ইউক্রেনে যুদ্ধের জেরে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা রাশিয়ার বিরুদ্ধে একের পর এক যেসব নিষেধাজ্ঞা জারি করে গেছে, তার পরিণতিতেই বিশ্বজুড়ে খাদ্য সংকট শুরু হয়েছে বলে মনে করে রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের কার্যালয় ক্রেমলিন।

সোমবার মস্কোতে এক সংবাদ সম্মেলনে ক্রেমলিনের মুখপাত্র ও প্রেস সেক্রেটারি দিমিত্রি পেসকভ বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সরকার সম্প্রতি বলেছে,বর্তমানে বিশ্বজুড়ে শুরু হওয়া খাদ্য সংকটের চূড়ান্ত পরিণতি হলো বৈশ্বিক দুর্ভিক্ষ এবং মার্কিন সরকারের এই বক্তব্যের সঙ্গে আমাদের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন একমত।’

‘রাশিয়া বরাবরই বিশ্বের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য শস্য রপ্তানিকারক দেশগুলোর মধ্যে একটি। কিন্তু খাদ্যাভাব এবং খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির যে সংকট এখন বিশ্বজুড়ে চলছে, তার মূল কারণ কিন্তু আমরা নই। পশ্চিমা বিশ্ব যে এই সংকটের জন্য রাশিয়াকে দায়ী করছে— তা সম্পূর্ণ ভুল।’

‘বরং এজন্য মূলত দায়ী পশ্চিমা বিশ্বের ভুল নীতি ও তাদের একের পর এক নিষেধাজ্ঞা। রাশিয়ায়াকে বিশ্ব ব্যবস্থা থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার জন্য যেসব নিষেধাজ্ঞা পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলো দিয়েছে, তারই পরিণতি এখন ভুগতে হচ্ছে বিশ্ববাসীকে।’

এতদিন আন্তর্জাতিক বাজারে মোট গমের চাহিদার ত্রিশ শতাংশেরও বেশি যোগান আসত রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে; এবং কেবল গম নয়— যব, সূর্যমুখী তেল ও সরিষা তেলেরও বড় যোগান আসত এ দু’টি দেশ থেকে।

কিন্তু গত ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে রুশ সামরিক বাহিনী ইউক্রেনে অভিযান শুরুর পর থেকে রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে আসা শস্য ও ভোজ্য তেলের সরবরাহে ছেদ পড়ে। ফলে বিশ্ববাজারে হু হু করে বাড়তে থাকে খাদ্যশস্য, ভোজ্য তেল, দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য, মাংসসহ সব ধরনের খাদ্যপণ্যের দাম। জাতিসংঘের বৈশ্বিক মূল্যসূচকে দেখা গেছে, আন্তর্জাতিক বাজারে খাদ্য পণ্যের দাম গত আট বছরের রেকর্ডকে ছাড়িয়ে গেছে।

জাতিসংঘের কর্মকর্তারা বলেছেন, বিশ্বের অন্তত ৩৬টি দেশ তাদের চাহিদার অর্ধেকেরও বেশি গমের জন্য রাশিয়া ও ইউক্রেনের ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল। এসব দেশের মধ্যে লেবানন, সিরিয়া, ইয়েমেন, সোমালিয়া, ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক কঙ্গোর মত দরিদ্র দেশও রয়েছে।

রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে গমের সরবরাহ আসা কমে যাওয়া এবং আন্তর্জাতিক বাজারে শস্যের দাম বাড়ায় বর্তমানে চরম বিপাকে পড়েছে এসব দেশ।

সম্প্রতি জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্টোনিও গুতেরেস বলেছেন, ইউক্রেনের গুদামগুলোতে প্রায় আড়াই কোটি টন গম আটকে আছে। এসব গম যেন দ্রুত বিশ্ববাজারে পৌঁছাতে পারে, সেজন্য রাশিয়ার সহযোগিতা কামনা করেছেন তিনি।

তবে এ বিষয়ে ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে বলা হয়, রুশ সেনারা ইউক্রেনে গমের চালান আটকে রাখেনি। বরং ইউক্রেনের সেনাবাহিনী দেশটির সরকারের নির্দেশে বন্দরের চারপাশের সমুদ্রসীমায় মাইন পেতে রেখেছে। ফলে, ইউক্রেনের বিভিন্ন সমুদ্র বন্দরে একদিকে যেমন বিদেশি জাহাজ ভিড়তে পারছে না, তেমনি বন্দর থেকে জাহাজ ছেড়েও যেতে পারছে না।

ক্রেমলিন কর্মকর্তারা আরও বলেছেন, বন্দরগুলো বন্ধ করে রেলের মাধ্যমে পশ্চিমা দেশগুলোতে গম পাঠাচ্ছে ইউক্রেন, এবং তাতেও রুশ সেনারা কোনো বাধা দিচ্ছে না।

সূত্র: রয়টার্স

এসএমডব্লিউ