ইউক্রেনে রাশিয়ার বিশেষ সামরিক অভিযান আর কতদিন চলবে, এখনই সে সম্পর্কে নির্দিষ্ট ধারণা লাভ সম্ভব নয়; যদি শিগগির এই অভিযান শেষ হয়, তাহলেও অন্তত পরবর্তী ১০ বছর বিশ্বজুড়ে এই যুদ্ধের প্রভাব থাকবে।

তুরস্কের সংবাদমাধ্যম হেবেরতুর্ক টিভি চ্যানেলকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এই তথ্য জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ানের মুখপাত্র ইব্রাহিম কালিন। পাশাপাশি তিনি জানিয়েছেন, নিজ দেশের স্বার্থের বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ার কারণেই রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি থেকে বিরত রয়েছে তুরস্ক।

রোববারের সাক্ষাৎকারে ইব্রাহিম কালিন বলেন, ‘(ইউক্রেনে) রুশ বাহিনীর অভিযান কবে শেষ হতে পারে, তা এই মুহূর্তে ধারণা করা সম্ভব নয়। তবে এই যুদ্ধের ফলে বিশ্বজুড়ে যেসব ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে, তাকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়— স্বল্পমেয়াদী, মধ্যমমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী।’

‘এবং আমার ধারণা বলছে, আগামী অন্তত ১০ বছর বিশ্ববাসীকে এই বিভিন্ন মেয়াদী প্রভাবের ভুক্তভোগী হতে হবে। যুদ্ধ হয়তো শেষ হবে, কিন্তু তার ক্ষতিকর প্রভাব থেকে মুক্তির কোনো উপায় আমাদের সামনে খোলা নেই।’

এই যুদ্ধের মধ্যে দিয়ে বিশ্বে ‘নতুন ধরনের শীতল যুদ্ধ’ শুরু হয়েছে এবং এটি বিশ্ব রাজনীতিকে আমূল পাল্টে দেবে উল্লেখ করে তুরস্কের প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র বলেন, ‘এই অভিযান শুরুর পর থেকে একদিকে পশ্চিমা দেশগুলোতে যেমন রাশিয়া বিরোধী মনোভাব বাড়ছে, তেমনি রাশিয়াতেও পশ্চিম বিরোধী মনোভাব ছড়িয়ে পড়ছে। এটা চলতেই থাকবে এবং এর ফলে বিশ্ব রাজনীতি আগাগোড়া পাল্টে যাবে।’

কৃষ্ণ সাগরের তীরবর্তী দুই দেশ রাশিয়া ও ইউক্রেন— উভয়ের সঙ্গেই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে তুরস্কের। পাশপাশি একমাত্র এশীয় দেশ হিসেবে ন্যাটোর সদস্য হওয়ার সুবাদে যুক্তরাষ্ট্রেরও অন্যতম মিত্রদেশ তুরস্ক।

কিন্তু গত ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য মিত্র রাশিয়ার ওপর একের পর এক নিষেধজ্ঞা জারি করলেও তুরস্ক এখন পর্যন্ত রাশিয়ার ওপর কোনো নিষেধজ্ঞা জারি করেনি; বরং রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যকার সংকট রাজনৈতিকভাবে সমাধানে দূতের ভূমিকা পালন করছে দেশটি।

এ সম্পর্কে সাক্ষাৎকারে ইব্রাহিম কালিন বলেন, ‘তুরস্ক জ্বালানিতে স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। আমাদেরকে বাইরের দেশ থেকে জ্বালানি আমদানি করতে হয়। এ কারণে রাশিয়ার সঙ্গে আমাদের যেমন বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে, ইরানের সঙ্গেও রয়েছে।’

‘আমরা যে রাশিয়ার ওপর কোনো নিষেধজ্ঞা দিইনি, তার প্রধান কারণ— আমরা নিজেদের জাতীয় স্বার্থকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছি।’

‘এই যুদ্ধের বিষয়ে আমাদের অবস্থান একদম পরিষ্কার, আর সেটি হলো— আমরা চাই কূটনৈতিকভাবে এই সমস্যার সমাধান হোক। গত দু’মাস ধরে রাশিয়া ও ইউক্রেনের সরকারি প্রতিনিধিদের মধ্যে যে শান্তি আলোচনা চলছে, তার আয়োজকও কিন্তু আমরা।’

‘বিশ্বও তুরস্কের এই অবস্থান মেনে নিয়েছে; কারণ কাউকে না কাউকে মধ্যস্থতা করার জন্য এগিয়ে আসতেই হতো এবং এই মুহূর্তে তুরস্ক ছাড়া এই ভূমিকা কেউই পালন করতে পারত না।’

যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র পশ্চিমা দেশগুলোর সামরিক জোট ন্যাটোকে ঘিরে দ্বন্দ্বের জেরে সীমান্তে আড়াই মাস সেনা মোতায়েন রাখার পর গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযান শুরুর ঘোষণা দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এই ঘোষণা দেওয়ার দু’দিন আগে ইউক্রেনের রুশ বিচ্ছিন্নতাবাদী নিয়ন্ত্রিত দুই অঞ্চল দনেতস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেন তিনি।

সোমবার ১২৪তম দিনে গড়িয়েছে ইউক্রেনে রুশ সেনাদের অভিযান। ইতোমধ্যে দেশটির দুই বন্দর শহর খেরসন ও মারিউপোল, দনেতস্ক প্রদেশের শহর লিয়াম, লুহানস্ক প্রদেশের প্রধান শহর সেভেরোদনেতস্ক এবং মধ্যাঞ্চলীয় প্রদেশ জাপোরিজ্জিয়ার আংশিক এলাকার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ চলে গেছে রুশ বাহিনীর হাতে।

সূত্র: আরটি

এসএমডব্লিউ