পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ

পাকিস্তানে একলাফে প্রতি লিটারে পেট্রোল-ডিজেল-কেরোসিনের দাম বেড়েছে ৩০ রুপি করে। ঘোষণা দেওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই নতুন এই মূল্য কার্যকরও করেছে দেশটি। এতে করে চরম সমালোচনার মুখে পড়েছে প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানের বর্তমান সরকার।

তবে সব সমালোচনা পাশ কাটিয়ে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির জন্য নিজের পূর্বসুরী ইমরান খানের সরকারকেই দোষারোপ করেছেন শেহবাজ। তার দাবি, ‘‌দেশকে দেউলিয়া হওয়ার হাত থেকে বাঁচাতেই জ্বালানির দাম বাড়াতে হয়েছে।’

শুক্রবার (২৭ মে) জাতির উদ্দেশে দেওয়া প্রথম ভাষণে এমন দাবিই করেন পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ। শনিবার (২৮ মে) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে দেশটির সংবাদমাধ্যম দ্য ডন।‌

গত বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী মিফতাহ ইসমাইল ঘোষণা করেন, কেন্দ্রীয় সরকার পেট্রোলিয়াম পণ্যের দাম প্রতি লিটারে ৩০ রুপি করে বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রাজধানী ইসলামাবাদে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই ঘোষণা দেন।

মূল্যবৃদ্ধির পর পাকিস্তানে বর্তমানে পেট্রোলের দাম দাঁড়িয়েছে প্রতি লিটারে ১৭৯.৮৬ রুপি, ডিজেল ১৭৪.১৫ রুপি, কেরোসিন তেলের দাম ১৫৫.৫৬ রুপি এবং লাইট ডিজেলের দাম ১৪৮.৩১ রুপিতে। ইসমাইলের দাবি, পেট্রোলিয়াম পণ্যের দাম বাড়ানো ছাড়া সরকারের কাছে আর কোনো উপায় ছিল না।

এমনকি মূল্যবৃদ্ধির পরও প্রতি লিটার ডিজেলে সরকার ৫৬ রুপি ক্ষতি বহন করছে বলেও সেসময় জানান তিনি। শুক্রবার মধ্যরাত থেকেই বর্ধিত এই দাম কার্যকর করা হয়।

এই পরিস্থিতিতে গত মাসে ক্ষমতা গ্রহণের পর শুক্রবারই প্রথম জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন শেহবাজ শরীফ। সেখানে তিনি বলেন, পাকিস্তানকে দেউলিয়া হওয়ার হাত থেকে বাঁচাতে জ্বালানির দাম বাড়ানোর পদক্ষেপ নেওয়াটা জরুরি ছিল।

শেহবাজ বলেন, পেট্রোলিয়াম পণ্যের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়াটা কঠিন ছিল। তিনি দাবি করেন, ‘আমরা ভারাক্রান্ত হৃদয়ে পেট্রোলিয়ামের দাম বাড়িয়েছি; কঠিন অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। বিশ্ববাজারে পেট্রোলিয়ামের দাম অবিশ্বাস্যভাবে বৃদ্ধির কারণেই এটি (দেশে মূল্যবৃদ্ধি) হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘(মূল্য কম রাখার জন্য) আগের সরকার ভর্তুকি ঘোষণা করেছিল। কিন্তু এটি কোষাগার দ্বারা সমর্থন করা যায় না। আমরা আমাদের স্বার্থে দেশকে প্রাধান্য দিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

একদিন আগেই পাকিস্তানি মুদ্রায় লিটার প্রতি পেট্রোল ও ডিজেলের মূল্য ৩০ টাকা বাড়ানোয় শেহবাজ শরীফের সরকারের সমালোচনা করেছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। তার ভাষায়, ‘‌বিদেশি সরকারের বশ্যতা স্বীকার করার মূল্য পরিশোধ করতে হচ্ছে শেহবাজ সরকারকে।’‌

এছাড়া একদিনের এই মূল্যবৃদ্ধি পাকিস্তানের সর্বকালীন রেকর্ড বলেও দাবি করেছিলেন ইমরান। একইসঙ্গে ভারতের প্রশংসা করে তিনি জানান, দিল্লি আমেরিকার ‘কৌশলগত মিত্র দেশ’ হলেও ভারত কিন্তু রাশিয়ার থেকে সস্তায় তেল কিনে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির মোকাবিলা করতে পেরেছে।

ইমরান দাবি করেছেলেন, ‌আমাদের কাছে সাধারণ পাকিস্তানি নাগরিকদের স্বার্থই ছিল প্রধান।‌ এরপরই সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা করেন শেহবাজ।

এদিকে শুক্রবার দেওয়া জাতির উদ্দেশে প্রথম ভাষণে কাশ্মির প্রসঙ্গেও কথা বলেছেন পাকিস্তানের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী। ভাষণে তিনি ভারত-শাসিত জম্মু–কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়ারও দাবি জানিয়েছেন।

শেহবাজের ভাষায়, ‘‌দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি বজায় রাখার দায়িত্ব ভারতেরও। ২০১৯ সালে কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করার যে একতরফা ও বেআইনি সিদ্ধান্ত ভারত সরকার নিয়েছিল তা বাতিল করতে হবে। আর তাহলেই (উভয় দেশের) আলোচনার মাধ্যমে কাশ্মির সমস্যার সমাধান হবে।’

টিএম