসএস