রাশিয়ার ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী ইউরি বরিসভ গত বুধবার দেশের একটি টেলিভিশন চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে দাবি করেছন, ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধে ক্রেমলিন লেজার অস্ত্রের মতো অত্যাধুনিক অস্ত্র ব্যবহার করছে। যার নাম জাদিরা।

রাশিয়ার দাবি, ওই অস্ত্রের সাহায্যে তারা ইউক্রেনের ড্রোন ধ্বংস করেছে। উপগ্রহের ক্যামেরা ঢেকে দিয়ে লক্ষ্যবস্তু ধ্বংস করতে পারে রুশ এই আধুনিক অস্ত্র।

রুশ ডেপুটি প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য, জাদিরা তাদের আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (আইসিবিএম) সিস্টেমের একটি অংশ। এর ভেতরে একটি লেজার প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে, যাকে বলা হয় পেরেসভেট। বরিসভের দাবি, এই অস্ত্রের সাহায্যে দেড় হাজার কিলোমিটার দূরের স্যাটেলাইটের ছবি ব্লক করে দেওয়া যায়।

লেজার অস্ত্রের অর্থ কী
অস্ত্র বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, লেজার অস্ত্রের সাহায্যে খুব সহজে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানা যায়। খুব জোরালো লেজার বিমের সাহায্যে লক্ষ্যবস্তুতে ফুটো তৈরি করে দেওয়া যায়। তবে আধুনিক লেজার অস্ত্রের সাহায্যে আরও বড় আক্রমণ সম্ভব। এমনকি লক্ষ্যবস্তুকে সম্পূর্ণ পুড়িয়ে দেওয়া যেতে পারে।

আরও সুবিধা হলো, লেজার অস্ত্র তৈরির জন্য কোনোরকম গোলাবারুদের প্রয়োজন হয় না। অত্যন্ত কম খরচে এই অস্ত্র তৈরি সম্ভব। মার্কিন বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, একটি লেজার অস্ত্র তৈরি করতে এক ডলারেরও কম অর্থ খরচ হয়।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশ লেজার অস্ত্র তৈরির প্রকল্প শুরু করেছে। কিছুদিন আগে ইসরায়েল দাবি করেছিল, তারা পৃথিবীর প্রথম লেজার অস্ত্র তৈরি করতে পেরেছে। যুক্তরাষ্ট্রও লেজার অস্ত্র তৈরির দাবি করেছে। তবে রাশিয়া এমন অস্ত্র তৈরি করেছে কি না, তা নিয়ে কারো কাছে কোনো খবর ছিল না। রাশিয়া এর আগে এমন দাবিও করেনি।

সত্যি কি রাশিয়া ব্যবহার করছে
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগনের অস্ত্র বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, ইউক্রেনে রাশিয়া যে ধরনের হামলা চালিয়েছে, তাতে এখনও পর্যন্ত লেজার অস্ত্র ব্যবহারের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। ফলে রাশিয়ার দাবি মিথ্যা বলেই মনে হচ্ছে।

রাশিয়া অবশ্য জানিয়েছে, তারা ইউক্রেনের ড্রোন নষ্ট করেছে ওই অস্ত্রের সাহায্যে। বস্তুত, ইউক্রেনের ড্রোন নিয়ে চিন্তায় রাশিয়া। ন্যাটো ক্রমাগত ইউক্রেনকে ড্রোন সরবরাহ করছে। সেই ড্রোনের সাহায্যে রাশিয়ার সেনার অবস্থান যেমন দেখে নিচ্ছে ইউক্রেন তেমন ড্রোনের সাহায্যে আক্রমণও চালাচ্ছে।

এছাড়া বেশ কিছু জায়গায় ড্রোন হামলার জন্য রাশিয়ার সেনাকে পিছু হঠতে হয়েছে বলেও দাবি করেছে পেন্টাগন। সে কারণেই ড্রোন ধ্বংসের নতুন তত্ত্ব ক্রেমলিন ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে বলে মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর দাবি করেছে।

অবশ্য ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানিয়েছেন, একসময় নাৎসিরা এভাবে প্রোপাগান্ডা চালাতো। ভুয়া অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে তারা বিপক্ষের মনোভাব ভাঙার চেষ্টা করতো। রাশিয়া ঠিক সে কাজটিই করছে এখন।

সূত্র : ডয়চে ভেলে

টিএম