তীব্র তাপপ্রবাহে পুড়ছে উত্তর-পশ্চিম ভারত ও পাকিস্তান। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এপ্রিল ও মে মাসে বয়ে যাওয়া রেকর্ড পরিমাণ এই তাপপ্রবাহ আগের চেয়ে প্রায় শতগুণ বেশি।

এছাড়া চলতি শতাব্দীর শেষের দিকে এই ধরনের তাপপ্রবাহ আরও ঘন ঘন হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দিয়েছে জলবায়ু পরিবর্তন। যুক্তরাজ্যের আবহাওয়া অফিসের এক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে বলে পৃথক প্রতিবেদনে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম বিবিসি ও ব্লুমবার্গ।

বিবিসি জানিয়েছে, বুধবার (১৮ মে) প্রকাশিত যুক্তরাজ্যের আবহাওয়া অফিসের ওই বিশ্লেষণাত্মক গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, ২০১০ সালে ভারতে ও পাকিস্তানে তাপমাত্রা রেকর্ড অতিক্রম করে। কিন্তু এই অঞ্চলে এমন তাপমাত্রা প্রতি তিন বছরে একবার দেখা যেতে পারে। আর এর মূলে রয়েছে জলবায়ু পরিবর্তন।

ব্রিটিশ আবহাওয়া অফিসের গবেষকরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তন ছাড়া এমন তীব্র তাপপ্রবাহ সাধারণত প্রতি ৩১২ বছরে একবার ঘটে থাকে। এছাড়া আগামী দিনগুলোতে উত্তর-পশ্চিম ভারতে তাপমাত্রা নতুন উচ্চতায় পৌঁছতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়ার পূর্বাভাস দানকারীরা।

গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তন বিবেচনায় নিলে বর্তমান জলবায়ুতে প্রতি ৩.১ বছরে একবার এ ধরনের তাপপ্রবাহ দেখা দেবে। এছাড়া চলতি শতাব্দীর শেষ নাগাদ প্রতি ১.১৫ বছরে একবার এই তাপপ্রবাহ দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করা বিজ্ঞানী নিকোস ক্রিস্টিডিস এক বিবৃতিতে বলেন, ‘গত এপ্রিল ও মে মাসে এই অঞ্চলের প্রাক-মৌসুমি জলবায়ুতে সবসময় তাপপ্রবাহ একটি বৈশিষ্ট্য হিসেবেই ছিল। যাইহোক, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই যে এই তীব্র তাপপ্রবাহের সৃষ্টি হচ্ছে সেটি আমাদের গবেষণায় তুলে ধরা হয়েছে।’

সাম্প্রতিক দিনগুলোতে ভারতের বেশ কিছু অংশে তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস (১২২ ফারেনহাইট) ছাড়িয়ে গেছে। একইসঙ্গে পাকিস্তানের কিছু অংশে গত রোববার তাপমাত্রা পৌঁছে যায় ৫১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। তীব্র এই তাপপ্রবাহ আপাতত কিছুটা কমলেও ভারত ও পাকিস্তানের বেশ কিছু অংশে ফের তা ৫০ ডিগ্রী সেলসিয়াসে পৌঁছাতে পারে।

বিবিসি জানিয়েছে, ১৯০০ সালের পর থেকে ভারতীয় উপমহাদেশে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হচ্ছে। বিশেষ করে এপ্রিল ও মে মাসে এই তাপমাত্রা উঠে যায় সর্বোচ্চ পর্যায়ে। ২০১০ সালে ভারতের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল ও পাকিস্তানে এপ্রিল ও মে মাসে ইতিহাসের সর্বোচ্চ তাপপ্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছিল। আর নতুন এই গবেষণাটি ২০১০ সালের তাপপ্রবাহের ওপর ভিত্তি করে প্রস্তুত করা হয়েছে।

অবশ্য উত্তর-পশ্চিম ভারত-সহ আশপাশে অঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি বেশ স্পষ্ট। জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নয়াদিল্লি-সহ উত্তর ভারতের বিভিন্ন অংশজুড়ে প্রচণ্ড গরম বাতাস বয়ে যাওয়ার পাশাপাশি তাপমাত্রা ৪৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করলেও উত্তর-পূর্ব ভারতে দেখা দিয়েছে আকস্মিক বন্যা। আর আবহাওয়ার এই পরিস্থিতিতেই জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি অনেকটা স্পষ্ট।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, দেশটির রাজধানী দিল্লিতে ১৯৫১ সালের পর চলতি বছরের দ্বিতীয় উষ্ণতম এপ্রিল রেকর্ড করেছে, যার মাসিক গড় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। উত্তরাখণ্ড, হিমাচল প্রদেশ, জম্মু ও কাশ্মির এবং লাদাখের পার্বত্য অঞ্চলসহ উত্তর ভারতের অন্যান্য রাজ্যগুলোতেও এই মৌসুমে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি রেকর্ড করা হয়েছে।

অন্যদিকে উত্তর ভারত যখন উচ্চ তাপমাত্রার সঙ্গে লড়াই করছে তখন দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য কেরালা এবং লাক্ষাদ্বীপ দ্বীপপুঞ্জের কিছু অংশে গত রোববার ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে। এছাড়া কেরালার পাঁচটি জেলাজুড়ে রেড অ্যালার্ট জারি করেছে আবহাওয়া অফিস।

একইসঙ্গে উত্তর-পূর্ব ভারতের আসামে আকস্মিক বন্যা এবং বেশ কয়েকটি স্থানে ব্যাপক ভূমিধসের ফলে রেল ও সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। এই বন্যায় এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ৯ জন এবং ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা পৌঁছেছে প্রায় পৌনে ৭ লাখে।

টিএম