সামরিক ব্যয় কমানো ও প্রতিরক্ষা শক্তিকে আরও কার্যকর করে তুলতে ‘অগ্নিপথ’ প্রকল্পের আওতায় সেনাবাহিনী ঢেলে সাজানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত। এখন থেকে স্থল, নৌ ও বিমানবাহিনীতে এই প্রকল্প অনুসারেই সেনা সদস্যদের নিয়োগ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং।

মঙ্গলবার রাজধানী দিল্লিতে ‘অগ্নিপথ’ প্রকল্প ঘোষণা করেন কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী। সেখানে তিনি জানান, এই প্রকল্পের আওতায় চার বছরের জন্য সেনা সদস্যদের নিয়োগ দেওয়া হবে; এবং নিয়োগপ্রাপ্তদের মধ্যে ক্ষুদ্র একটি অংশকে স্থায়ীভাবে রেখে দেওয়া হবে সামরিক বাহিনীতে। বাকিদের চার বছর পর বিদায় জানানো হবে। এ সময় তাদের প্রত্যেককে দেওয়া হবে এককালীন অর্থ। তবে বিদায়ী সেনা সদস্যরা পেনশন সুবিধা পাবেন না। যাদেরকে স্থায়ীভাবে সেনাবাহিনীতে রেখে দেওয়া হবে, কেবল তারাই পাবেন এ সুবিধা।

রাজনাথ সিং বলেন, চলতি বছর মোট ৪৫ হাজার সেনা নিয়োগ দেবে সরকার। ১৭ বছর ৫ মাস থেকে ২১ বছর বয়সী আগ্রহী প্রার্থীরা আবেদন করতে পারবেন। অনলাইন সেন্ট্রালাইজড সিস্টেমের ভিত্তিতে আগামী ৯০ দিনের মধ্যে এই সেনা নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ হবে।

প্রাথমিক নিয়োগে যারা টিকে যাবেন, তাদেরকে নাম হবে ‘অগ্নিবীর’। বর্তমানে ভারতের সেনাবাহিনীতে নিয়োগপ্রাপ্তির জন্য যে ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রয়োজন, অগ্নিবীরদের ক্ষেত্রেও সেই একই যোগ্যতা রাখা হয়েছে।

প্রাথমিক নিয়োগপ্রাপ্তির পর সেনাদের নিতে হবে ৬ মাসের প্রশিক্ষণ। এসময় প্রত্যেক সেনার মাসিক বেতন হবে ৩০ হাজার থেকে ৪০ হাজার রুপির মধ্যে। সেই সঙ্গে চিকিৎসাভাতা ও অন্যান্য ভাতা ও বীমার সুবিধাও ভোগ করবেন তারা।

চার বছর পর কমিশনপ্রাপ্ত সেনা সদস্যদের মধ্যে ২৫ শতাংশ ও নন কমিশন্ড সেনা সদস্যদের মধ্যে ১৫ শতাংশকে রেখে বাকিদের বিদায় জানানো হবে। বিদায়ের সময় সরকারের পক্ষ থেকে এককালীণ ১১ লাখ থেকে ১২ লাখ রুপি দেওয়া হবে প্রত্যেককে।  

বিদায়ী সেনা সদস্যরা পেনশন পাবেন না;  তবে যুদ্ধক্ষেত্রে কোনো সেনা সদস্য যদি মৃত্যু ও পঙ্গুত্বের শিকার হন, সেক্ষেত্রে এককালীন অর্থের পরিমাণ বাড়বে।

মঙ্গলবারের ঘোষণায় ‘অগ্নিপথ’ প্রকল্পকে ঐতিহাসিক বলে উল্লেখ করে প্রতিরক্ষামন্ত্রী জানান, চলতি বছর নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ শেষে আগামী ২০২৩ সালে জুলাইয়ে নিয়মিত চাকরিতে প্রবেশ করবে অগ্নিবীরদের প্রথম ব্যাচ।

ভারতের নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, যদি এই প্রকল্প সফল হয়— তাহলে সামরিক খাতে বিপুল পরিমাণ অর্থ সাশ্রয় করতে সক্ষম হবে ভারত; কারণ প্রতি বছর দেশটির সামরিক খাতে যে বাজেট বরাদ্দ দেওয়া হয়, তার একটি বড় অংশই চলে যায় দেশটির কমিশনপ্রাপ্ত ও নন কমিশন্ড সেনা সদস্যদের বেতন, অবসরকালীন ভাতা ও অন্যান্য আর্থিক সুবিধা বাবদ ব্যায়ে।

ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এনডিটিভি জানিয়েছে, গত অর্থবছরে সামরিক বাহিনী খাতে ৫ দশমিক ২ লাখ কোটি রুপি বাজেট বরাদ্দ করা হয়েছিল। এই বাজেটের অর্ধেকই ব্যয় হয়েছে সেনা সদস্যদের বেতন-ভাতা ও অবসরকালীন ভাতার পেছনে।

এসএমডব্লিউ