বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী ভারতীয় অংশে আটকে রয়েছে গমবোঝাই ৬ হাজার ট্রাক। গত ১৪ মে থেকে দেশটির পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বিভিন্ন স্থলবন্দরে এসব ট্রাক আটকে রয়েছে। দেশটির ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফরেন ট্রেড (ডিজিএফটি) থেকে রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট (আরসি) বা ছাড়পত্র না পাওয়ায় বাংলাদেশে ঢুকতে পারছে না গম বহনকারী এসব ট্রাক।

মঙ্গলবার (৭ জুন) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য ইকোনোমিক টাইমস। এতে বলা হয়, ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফরেন ট্রেড (ডিজিএফটি) গত ১৩ মে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে।

সেই প্রজ্ঞাপনে ভারত থেকে অবিলম্বে গম রপ্তানি নিষিদ্ধ করা হয়। মূলত ইউক্রেনে রাশিয়ার চলমান আগ্রাসন এবং স্থানীয় বাজারে মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের পরিপ্রেক্ষিতে এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল। কারণ এই যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী গম সরবরাহ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

অবশ্য ডিজিএফটি গম রপ্তানি বন্ধ ঘোষণা করলেও ভারতের সরকারি নির্দেশনায় জানানো হয়, গত ১৩ তারিখের আগে যেসব ঋণপত্র বা এলসি ইস্যু করা হয়েছে, সেগুলো যথাসময়ে রপ্তানি করা হবে। তবে এরপরও ১৩ মের আগে চালান সম্পন্ন হওয়া বা অর্থ পরিশোধ করা গম বাংলাদেশে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না।

ইকোনোমিক টাইমস বলছে, ১৩ তারিখের আগে যেসব ঋণপত্র বা এলসি ইস্যু করা হয়েছে সেগুলো সীমান্ত পার হতে বাধা নেই বলে জানানো হলেও এখন বলা হচ্ছে- রপ্তানির জন্য ডিজিএফটি’র ছাড়পত্র প্রয়োজন। আর এতেই সময় লাগছে কারণ রপ্তানিকারকরা যেন এলসি’র ব্যাক-ডেট না করতে পারে, সেটিই নিশ্চিত করার চেষ্টা করছে কর্তৃপক্ষ।

বাণিজ্য সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশ প্রবেশের জন্য সীমান্তে অপেক্ষারত ট্রাকগুলোর বেশিরভাগই ছোট ব্যবসায়ীদের। অন্যদিকে কান্দলা বন্দরে কয়েকটি বড় কোম্পানির ব্যবসায়ীদের বিপুল পরিমাণ গম আটকে রয়েছে।

কনফেডারেশন অব ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্রেড অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রবেশের জন্য প্রায় ৬ হাজার ট্রাক, ১০-১২টি রেলওয়ে রেক এবং ১০-১২টি বার্জ/জাহাজ কলকাতা বন্দরে আটকা পড়ে আছে। ব্যবসায়ী ও রপ্তানিকারকদের মোটামুটি অনুমান, প্রায় ২ লাখ থেকে ৩ লাখ টন গমের চালানে প্রকৃত এলসি থাকতে পারে।

ভারতের একটি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সংস্থার চেয়ারম্যান বিমল বেনগানি বলছেন, ‘গম রপ্তানির নিবন্ধন সনদ বা ছাড়পত্রের জন্য পূর্বাঞ্চল থেকে প্রায় ১২০০টি আবেদন অনলাইনে ডিজিএফটিতে জমা পড়েছে। অন্যদিকে এতোগুলো আবেদনের বিপরীতে গত ২ জুন পর্যন্ত বেশ কয়েকটি রপ্তানিকারককে প্রায় ২০০টি আরসি ইস্যু করেছে সংস্থাটি। কিন্তু আবেদনের অনেকগুলোই এখনও আটকে রয়েছে।’

তিনি বলেন, রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট বা আরসি পেতে দেরি হওয়ায় অনেক রপ্তানিকারক লোকসানে পড়েছেন।

এর আগে গত ২ জুন এক প্রতিবেদনে আরেক ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়া জানিয়েছিল, বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষায় পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বিভিন্ন স্থলবন্দরে আটকে থাকা গমের পরিমাণ প্রায় চার লাখ টন।

এছাড়া সীমান্তে গম আটকে থাকায় সম্ভাব্য ক্ষতির মুখে পড়ার আশঙ্কা করেছেন ভারতীয় রপ্তানিকারকরা। তাদের আশঙ্কা, গম পরিবহনে বিলম্ব হলে বৃষ্টির কারণে প্রয়োজনীয় এই শস্য পচে যেতে শুরু করবে এবং এতে করে তারা কোটি কোটি রুপি ক্ষতির সম্মুখীন হবেন।

উল্লেখ্য, ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম গম উৎপাদনকারী দেশ। তবে তাপপ্রবাহের কারণে গত বছরের তুলনায় চলতি বছরে গমের উৎপাদন প্রায় সাড়ে চার শতাংশ কম হয়েছে। এর জেরে গম রপ্তানিতে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা জারি করে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার।

এছাড়া রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণেও বৈশ্বিকভাবে গমের রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এই দুই দেশ একত্রে বিশ্বের মোট রপ্তানির ৩০ শতাংশ সরবরাহ করে থাকে।

টিএম