ছবি: এ নিউজ

ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা রাশিয়ার ওপর যেসব নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে, সেসবের মধ্যে কিছু নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করলেই থেকে গম, ভোজ্য তেল, তেলবীজ ও অন্যান্য খাদ্যপণ্যবাহী জাহাজগুলোকে ইউক্রেনের বন্দর ছেড়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করবে রাশিয়া।

বুধবার রাশিয়ার বার্তাসংস্থা ইন্টারফ্যাক্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ তথ্য জানিয়েছেন রাশিয়ার উপ পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রেই রুদেনকো।

তিনি বলেছেন, বন্দরের জাহাজ চলাচল পথে মাইন পেতে রেখেছে ইউক্রেন। যদি যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা রাশিয়ার ওপর জারি করা অর্থনৈতিক ও পণ্য রপ্তানি বিষয়ক নিষেধাজ্ঞাগুলো প্রত্যাহার করে নেয়, সেক্ষেত্রে রাশিয়ার মাইন অপসারণ করে বন্দরগুলো জাহাজ চলাচলের উপযোগী করা হবে।

রুদেনকো বলেন, ‘ইউক্রেনের বন্দরগুলোর জাহাজ চলাচল পথে মাইন পেতে রেখেছে দেশটির সেনাবাহিনী। এ কারণে একদিকে খাদ্যপণ্যবাহী জাহাজগুলো বন্দর ত্যাগ করতে পারছে না, অন্যদিকে নতুন জাহাজও বন্দরে ভিড়তে পারছে না।’

‘আমরা বরাবরই বলে আসছি, বর্তমানে বিশ্বজুড়ে যে খাদ্য সংকট শুরু হয়েছে, তার সমাধানে আমাদের সবাইকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। ইউক্রেনের বন্দরগুলোকে মাইনমুক্ত করতে রাশিয়া সহযোগিতা করতে পারে, তবে এক্ষেত্রে আমাদের শর্ত হলো— অর্থনীতি ও পণ্য রপ্তানি বিষয়ক যেসব নিষেধাজ্ঞা রাশিয়ার ওপর দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা, সেসব প্রত্যাহার করে নিতে হবে।’

পৃথক এক সাক্ষাৎকারে রাশিয়ার সংবাদমাধ্যম রিয়া নভোস্তিকে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ে এ বিষয়টি নিয়ে রুশ সরকারি কর্মকর্তাদের আলোচনা চলছে।

পশ্চিমের উদ্দেশে সতর্কবার্তা দিয়ে সাক্ষাৎকারে আন্দ্রেই রুদেনকো বলেন, ইউক্রেনের পণ্যবাহী জাহাজাগুলোকে নিরাপত্তা দেওয়ার অজুহাতে যদি পশ্চিমা দেশের কোনো জাহাজ কৃষ্ণসাগরে প্রবেশ করে, সেক্ষেত্রে পরিণতি গুরুতর হবে।

তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন মঙ্গলবার বলেছেন, আপাতত কৃষ্ণসাগরে যুদ্ধজাহাজ পাঠানোর কোনো পরিকল্পনা যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের নেই।

কৃষ্ণসাগরের তীরবর্তী ওডেসা ইউক্রেনের প্রধান সমুদ্র বন্দর। এছাড়াও আরও দু’টি সমুদ্রবন্দর রয়েছে দেশটির— খেরসন ও মারিউপোল।

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রুশ অভিযান শুরুর পর থেকে বন্ধ ইউক্রেনের সব সমুদ্রবন্দর। বন্দরগুলো যেন রুশ সামরিক বাহিনী ব্যবহার করতে না পারে, সেজন্য বন্দরের জাহাজ চলাচল পথে মাইন পেতে রেখেছে ইউক্রেনের সেনাবাহিনী।

তবে এই কারণে বিপাকে পড়েছে পণ্যবাহী জাহাজগুলো। পথে মাইন থাকার কারণে একদিকে যেমন ইউক্রেনের পণ্যবাহী জাহাজ বন্দর ছেড়ে যেতে পারছে না, অন্যদিকে বিদেশি জাহাজও প্রবেশ করতে পারছে না।

এদিকে, বন্দরগুলো বন্ধ থাকায় ইউক্রেনের খাদ্যগুদামগুলোতে আটকে আছে প্রায় আড়াই কোটি টন গম।

রাশিয়া ও ইউক্রেন বিশ্বের সবচেয়ে বড় খাদ্যপণ্য যোগানদাতা দেশ। আন্তর্জাতিক বাজারে ৩০ শতাংশেরও বেশি গমের যোগান আসে রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে। গমের পাশাপাশি ভুট্টা ও সূর্যমুখী তেল রপ্তানিতেও বিশ্বে শীর্ষস্থানে রয়েছে ইউক্রেন।

কিন্তু গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর অভিযান শুরুর পর থেকে ইউক্রেনের খাদ্যশস্য ও ভোজ্য তেলের রপ্তানিতে ধস নেমেছে। ফলে বিশ্ববাজারে হু হু করে বাড়ছে খাদ্যপণ্যের দাম।

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস সম্প্রতি এক আহ্বানে বলেছেন, যদি অবিলম্বে ইউক্রেনে আটকে থাকা খাদ্যশস্য ও ভোজ্য তেল আন্তর্জাতিক বাজারে আনার ব্যবস্থা না করা হয়, তাহলে খাদ্যাভাব প্রকট হয়ে চলতি বছরই দুর্ভিক্ষ দেখা দেবে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে।

সূত্র: রয়টার্স

এসএমডব্লিউ