লয়েড অস্টিন (বাঁয়ে) ও ওয়েই ফেঙ্গে (ডানে), ছবি: উইয়ন

আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে যে মতপার্থক্য ও টানাপোড়েন চলছে, প্রতিরক্ষা বিভাগ ও সামরিক বাহিনীকে সেসব থেকে দূরে রাখতে বৈঠকে বসেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন ও চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওয়েই ফেঙ্গে।

বৃহস্পতিবার থেকে সিঙ্গাপুরে এশিয়ার বিভিন্ন দেশের প্রধান নিরাপত্তা বৈঠক শাংগ্রি-লা ডায়লগ শুরু হয়েছে। সে বৈঠকের অবসরে লয়েড অস্টিন ও ওয়েই ফেঙ্গে পরস্পর সাক্ষাৎ ও বৈঠক করেছেন বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।  

গত কয়েক বছর ধরে আন্তর্জাতিক ও অর্থনৈতিক বিভিন্ন ইস্যুতে মতপার্থক্য হয়েছে চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের, কিন্তু যে তিন ইস্যুতে সবচেয়ে এখনও টানাপোড়েন চলছে, সেসব হলো—তাইওয়ান, জিনজিয়াং প্রদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘণ ও দক্ষিণ চীন সাগর।

বৈঠক শুরুর আগের দিন, বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, ‘এটি সম্পূর্ণ পেশাদার ও দুই দেশের ভবিষ্যৎ সম্পর্কের রূপরেখা নির্ধারণমূলক একটি বৈঠক। আমরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ কিছু ইস্যুতে আলোচনায় বসছি। এর বেশি কিছু আপাতত বলার সুযোগ নেই।’

চীনের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে বলা হয়েছে, ওয়াশিংটনের সঙ্গে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে বেইজিং।

দুই দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বৈঠকে বিভিন্ন ইস্যুর মধ্যে তাইওয়ান ও ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে বলে রয়টার্সকে জানিয়েছেন মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের আরেক কর্মকর্তা।

১৯৪০ সালের গৃহযুদ্ধে চীন থেকে বিচ্ছিন্ন হয় তাইওয়ান। তারপর থেকে তাইওয়ানের স্বাধীনতাপন্থী রাজনীতিকরা নিজেদের স্বাধীন ও সার্বভৌম বলে দাবি করলেও চীন এই দ্বীপ ভূখণ্ডকে এখনও নিজেদের অংশ বলে দাবি করে।

৩৬ হাজার ১৯৭ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই দ্বীপ ভূখণ্ডের রয়েছে নিজস্ব সংবিধান, গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত নেতৃত্ব এবং প্রায় ৩ লাখ সক্রিয় সেনা সদস্যের একটি সেনাবাহিনী।

এখন পর্যন্ত অবশ্য খুবই অল্প কয়েকটি দেশ তাইওয়ানকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ট সম্পর্ক থাকলেও তাইওয়ানে এখন পর্যন্ত নিজেদের কোনো দূতাবাস খোলেনি দেশটি।

তবে তাইওয়ান বিষয়ক একটি আইনের আওতায় এই স্বাধীনতাকামী দ্বীপভূখণ্ডকে গত শতকের পঞ্চাশের দশক থেকেই সামরিক ও নিরাপত্তা বিষয়ক সহায়তা দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, চীন যদি তাইওয়ানে আগ্রাসন চালায়, সেক্ষেত্রে তাইওয়ানকে সামরিক সহায়তা দেবে যুক্তরাষ্ট্র।

বাইডেনের এই বক্তব্যের পর থেকে দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক আরও তিক্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম।

এদিকে, চলতি বছর ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে রাশিয়া ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করার পর থেকে চীন এ ইস্যুতে নিরপেক্ষ অবস্থান নেওয়ায় অস্বস্তিতে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সেই অস্বস্তি আরও বাড়িয়ে তুলেছে চীন ও রাশিয়ার সাম্প্রতিক কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্কগত ঘনিষ্টতা।

এসএমডব্লিউ