ইউক্রেন যুদ্ধের বাস্তবতায় নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে ভাবছে ইউরোপীয় দেশগুলো। আর তাই যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটোয় যোগ দিতে ইচ্ছুক অনেক দেশ। এক্ষেত্রে অনেকটা এগিয়ে গেছে ফিনল্যান্ড।

দেশটির প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীও জানিয়েছেন, ফিনল্যান্ড দ্রুত ন্যাটোয় যোগ দিতে চায়। এই পরিস্থিতিতে শুক্রবার (১৩ মে) থেকেই ফিনল্যান্ডে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিতে পারে রাশিয়া। দেশটির স্থানীয় এক পত্রিকার বরাত দিয়ে বৃহস্পতিবার (১২ মে) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার রাশিয়া প্রতিবেশী দেশ ফিনল্যান্ডে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করতে পারে বলে প্রধান প্রধান ফিনিশ রাজনীতিবিদদের সতর্ক করা হয়েছে। ফিনল্যান্ডের স্থানীয় পত্রিকা ইলতালেহতি বৃহস্পতিবার অজ্ঞাত সূত্রের বরাত দিয়ে এই তথ্য জানিয়েছে।

অবশ্য রুশ গ্যাস বন্ধের এই সতর্কবার্তা ঠিক কোন জায়গা থেকে এসেছে সেটি উল্লেখ করেনি ফিনিশ এই পত্রিকাটি। এছাড়া বার্তাসংস্থা রয়টার্সও ওই পত্রিকার তথ্য যাচাই করতে সক্ষম হয়নি।

ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট সাউলি নিনিস্তো এবং প্রধানমন্ত্রী সানা মারিন বৃহস্পতিবার বলেছেন, ফিনল্যান্ড ‘আর বিলম্ব না করে’ পশ্চিমা প্রতিরক্ষা জোট ন্যাটোতে যোগদানের জন্য আবেদন করবে। দেশটির এই সিদ্ধান্তে রাশিয়া বেশ কঠোর জবাব দেবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।

অবশ্য ফিনল্যান্ডে ব্যবহৃত গাসের বেশিরভাগই আসে রাশিয়া থেকে। কিন্তু ওই গ্যাস দেশটির বার্ষিক জ্বালানি খরচের প্রায় ৫ শতাংশ। তবে বেশিরভাগ গ্যাস সরবরাহ হারানোর মানে হচ্ছে নেস্ট এবং মেটসার মতো শিল্প জায়ান্ট এবং বনায়ন, রাসায়নিক ও খাদ্য শিল্পের অন্যান্য সংস্থাগুলোকে বিকল্প জ্বালানির উৎস খুঁজে বের করতে হবে বা সেটি না হলে বিদ্যমান পরিস্থিতির সঙ্গে তাদের উৎপাদনকে মানিয়ে নিতে হবে।

গত ৫ মে ফিনল্যান্ডের সরকার জানায়, রুশ মুদ্রা রুবলে জ্বালানির মূল্য পরিশোধের বিষয়ে মস্কোর দাবি মেনে না নেওয়ার প্রতিক্রিয়া হিসেবে রাশিয়া গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিতে পারে এবং এই সম্ভাবনার বিষয়ে তারা প্রস্তুত রয়েছে।

রাশিয়ার সাথে সরাসরি পাইপলাইন সংযোগ-সহ অন্যান্য ইউরোপীয় দেশগুলোর তুলনায় রাশিয়ার গ্যাসের ওপর ফিনল্যান্ড ও বাল্টিক রাষ্ট্রগুলো বেশি নির্ভরশীল। ইউরোপীয় গ্যাস অপারেটর নেটওয়ার্ক এন্তসগ (ENTSOG) গত এপ্রিল মাসে জানিয়েছিল, যদি সত্যিই রুশ গ্যাস সরবরাহ কমানো বা বন্ধ করে দেওয়া হয় তাহলে ফিনল্যান্ড, এস্তোনিয়া, লাটভিয়া এবং লিথুয়ানিয়াকে তাদের চাহিদা কমাতে হতে পারে।

বৃহস্পতিবার ফিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী এবং প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন, ফিনল্যান্ড দ্রুত ন্যাটোয় যোগ দিতে চায়, তারা আর ‘বিলম্ব’ করতে চায় না। ফিনল্যান্ডের পার্লামেন্টও এবিষয়ে তাদের সবুজ সংকেত দিয়েছে। আগামী সপ্তাহে এবিষয়ে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব পাস হয়ে যাওয়ার কথা রয়েছে।

এছাড়া ফিনল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী আলেকজান্ডার স্টাব জানিয়েছেন, ফিনল্যান্ডের মানুষ ন্যাটোয় যোগ দেওয়ার বিষয়ে খুবই উদগ্রীব। তিনি দীর্ঘদিন ধরেই ফিনল্যান্ডের ন্যাটোয় যোগ দেওয়ার পক্ষে।

উল্লেখ্য, রাশিয়ার সঙ্গে প্রায় ১ হাজার ৩০০ কিলোমিটারের দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে ফিনল্যান্ডের। ফলে ফিনল্যান্ড যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটোয় যোগ দিলে রাশিয়া তা মোটেই সহজভাবে নেবে না।

এছাড়া এবিষয়ে মস্কো ইতোমধ্যেই বেশ কিছু হুমকি দিয়ে রেখেছে। ফিনল্যান্ড ন্যাটোয় যোগ দিলে বাল্টিক অঞ্চলে পরমাণু অস্ত্র মজুত করা হবে বলেও হুমকি দিয়েছে রাশিয়া।

এ বিষয়ে আলেকজান্ডার স্টাব বলেছেন, এটি একটি ভুয়া খবর। রাশিয়া আগেই কালিনিনগ্রাদে পারমাণবিক মিসাইল মজুত করে রেখেছে। ফলে নতুন করে তাদের হুমকির কোনো অর্থ নেই।

টিএম