গত তিনদিন ধরে বিদ্যুৎ নেই ২৭ লাখ বাড়িতে। পাইপ জমে যাওয়া ও সরবরাহব্যবস্থা অচল হয়ে পড়ায় পানি আসছে অনিয়মিত। তাপমাত্রা ওঠানামা করছে মাইনাস ১৮ থেকে ২৫ ডিগ্রির মধ্যে। তীব্র শীতের মধ্যে বিদ্যুৎ-পানির অভাবে ভয়াবহ মানবিক সংকট পার করছেন যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস রাজ্যের অধিবাসীরা।

খুব দ্রুত এই দূরবস্থার অবসান হচ্ছে না বলে জানিয়েছে টেক্সাস প্রশাসন। বুধবার রাজ্যটির প্রশাসনিক কর্মকর্তারা সেখানকার অধিবাসীদের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, সপ্তাহের শেষ অর্থাৎ আগামী রোববারের আগ পর্যন্ত পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা নেই।

আন্তর্জাতিক বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, স্থানীয় সময় গত রোববার থেকে শুরু হওয়া তুষারঝড় এবং এর প্রভাবে তাপমাত্রা নেমে যাওয়ার পর থেকে বর্তমানে টেক্সাসের ২৭ লাখ বাড়ি বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় রয়েছে; প্রাকৃতিক গ্যাসের কূপ, পাইপলাইন ও উয়িন্ড টারবাইন ঠাণ্ডায় জমে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় রাজ্যের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে ৪০ শতাংশ।

বিদ্যুৎ না থাকায় জল শোধনাগারগুলো অচল হয়ে পড়েছে, ফলে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। এ পরিস্থিতিতে টেক্সাসের একশটিরও বেশি কাউন্টি বা জেলার বাসিন্দাদের খাবার পানি ফুটিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

রাজ্যের বৃহত্তম শহর হিউস্টন ও অন্যান্য শহরের অনেক হাসপাতালে কোনো পানি নেই বলে খবর এসেছে ইতোমধ্যে। প্রবল শৈত্য প্রবাহে এ পর্যন্ত অন্তত ২১ জনের মৃত্যু হয়েছে, তবে প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের ধারণা মৃত্যুর সংখ্যা আরো বেশি, অনেকের লাশ খুঁজে পাওয়া যায়নি বলে সঠিক সংখ্যা জানা যাচ্ছে না এখনও।   

তীব্র ঠান্ডার কারণে টেক্সাসের কিছু বাসিন্দার সামনে এখন দু’টি বিকল্প হাজির হয়েছে। একটি হলো, জমে যাওয়া বা ভেঙে যাওয়া পানির পাইপগুলোকে সঙ্গী করে বিদ্যুৎবিহীন বাড়িতে অবস্থান করা, অথবা স্থানীয় ত্রাণ কেন্দ্রগুলোতে আশ্রয় নেওয়া।

টেক্সাসের ওয়াকো কাউন্টি বা জেলার অধিবাসী লরা নয়েল (৪৫) জানান, নিজেদের গরম রাখার জন্য গত সোমবার থেকে দিনের অধিকাংশ সময় তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা গাড়িতে গাদাগাদি করে অবস্থান করছেন।

রয়টার্সকে এই নারী জানান, ‘চারদিকে শুধু বরফ আর বরফ। আমার জীবনে এত বরফ, এত শীত আমি দেখিনি। কেউ কি আমাকে দয়া করে বলবেন কবে এই দুর্যোগ কাটবে? সবাই চুপ করে আছে।’

৫৭ বছর বয়সী ট্রিলবি ল্যান্ড্রি একজন গৃহহীন মানুষ। এতদিন সড়কে ধারে তাঁবু খাটিয়ে থাকতেন। কিন্তু দুর্যোগ শুরু হওয়ার পর থেকে একটি আসবাবপত্রের শো রুমে আশ্রয় নেন তিনি, যেটি এখন আশ্রয়কেন্দ্রের পরিচিতি পেয়েছে।

আশ্রয়কেন্দ্রের অবস্থা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘এখানে সবাই বিষন্ন অবস্থায় আছে, চেয়ার কিংবা সোফাগুলোর ওপর ঘুমাচ্ছে এবং অপেক্ষা করছে কখন বাড়ি ফিরতে পারবে।’

হ্যারিস কাউন্টির শীর্ষ নির্বাচিত কর্মকর্তা বিচারক লিনা হিডালগো বলেন, “বহু দিক থেকেই এটি দুর্যোগের মধ্যে আরও অনেক দুর্যোগ। অপ্রত্যাশিত এই প্রভাবগুলো এড়ানো যাবে না।”

তবে টেক্সাসের গভর্নর গ্রেগ অ্যাবোট জানিয়েছেন, আগামী রোববারের আগেই রাজ্যের পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে তার প্রশাসন।

স্থানীয় সময় বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে টেক্সাসের গভর্নর বলেন, তিনি আশা করছেন বুধবার রাতের মধ্যেই দক্ষিণ টেক্সাসের দক্ষিণাঞ্চলের একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করতে পারবে, এর সঙ্গে কয়লাচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে উৎপাদন শুরু হলে টেক্সাসের অন্তত চার লাখ বাড়িতে সরবরাহ করার মতো পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে।

সূত্র: রয়টার্স

এসএমডব্লিউ