২০০২ সালে ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য গুজরাটে সাম্প্রদায়িক মামলা থেকে রাজ্যের তৎকালীণ মুখ্যমন্ত্রী ও ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে অব্যাহতি দিয়েছিল ভারতের বিশেষ তদন্তাকারী দল স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিম (সিট)।

সেই অব্যাহতিকে চ্যালেঞ্জ করে ভারতের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টে মামলার আবেদন করেছিলেন গুজরাটের সাবেক কংগ্রেস এমপি এহসান জাফরির স্ত্রী জাকিয়া জাফরি। শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট জাকিয়ার মামলার আবেদন খারিজ করে দিয়েছে।

ভারতের সংবাদমাধ্যমগুলোর বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে বিবিসি জানিয়েছে, শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি এএম খানউইলকর, বিচারপতি দীনেশ মাহেশ্বরী ও বিচারপতি সিটি রবি কুমারের ডিভিশন বেঞ্চ শুক্রবার এ আপিলকে ‘ডিভয়েড অব মেরিট’ (যোগ্যতা বিবর্জিত) উল্লেখ করে খারিজ করে দেন।

ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর গত ৭৫ বছরের ইতিহাসে ভারতে যত প্রাণঘাতী ও ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়েছে, সেসবের মধ্যে ২০০২ সালের গুজরাট দাঙ্গা অন্যতম। হিন্দু তীর্থযাত্রীদের বহনকারী একটি ট্রেনে অগ্নিসংযোগ ও তাতে ৬০ জন তীর্থযাত্রীর মৃত্যুর মধ্যে দিয়ে সেই দাঙ্গা শুরু হয়েছিল এবং টানা কয়েকদিন ধরে চলা সেই দাঙ্গায় নিহত হন ১ হাজারেরও বেশি মানুষ; তাদের অধিকাংশই মুসলিম।

গুজরাটের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই ভয়াবহ দাঙ্গায় উসকানি দেন বলে অভিযোগ ওঠে। তবে সরকারের একাধিক তদন্তকারী সংস্থার প্রতিবেদনে এই অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি।

তারপর ২০০৮ সালে সুপ্রিম কোর্ট বিশেষ তদন্তকারী দল সিটকে এই অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ দেন। ২০১২ সালে আদালতে জমা দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদনে সিটের পক্ষ থেকে বলা হয়, নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে তোলা অভিযোগের পক্ষে উপযুক্ত প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

গুজরাট দাঙ্গার অন্যতম নৃশংস একটি ঘটনা ছিল গুলবার্গ সোসাইটি হত্যাকাণ্ড। গুজারাটের কংগ্রেসপন্থী এমপি এহসান জাফরিসহ ৬৯ জন তাতে নিহত হয়েছিলেন।

এই ঘটনায় করা মামলারও তদন্ত করে সিট এবং ২০২২ সালে তার প্রতিবেদন গুজরাট হাইকোর্টে ও ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জমা দেয়া হয়। সিটের তদন্ত প্রতিবেদেন নরেন্দ্র মোদিসহ মামলার ৬৪ জন আসামিকে ‘নির্দোষ’ বলে উল্লেখ করা হয় এবং গুজরাটের ম্যাজিস্ট্রেট আদালত প্রতিবেদনকে আমলে নিয়ে মামলার সব আসামিকে বেকসুর খালাস দেন।

পরে ওই বছরই হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে ‘স্পেশাল লিভ পিটিশন’ করেন জাকিয়া জাফরি। পিটিশনে বলা হয়, সিটের প্রতিবেদন ছিল নরেন্দ্র মোদিকে রক্ষা করার কৌশল; এবং সেই প্রতিবেদন আমলে নিয়ে এই মামলা বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিলেন ম্যাজিস্ট্রেট।

শুক্রবারের শুনানিতে সুপ্রিম কোর্টের বিচাপতিরা বলেন, ‘২০২২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি সিটের জমা দেওয়া চূড়ান্ত রিপোর্ট গ্রহণ করেছিলেন ম্যাজিস্ট্রেট। সেই সিদ্ধান্ত বহাল রাখছি আমরা ও মামলাকারীর (জাকিয়া) আরজি খারিজ করছি।’