ছবি: দ্য ইকনোমিস্ট

ইউক্রেনে রুশ সেনাবাহিনীর বিশেষ সামরিক অভিযানের ৭৭ দিন পেরিয়েছে। এই যুদ্ধের শুরু থেকেই সব বিচারে নিজেদের চেয়ে বহুগুণ শক্তিশালী রুশ বাহিনীকে রীতিমতো পর্যুদস্ত করে চলছেন ইউক্রেনীয় সেনারা।

আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন বলছে, গত দু’মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা এই সামরিক অভিযানে এর মধ্যেই রুশ বাহিনীর কয়েকজন জেনারেল ও হাজার হাজার রুশ সেনা নিহত হয়েছেন।

কিন্তু কীভাবে এটি সম্ভব হলো? বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ শক্তিশালী একটি সেনাবাহিনীর এত ক্ষয়ক্ষতি করতে পারল এমন একটি দেশের সেনারা, যাদের আধুনিক সমরাস্ত্রের মজুত নিতান্তই অল্প?

মস্কোর অভিযোগ— যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা বিভিন্ন দেশ ইউক্রেনকে আধুনিক অস্ত্র সরবরাহ করছে এবং এ কারণেই দীর্ঘায়িত হচ্ছে যুদ্ধ। এই অভিযোগ আংশিকভাবে সঠিক হলেও পুরোপুরি নয়। কারণ, চলমান এই যুদ্ধে ইউক্রেনের সেনারা ভরসা করছেন তাদের নিজেদের অস্ত্রাগারে থাকা পুরনো বিভিন্ন সমরাস্ত্রের ওপর এবং সেসব বেশ ভালো সেবা দিচ্ছে।

তেমনি একটি অস্ত্রের নাম ম্যাক্সিম এম-১৯১০ ভারী মেশিনগান। ইউক্রেনে রুশ সেনাদের মৃত্যু ও বাহিনীর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ট্যাংক ধ্বংসের প্রধান কৃতিত্ব এই মেশিনগানটির। বিভিন্ন গুপ্ত অবস্থান থেকে বিরতিহীন ব্রাশ ফায়ারের মাধ্যমে রুশ সৈন্যদলকে রীতিমতো নাজেহাল করে ছেড়েছেন ইউক্রেনীয় সেনারা।

ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যায়, রাশিয়ায় যখন জার শাসন চলছিল—সে সময় ১৮৮৩ সালে হিরাম ম্যাক্সিম নামে একজন ব্রিটিশ-মার্কিন সমরাস্ত্র উদ্ভাবক এই মেশিনগানটি প্রথম তৈরি করেছিলেন। জার শাসনামলের শেষ দিকে, ১৯১০ সালে এ অস্ত্রটি রুশ সেনাবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত হয়।

ম্যাক্সিম এম-১৯১০ আসার আগ পর্যন্ত গ্যাটলিং গান নামে এক ধরনের বন্দুক ব্যবহার করত রাশিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশের সেনাবাহিনী। বন্দুকটিকে মেশিনগানের আদিতম সংস্করণ বলে মনে করা হয়। ছোটোখাটো একটি কামানের মতো দেখতে এই বন্দুকটির ওজন ছিল ৭৭ কেজির কিছু বেশি। মোট ছয়টি ব্যারেল (বন্দুকের নল) ছিল গ্যাটলিং গানের, অর্থাৎ একসঙ্গে মাত্র ৬টি গুলি করা যেত এই বন্দুক দিয়ে; আর ছিল দুটি চাকা— যার সাহায্যে এটি এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নেওয়া হতো।

গ্যাটেলিং গান

কিন্তু ম্যাক্সিম এম-১৯১০ আসার পর অচল হয়ে পড়ে এই গ্যাটলিং গান। ৬৭ কেজি ওজনের ম্যাক্সিম এম-১৯১০ মেশিনগানটিতেও দুটি চাকা রয়েছে এবং ওজনের কারণে এক স্থান থেকে অন্যখানে এটির স্থানান্তর বেশ কষ্টসাধ্য প্রক্রিয়া; তবে যুদ্ধক্ষেত্রে মেশিনগানটির সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো— এটি দিয়ে দীর্ঘসময় একটানা গুলিবর্ষণ (ব্রাশ ফায়ার) করা যায় এবং টানা ব্রাশ ফায়ার করে গেলেও ম্যাক্সিম এম-১৯১০ মেশিনগানের ব্যারেল বা মেকানিজমে কোনো সমস্যা হয় না।

ভারী মেশিনগানে ৭.৬২ মিলিমিটার দৈর্ঘ্যের বিশেষ গুলি ব্যবহৃত হয়। গত শতাব্দীতে অবশ্য ভারী মেশিনগানের কয়েকটি সংস্করণ এসেছে, যেগুলো ম্যাক্সিম এম-১৯১০ মেশিনগানের চেয়ে হালকা ও সহজে বহনযোগ্য; কিন্তু সেসব দিয়ে দীর্ঘক্ষণ গুলি চালানো সম্ভব হয় না।

কারণ, দীর্ঘক্ষণ ব্রাশ ফায়ার করা হলে গুলির তাপে সেসব মেশিনগানের ব্যারেল নষ্ট বা অকার্যকর হয়ে যায়।

এক্ষেত্রে ম্যাক্সিম এম-১৯১০ ব্যতিক্রম তার ভিন্নধর্মী ব্যারেলের কারণে। ব্যারেল শীতল রাখার জন্য বিশেষ প্রক্রিয়ায় এতে পানি রাখার ব্যবস্থা রয়েছে। ফলে, দীর্ঘসময় একটানা ব্রাশ ফায়ার করলেও গুলির তাপে ব্যারেলের কোনো ক্ষতি হয় না।

২০১২ সালের অডিট অনুযায়ী, ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর অস্ত্রাগারে ৩৫ হাজার ম্যাক্সিম এম-১৯১০ মেশিনগান রয়েছে। সাবেক সোভিয়েত আমলে ১৯২০ থেকে ১৯৫০ সালের মধ্যে তৈরি করা হয়েছিল এসব মেশিনগান।

সূত্র: দ্য ইকোনমিস্ট

এসএমডব্লিউ/জেএস