করোনাভাইরাস মহামারির মাঝেই উত্তর কোরিয়ায় অন্ত্রের নতুন অজ্ঞাত আরেকটি রোগের প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়েছে। বৃহস্পতিবার দেশটির একটি কৃষি অঞ্চলে অন্ত্রের অজ্ঞাত রোগের এই প্রাদুর্ভাব শনাক্ত হয় বলে পিয়ংইয়ং জানিয়েছে।

দীর্ঘস্থায়ী খাদ্য সংকট এবং কোভিড-১৯ সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াইরত বিশ্ব থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন দেশটির ওপর নতুন এই রোগ আরও চাপ সৃষ্টি করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

তবে নতুন রোগে আক্রান্তের সংখ্যা অথবা রোগটি কীভাবে শনাক্ত করা হয়েছে, সে বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য না জানিয়ে দেশটির সরকারি সংবাদ সংস্থা কেসিএনএ বলছে, উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন বুধবার পশ্চিমাঞ্চলীয় বন্দর নগরী হায়েজুতে ‌‘একিউট এন্টেরিক রোগে’ আক্রান্ত রোগীদের সহায়তার জন্য ওষুধ পাঠিয়েছেন।

কেসিএনএ বলেছে, একেবারে শুরুর দিকেই রোগটি নিয়ন্ত্রণের ওপর জোর দিয়েছেন কিম জং উন। এ জন্য সন্দেহভাজন রোগীদের বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে শনাক্ত এবং কোয়ারেন্টাইনের সুনিপুণ ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে রোগটি নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

দক্ষিণ কোরিয়ার পুনরেকত্রীকরণ মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, সরকার উত্তর কোরিয়ার এই প্রাদুর্ভাবের ওপর নজর রাখছে। তবে এটি কলেরা অথবা টাইফয়েডের মতো কোনও ব্যাধি হতে পারে বলে সন্দেহ করছেন দক্ষিণ কোরিয়ার কর্মকর্তারা।

উত্তর কোরিয়া প্রথমবারের মতো করোনাভাইরাসের সংক্রমণ স্বীকার করার পর যখন এই ভাইরাসের প্রকোপের বিরুদ্ধে লড়াই করছে, ঠিক তখনই নতুন করে আরেকটি সংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাব শনাক্ত হল। করোনার ভ্যাকসিন এবং ওষুধ সরবরাহের তীব্র ঘাটতি ঘিরে উদ্বেগ তৈরি হওয়ায় গত মাসে দেশটিতে জরুরি অবস্থা ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল।

দক্ষিণ কোরিয়ার গোয়েন্দা সংস্থা তাদের আইনপ্রণেতাদের বলেছে, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের ঘোষণা দেওয়ার আগেই উত্তর কোরিয়ায় পানিবাহিত রোগ টাইফয়েড ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল।

সিউলের হ্যানিয়াং বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ অব মেডিসিনের অধ্যাপক শিন ইয়ং-জিওন বলেছেন, টাইফয়েড এবং অন্ত্রের সংক্রমণের মতো রোগের বিস্তার উত্তর কোরিয়ায় নতুন কিছু নয়। তবে সমস্যা হল—এই রোগটি এমন এক সময় শনাক্ত হয়েছে, যখন দেশটি কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবিলায় রীতিমতো লড়াই করছে।

দক্ষিণের পুনরেকত্রীকরণ মন্ত্রণালয়ের অপর এক কর্মকর্তা বলেছেন, রোগটির প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় উত্তর কোরিয়াকে সহায়তা করতে ইচ্ছুক দক্ষিণ কোরিয়া। কিন্তু উত্তর কোরিয়া সিউলের আগের কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন সরবরাহ করার মতো নতুন প্রস্তাবের বিষয়েও কোনও সাড়া দেয়নি।

উত্তর কোরিয়ার অন্যতম কৃষি অঞ্চল সাউথ হোয়াংহা প্রদেশ। এই প্রদেশের হায়েজুতে অন্ত্রের সংক্রামক ব্যাধিটি শনাক্ত হয়েছে। যে কারণে ইতোমধ্যে তীব্র খাদ্য সংকটের মুখোমুখি হওয়া উত্তর কোরিয়ায় নতুন এই রোগের প্রাদুর্ভাব ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে বলে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।

গাচন ইউনিভার্সিটি গিল মেডিকেল সেন্টারের সংক্রামক ব্যাধি বিশেষজ্ঞ ইওম জুং-সিক বলেছেন, ফসলের মাধ্যমে সংক্রমণ ছড়ানোর সম্ভাবনা অত্যন্ত কম হলেও মূল কাজটি হবে পানি সরবরাহের উৎসগুলো জীবাণুমুক্ত করা। কারণ এই রোগটি পানিবাহিত হতে পারে।

উত্তর কোরিয়া প্রত্যেক দিন জ্বরে আক্রান্ত রোগীদের সংখ্যা প্রকাশ করছে। তবে তারা করোনায় আক্রান্ত কিনা সেবিষয়ে নির্দিষ্ট করে কোনও তথ্য ঘোষণা করা হয় না। করোনা পরীক্ষা কিট সংকটের কারণে এই ভাইরাসটি শনাক্ত করতে পারছে না দেশটি। তবে সরকার-নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যমে জ্বরে আক্রান্ত রোগীদের যে সংখ্যা প্রকাশ করা হয়, তা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সন্দেহ রয়েছে।

বৃহস্পতিবার উত্তর কোরিয়ায় ২৬ হাজার ১০ জন জ্বরের উপসর্গে আক্রান্ত বলে জানানো হয়েছে। গত এপ্রিলের শেষের দিক থেকে এখন পর্যন্ত দেশটিতে এই উপসর্গে আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ৪৫ লাখ ৬০ হাজার মানুষ। আর এই প্রাদুর্ভাবে দেশটিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৭৩ জনে দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছে পিয়ংইয়ং।

করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব কমতে শুরু করেছে বলে চলতি মাসের শুরুর দিকে উত্তর কোরিয়া দাবি করলেও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে। বৈশ্বিক এই স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, উত্তর কোরিয়ায় করোনা পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সূত্র: রয়টার্স।

এসএস