ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান চলছে বেশ জোর গতিতেই। তবে যুদ্ধের প্রাথমিক পরিকল্পনা থেকে বেরিয়ে রাশিয়ার মূল মনোযোগ এখন ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে। মস্কোর এই পদক্ষেপে যুদ্ধ বন্ধের ক্ষীণ আশা জেগে উঠলেও রাশিয়ার সর্ব-সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডে উত্তেজনা বাড়তে চলেছে আরও।

মূলত ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধের মধ্যেই পারমাণবিক সক্ষমতা সম্পন্ন ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মহড়া চালিয়েছে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী। রাশিয়া নিজেই সামনে এনেছে এই তথ্য। বৃহস্পতিবার (৫ মে) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এএফপি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বুধবার (৪ মে) রাশিয়া জানিয়েছে, ইউক্রেনে মস্কোর চলমান অভিযানের মধ্যে রুশ সামরিক বাহিনী পারমাণবিক সক্ষমতা সম্পন্ন ক্ষেপণাস্ত্র হামলার অনুশীলন করেছে। রাশিয়ার কালিনিনগ্রাদের একটি এলাকায় কৃত্রিম এই পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মহড়া চালানো হয়।

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ভোরে ইউক্রেনে হামলা শুরু করে রাশিয়ান সৈন্যরা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের প্রথম দেশ হিসেবে রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনী স্থল, আকাশ ও সমুদ্রপথে ইউক্রেনে এই হামলা শুরু করে। একসঙ্গে তিন দিক দিয়ে হওয়া এই হামলায় ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র পড়েছে বৃষ্টির মতো।

এএফপি বলছে, ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর ৭০তম দিনে এসে পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মহড়া চালানোর ঘোষণা দিলো রাশিয়া। প্রায় আড়াই মাসের এই যুদ্ধে হাজারও মানুষ নিহত হয়েছেন এবং ঘর-বাড়ি হারিয়ে উদ্বাস্তু হয়েছেন এক কোটি ৩০ লাখেরও বেশি মানুষ। আর এতেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে সবচেয়ে বড় শরণার্থী সংকটের সৃষ্টি হয়েছে।

এর আগে ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিকে ইউক্রেনে সৈন্য পাঠানোর পর রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন রাশিয়ার কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েনের ইচ্ছার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। যেটাকে কার্যত অনেকে হুমকি বলে মনে করেছিলেন। এছাড়া গত মাসের শেষের দিকে পরমাণু যুদ্ধের হুমকিকে বাস্তবসম্মত বলেও আখ্যায়িত করেছিলেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ।

এএফপি বলছে, বাল্টিক সাগরের তীরবর্তী ছোট একটি শহর কালিনিনগ্রাদ। ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সদস্য রাষ্ট্র পোল্যান্ড ও লিথুয়ানিয়ার মধ্যে অবস্থিত এই অঞ্চলটি রাশিয়ার একটি ছিটমহল। বুধবার এখানেই কৃত্রিম পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মহড়া চালায় রুশ সামরিক বাহিনী।

রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, পোল্যান্ড ও লিথুয়ানিয়ার মধ্যে অবস্থিত বাল্টিক সাগরের এই ছিটমহলে কৃত্রিম ‘ইলেক্ট্রনিক লঞ্চ’-র মাধ্যমে পারমাণবিক সক্ষমতা সম্পন্ন ইস্কান্দার ভ্রাম্যমাণ ব্যালিস্টিক মিসাইল হামলার অনুশীলন করেছে সামরিক বাহিনী।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা, বিমানঘাঁটি, সুরক্ষিত অবকাঠামো, সামরিক সরঞ্জাম এবং প্রতীকী শত্রুর কমান্ড পোস্টের অনুকরণে তৈরি লক্ষ্যবস্তুতে একক এবং একাধিক হামলার অনুশীলন করে সেনারা।

রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, ইলেক্ট্রনিক ব্যবস্থায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মহড়া চালানোর পর ‘সম্ভাব্য প্রতিশোধমূলক হামলা’ এড়াতে রুশ সেনারা নিজেদের অবস্থান পরিবর্তনের একটি কৌশলের অনুশীলন করে। সামরিক এই মহড়ায় শতাধিক সেনাসদস্য অংশগ্রহণ করেন।

এর আগে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর কয়েকদিনের মাথায় রাশিয়ার পারমাণবিক প্রতিরোধ বাহিনীকে উচ্চ সতর্ক অবস্থায় থাকার নির্দেশ দিয়েছিলেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।

মূলত ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন ঘিরে পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর ‘আক্রমণাত্মক বিবৃতি’ এবং মস্কোর বিরুদ্ধে বিভিন্ন দেশের একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে এই নির্দেশ দেন তিনি।

এছাড়া ইউক্রেন যুদ্ধে কোনো দেশ হস্তক্ষেপ করলে তাকে সমুচিত জবাব দেওয়া হবে বলে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন পুতিন। গত এপ্রিলের শেষের দিকে রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমাদের সব ধরনের উপকরণ আছে... দরকার হলে আমরা তা ব্যবহার করবো।’

পুতিনের ভাষায়, ‘কেউ যদি বাইরে থেকে ইউক্রেনে হস্তক্ষেপের চেষ্টা করে ও রাশিয়ার জন্য কৌশলগত হুমকি সৃষ্টি করে, তাহলে আমরা বিদ্যুৎ গতিতে জবাব দেবো।’

টিএম