গুরুতর অসুস্থ পারভেজ মোশাররফ, দোয়া চেয়েছে পরিবার
পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট ও সামরিক শাসক পারভেজ মোশাররফ গুরুতর অসুস্থ। তিন সপ্তাহ ধরে দুবাইয়ের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন তিনি।
পরিবারের সদস্যরা তার সুস্থতার আশা ছেড়ে দিয়েছেন; জানিয়েছেন— যকৃত, কিডনিসহ অভ্যন্তরীণ অধিকাংশ প্রত্যঙ্গ বিকল হয়ে গেছে মোশররফের এবং বর্তমানে যে শারীরিক অবস্থার মধ্যে দিয়ে তিনি যাচ্ছেন, তা থেকে আর সুস্থ হয়ে তার জন্য অসম্ভব।
বিজ্ঞাপন
জানা গেছে, বিরল রোগ অ্যামিলোইডোসিসে আক্রান্ত মোশাররফ। এই রোগের রোগীদের দেহে অ্যামিলোইড নামের এক প্রকার প্রোটিন অস্বাভাবিক মাত্রায় তৈরি হতে থাকে।
সীমিত মাত্রার অ্যামিলোইড মানবদেহের জন্য তেমন ক্ষতিকারক নয়, তবে মানবদেহে অস্বাভাবিকভাবে এ প্রোটিন বাড়তে থাকলে দেহের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন প্রত্যঙ্গের কোষ ও টিস্যুতে মরিচার মতো এটি জমতে থাকে এবং তার ফলে একসময় কার্যকারিতা হারাতে থাকে এসব প্রত্যঙ্গ।
বিজ্ঞাপন
শুক্রবার সন্ধ্যায় এক টুইটবার্তায় মোশাররফের পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘তাকে ভেন্টিলেটরে রাখা হয়নি। অ্যামিলোইডোসিসে গুরুতর অসুস্থ হয়ে গত ৩ সপ্তাহ ধরে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তার দেহের বেশিরভাগ প্রত্যঙ্গ বিকল হয়ে পড়েছে এবং বর্তমানে যে শারীরিক অবস্থায় তিনি রয়েছেন, তা থেকে আর সুস্থ হয়ে ওঠার সম্ভব হবে না তার পক্ষে।’
‘তার শেষ দিনগুলো যেন শান্তিতে কাটে, সেজন্য সবাই দোয়া করবেন।’
— Pervez Musharraf (@P_Musharraf) June 10, 2022
ব্রিটিশ ভারতের দিল্লিতে জন্ম নেওয়া পরভেজ মোশাররফ বড় হয়েছেন পাকিস্তানের বাণিজ্যিক কেন্দ্র করাচিতে। পাকিস্তান পাঞ্জাব প্রদেশের লাহোর জেলার ফরম্যান ক্রিশ্চিয়ান কলেজ থেকে গণিতে স্নাতক ও যুক্তরাজ্যের রয়্যাল কলেজ অফ ডিফেন্স স্টাডিজে পড়াশোনা করেন।
পরবর্তীতে তিনি যোগ দেন পাক সেনাবানিহীতে। বিভিন্ন ঘটনাপ্রবাহের পর তিনি বসেন পাকিস্তানের মসনদে। যদিও তাঁর উত্থানের মতোই রাজনৈতিক পতনও ছিল বেশ আকস্মিক।
১৯৯৯ সালে রক্তাক্ত এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফকে ক্ষমতাচ্যুত করে দেশের ক্ষমতা দখল করেন তিনি; কিন্তু আনুষ্ঠানিকভাবে নিজেকে দেশের প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেন ২০০১ সালে।
২০০৮ সালে অভিশংসন এড়াতে রাষ্ট্রপতির পদ থেকে পদত্যাগ করেন মোশাররফ. তারপর দেশ ছেড়ে যুক্তরাজ্যে স্বেচ্ছা নির্বাসন নেন তিনি। তবে গত ছয় বছর ধরে মোশাররফ সপরিবারে দুবাইয়ে বসবাস করছেন বলে এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে পাকিস্তানের জাতীয় দৈনিক ডন।
২০০৭ সালে পাঞ্জাবের রাওয়ালপিন্ডি শহরে আততায়ীর গুলিতে নিহত হন পাকিস্তানের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টো। ধারণা করা হয়, এই ঘটনায় মোশাররফের হাত রয়েছে। তার নির্দেশেই গুপ্তহত্যার শিকার হন বেনজির।
২০১৩ সালে রাষ্ট্রদ্রোহের একটি মামলায় তার মৃত্যুদণ্ডও ঘোষণা করেছিল পাকিস্তানের একটি আদালত। পরে অবশ্য সেই দণ্ড প্রত্যাহার করা হয়েছে।
এসএমডব্লিউ