আশির দশক থেকে আত্মগোপনে রয়েছেন আন্ডারওয়ার্ল্ড ডন দাউদ ইব্রাহিম। বরাবরই ভারতের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, তিনি পাকিস্তানে রয়েছেন। কিন্তু এ দাবি সব সময় উড়িয়ে দিয়েছে ইসলামাবাদ। তবে দাউদ যে করাচিতেই রয়েছেন, এনফোর্সমন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি) জিজ্ঞাসাবাদের মুখে তা স্বীকার করল দাউদের ভাগ্নে হাসিনা পার্কারের ছেলে আলিশাহ পার্কার। 

সূত্রের খবর, আলিশাহকে ঘুঁটি করেই এবার মহারাষ্ট্রের মন্ত্রী নবাব মালিককে বেআইনি আর্থিক লেনদেনের মামলায় কোণঠাসা করতে চাইছে ইডি। কারণ ডি-কোম্পানির সঙ্গে মালিকের যে দীর্ঘদিনের সম্পর্ক, ইডিকে সে কথাও দাউদের ভাগ্নে জানিয়েছে বলে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সূত্রের দাবি।

জানা গেছে, ইডির কাছে দেওয়া নিজের বয়ানে মুম্বাইয়ের বাসিন্দা আলিশাহ বলেছে, তার মা হাসিনা পশ্চিম কুরলার বিতর্কিত সেই গোয়াওয়ালা কম্পাউন্ড বিক্রি করেছিলেন নবাব মালিককেই। এ তথ্য নতুন কিছু নয়। তবে, আলিশাহের দেওয়া এ জবানবন্দির ওপর ভিত্তি করেই নবাবের বিরুদ্ধে আর্থিক তছরূপ ও সন্ত্রাসবাদে আর্থিক মদত দেওয়ার মামলায় নতুন করে প্রমাণ সংগ্রহে নেমেছে ইডি। ওই জমির কেনাবেচা নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্যই প্রাথমিকভাবে মন্ত্রীকে ডেকে পাঠায় পুলিশ। কিন্তু, আগাগোড়া তদন্তে অসহযোগিতা করেন এনসিপি এই নেতা। ফেব্রুয়ারিতে মালিককে ইডি গ্রেপ্তার করে। 

জানা গেছে, হাসিনা পার্কারের ছেলেকে সোমবার জিজ্ঞাসাবাদ করেই দাউদ ও নবাব মালিক সম্পর্কে নতুন সব তথ্য হাতে পেয়েছেন ইডির মুম্বাই অফিসের কর্মকর্তারা। যার ওপর ভিত্তি করে বিশেষ এমপি-এমএলএ আদালতে মালিকের বিরুদ্ধে একটি প্রসিকিউশন চার্জশিটও দাখিল করেছে ইডি।

কিন্তু ১৯৯৩ সালে মুম্বইয়ের ধারাবাহিক বিস্ফোরণের মাস্টারমাইন্ড দাউদ সম্পর্কে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে ঠিক কী জানিয়েছে ডনের ভাগ্নে? সূত্রের খবর, মামা করাচিতে আছে বলে জানালেও আলিশাহের দাবি- তিনি নিজে বা তার পরিবার পারতপক্ষে দাউদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ রাখে না। তবে দাউদের স্ত্রী মেহজাবিন নাকি পারিবারিক কোনো অনুষ্ঠান উপলক্ষে আলিশাহের স্ত্রী ও বোনেদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল।

দাউদ যে পাকিস্তানে রয়েছে, ভারতীয় গোয়েন্দারা সে ব্যাপারে মোটামুটি নিশ্চিত। পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের আমলেও কেন দাউদকে ওই দেশে জামাই আদরে রাখা হচ্ছে, সেই প্রশ্নও বহু বার তুলেছে দিল্লি। এবার দাউদের ভাগ্নেই করাচিতে ডনের ঘাঁটি গেড়ে থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করায় ভারতের পক্ষে আন্তর্জাতিক মঞ্চে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সুর চড়ানো আরও সহজ হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

শুধু দাউদ নয়, ডনের ডান হাত বলে পরিচিত ছোটা শাকিলও যে অন্তত ২০০৬ সাল পর্যন্ত করাচিতেই ছিল, ইডির জিজ্ঞাসাবাদের মুখে তা স্বীকার করেছে ছোটা শাকিলের আত্মীয় সেলিম ফ্রুট ওরফে সেলিম কুরেশিও। তার দাবি, করাচির ক্লিফ্টনে ডিফেন্স এরিয়ার ফেজ় ফাইভে ছোটা শাকিলের ওই বাড়িতে ২০০০ থেকে ২০০৬ সালের মধ্যে অন্তত চার বার গিয়েছে সে। তারপর থেকে আর নাকি দাউদ কিংবা ছোটা শাকিলের সঙ্গে সেলিম কুরেশির কোনো যোগাযোগ নেই।

দাউদ সম্পর্কে আলিশাহের স্বীকারোক্তি সামনে আসার পর এ ব্যাপারে মুখ খুলেছেন মহারাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দিলীপ ওয়ালসে পাতিলও। তার কথায়, কেন্দ্রীয় সরকারকে এবার পদক্ষেপ নিতেই হবে। এখন পর্যন্ত ডনের লোকেশন নির্দিষ্টভাবে বোঝা যাচ্ছে না। তবে চাইলে দিল্লির পক্ষে সেটাও বের করা খুব একটা কঠিন বলে আমি মনে করি না।

বিশেষজ্ঞদের একাংশ অবশ্য আলিশাহের বয়ান থেকে উঠে আসা নবাব মালিকের ডি-কোম্পানি যোগের বিষয়টি এ মুহূর্তে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন। ইডি যে প্রসিকিউশন চার্জশিট দাখিল করেছে, তাতে বলা হয়েছে যে, ডি-কোম্পানির সঙ্গে মালিকের সরাসরি যোগাযোগ ছিল। ১৯৯৬ সালে কুরলা পশ্চিমে গোয়াওয়ালা বিল্ডিং কম্পাউন্ড দখল করার ষড়যন্ত্রের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে ইডির চার্জশিটে। ইডির দাবি, মালিক সব কিছু জেনেশুনেই গোয়াওয়ালা কম্পাউন্ড দখলের জন্য আর্থিক তছরুপ এবং আরও নানা রকম অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন। এ সংক্রান্ত সব প্রমাণও তাদের কাছে আছে বলে দাবি কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের।

সূত্রের খবর, ইডিকে দেওয়া বয়ানে মুম্বইয়ের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী সেলিম পাটিলের কথাও উল্লেখ করেছে আলিশাহ। সেলিম যে তার মা হানিসা পার্কারের অন্যতম প্রধান সহযোগী ছিল, আলিশাহ সে কথা স্বীকার করেছে। এই সেলিমের সঙ্গেই যোগসাজস করে হাসিনা ওই গোয়াওয়ালা বিল্ডিংয়ে একটি অফিস খুলে কম্পাউন্ডের অনেকটাই দখল করে রেখেছিলেন, এমনটাই অভিযোগ। পরে সেটাই হাত ঘুরে মহারাষ্ট্রের মন্ত্রী নবাব মালিকের কাছে আসে বলে তদন্তে জানা গেছে।

ওএফ