ফাইল ছবি

ইতিহাসের সবচেয়ে খারাপ সময় পার করছে শ্রীলঙ্কা। তীব্র অর্থনৈতিক সংকটে দেশটির রাজনীতি থেকে শুরু করে মানুষের দৈনন্দিন জীবন অনেকটাই বিপর্যস্ত। এরইমধ্যে রোববার (২৬ জুন) দেশটিতে জ্বালানি তেলের মূল্য বাড়ানো হয়েছে।

এতে করে দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটিতে পেট্রোলের দাম গিয়ে দাঁড়িয়েছে প্রতি লিটারে ৫৫০ রুপিতে। একইসঙ্গে ডিজেলেরও দাম বাড়ানো হয়েছে অনেকটা। রোববার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে শ্রীলঙ্কান সংবাদমাধ্যম ডেইলি মিরর এবং ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া।

শ্রীলঙ্কান সরকারি তেল ও গ্যাস কোম্পানি সিলন পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (সিপিসি) জানিয়েছে, তারা গণপরিবহনে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত ডিজেলের দাম ১৫ শতাংশ বাড়িয়েছে। এতে করে প্রতি লিটার ডিজেলের দাম দাঁড়িয়েছে ৪৬০ রুপি (১.২৭ মার্কিন ডলার)। একইসঙ্গে পেট্রোলের দামও ২২ শতাংশ বাড়ানোর কথা জানিয়েছে সংস্থাটি। এতে করে প্রতি লিটার পেট্রোলের দাম হয়েছে ৫৫০ রুপি (১.৫২ মার্কিন ডলার)।

শ্রীলঙ্কার জ্বালানি মন্ত্রী কাঞ্চনা উইজেসকেরা তেলের নতুন চালান পেতে অনির্দিষ্টকালের বিলম্ব হবে বলে ঘোষণা দেওয়ার একদিন পর এই মূল্য বৃদ্ধি করা হলো। তিনি বলেন, ব্যাংকিং কারণে গত সপ্তাহে নির্ধারিত শিডিউল অনুযায়ী জাহাজে পণ্য লোড না হওয়ায় পরের সপ্তাহেও তেল শ্রীলঙ্কায় পৌঁছাবে না।

উইজেসকেরা গাড়ি চালকদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থণা করেন এবং জ্বালানি স্টেশনের বাইরে দেশটির নাগরিকদের দীর্ঘ লাইনে না দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন। মূলত শ্রীলঙ্কার বহু মানুষ তাদের যানবাহনগুলোকে জ্বালানি স্টেশনের বাইরে সারিবদ্ধভাবে রেখে দিয়েছেন। এসব স্টেশন আপাতত ফাঁকা হলেও সরবরাহ শুরু হলে তারা জ্বালানি নেবেন।

শ্রূলঙ্কার সরকারি সূত্র জানিয়েছে, দেশটিতে প্রায় দুই দিনের জন্য পর্যাপ্ত জ্বালানি ছিল, তবে কর্তৃপক্ষ এটি জরুরি পরিষেবার জন্য সংরক্ষণ করেছে।

এদিকে দক্ষিণ এশিয়ার এই দ্বীপ দেশটিকে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকট থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে আলোচনার জন্য মার্কিন কর্মকর্তারা কলম্বো সফরে গেছেন। কলম্বোর মার্কিন দূতাবাস বলেছে, ‘শ্রীলঙ্কানদের সহযোগিতার লক্ষ্যে সবচেয়ে কার্যকর উপায় খুঁজতে আলোচনার জন্য মার্কিন অর্থ মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র দপ্তরের একটি প্রতিনিধিদল কলম্বো এসেছে।’

দূতাবাস এক বিবৃতিতে বলেছে, গত দুই সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র নতুন অর্থায়নের মাধ্যমে শ্রীলঙ্কাকে ১৫৪.৭৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

মূলত, শ্রীলঙ্কার ২ কোটি ২০ লাখ মানুষের বেশিরভাগই খাদ্য ঝুঁকিতে রয়েছে এবং এই কারণে জাতিসংঘ ইতোমধ্যে খাদ্যের জন্য ৪৭ মিলিয়ন ডলার সংগ্রহের জরুরি আবেদন জানিয়েছে।

উল্লেখ্য, ১৯৪৮ সালে ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীনতা লাভ করে শ্রীলঙ্কা। এরপর থেকে তামিল সংকটসহ বহু সমস্যা মোকাবিলা করতে হয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার এই দ্বীপরাষ্ট্রটিকে। বর্তমানে আর্থিক সংকট ভয়াবহ রূপ নিয়েছে দেশটিতে। এই সংকট থেকে আদৌ পুনরুদ্ধার করা সম্ভব কি না, তা নিয়ে সন্দিহান বিশেষজ্ঞরা।

এই পরিস্থিতির জন্য প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে-সহ গোটা রাজাপাকসে পরিবারকে দায়ী করছে লংকানরা। দীর্ঘদিন ধরেই প্রেসিডেন্টের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন চলছে। দল, মত, সম্প্রদায় নির্বিশেষে শ্রীলঙ্কার নাগরিকরা একজোট হয়ে রাস্তায় নেমেছেন। চলছে প্রতিবাদ, বিক্ষোভ।

অন্যদিকে, বৈদেশিক মুদ্রার অভাবের কারণে শ্রীলঙ্কায় এই সংকট দেখা দিয়েছে বলে অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন। কারণ নিজস্ব উৎপাদন ক্ষমতা কম হওয়ায় এই দ্বীপরাষ্ট্রকে অধিকাংশ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়।

টিএম