৯ বছর বয়সে মার্কিন ফাইটার জেটের ফেলা নাপাম বোমায় অগ্নিদগ্ধ হয়েছিলেন ভিয়েতনামি এক মেয়ে। ৫০ বছর আগের ঘটনা এটি। তখন তার নগ্নভাবে দৌড়ানোর এবং চিৎকার করার ছবি ইতিহাসে পরিণত হয়েছিল। বর্তমানে তার বয়স ৫৯ বছর। তিনি পোড়া ত্বকের চূড়ান্ত চিকিত্সা করাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রেই, যে দেশ তার ওপর বোমা ফেলেছিল।

কিম ফুক ফান তি ‘নাপালম গার্ল’ নামেই বিশ্বে পরিচিতি পেয়েছেন, তার শরীরের থার্ড ডিগ্রি পোড়া থেকে ব্যথা উপশম করার জন্য একাধিক পদ্ধতি এবং চিকিত্সার মধ্য দিয়ে চলেছেন তিনি। ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় ১৯৭২ সালের জুন মাসে তার গ্রামে নেপালম স্ট্রাইক হয়েছিল।

এক বছর হাসপাতালে থাকা এবং ১৭টি অস্ত্রোপচারের পর দগ্ধ মেয়েটিকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। তবে সঠিকভাবে সেরে উঠতে পরবর্তী দশকে তাকে আরও বেশ কয়েকটি চিকিৎসা পদ্ধতির মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছিল। তবুও প্রতিটি দিন তার জন্য যন্ত্রণাদায়ক ছিল।

একটি ৯ বছর বয়সী মেয়ে কাপড় ছাড়া ছুটে গোটা বিশ্বের কাছে দুটি গল্প শুনিয়েছিল। প্রথম গল্পটি ভিয়েতনাম যুদ্ধের ট্র্যাজেডি নিয়ে, যার কারণে এই ছবিটি তৈরি হয়েছিল এবং দ্বিতীয়টি, যা সেই সময়ের অনেক বছর পরে লেখা হয়েছিল। এই ছবিটি ভিয়েতনাম যুদ্ধে নাপালম আক্রমণের কারণে বিধ্বস্ত তারাং ব্যাং গ্রাম থেকে তোলা হয়েছিল।

১৯৫০-এর দশকে বিশ্ব ভিয়েতনাম যুদ্ধের ভীতিকর বাস্তবতা দেখেছিল। এই যুদ্ধে বহু মানুষ ঝলসে গেছে, আত্মাহুতি দিয়েছে, যারা বাকি ছিল তারা প্রাণ বাঁচাতে ছুটছিল। এই মানুষদের মধ্যে ছিল ৯ বছর বয়সী এক মেয়ে কিম ফুক। কিমের মুখে ছড়িয়ে পড়া ভয় এমন প্রত্যেক ব্যক্তি অনুভব করতে পারে যার মনের মধ্যে সামান্যতম সংবেদন আছে।

কিমের এই ছবিটি তোলা হয়েছিল যখন তিনি এবং তার সঙ্গীরা গ্রামে আগুন থেকে পালিয়ে যাচ্ছিলেন। কিমের জামাকাপড় পুড়ে গেছে। বাঁচতে সে তার জ্বলন্ত জামাকাপড় ফেলে দেয়।

ভিয়েতনামের ফটোগ্রাফার নিক উতে এই ভীত-সন্ত্রস্ত মেয়েটিকে ক্যামেরায় এমনভাবে বন্দি করেন যে সবার চোখ ভিজে ওঠে। এই ছবিটি পুলিৎজার সম্মানে ভূষিত হয়েছিল। আর এভাবেই এই ছবি এক ভীতিকর সময়ের সাক্ষী হয়ে ওঠে।

ছবিটি ১৯৭২ সালের ৮ জুন তোলা হয়েছিল। ছবিটি তোলা হয় যখন ভিয়েতনামের একটি গ্রামে মার্কিন সেনাবাহিনী বোমাবর্ষণ করছিল এবং সেই সময় শিশুরা তাদের জীবন বাঁচাতে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছিল। একই সঙ্গে পোশাক ছাড়া দৌড়ানো নেপালম গার্লও সবার নজরে আসে।

বেশিরভাগ মানুষ তাদের সঙ্গে যে বাড়াবাড়ি হয়েছে তার প্রতিশোধ নেওয়ার কথা ভাবেন। যে দেশটি তার গ্রাম পুড়িয়ে দিয়েছে তাকে ধ্বংস করার জন্য কিমও তার সারা জীবন কাটিয়ে দিতে পারতেন, কিন্তু কিম তা করেননি। তিনি জীবনের সঙ্গে যুদ্ধ করেছেন কিন্তু প্রতিশোধের জন্য নয়, মানুষকে সাহায্য করার জন্য। কিম তার পড়াশোনা শেষ করেন এবং একটি সংস্থা গঠন করেন যার লক্ষ্য যুদ্ধের সময় আহতদের ওষুধ সরবরাহ করা। কিমের করা মানবিক কাজের জন্য তিনি ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯-এ ড্রেসডেন শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হন।

ছবিটির ৫০ বছর হয়েছে। নিউইয়র্ক টাইমস ছবিটির ৫০তম বার্ষিকী উপলক্ষে ৬ জুন একটি নিবন্ধ লিখেছিল, যেখানে কিম ছবিটির সঙ্গে জড়িত দুঃখের স্মৃতি শেয়ার করেছিলেন। এর আগে ২ জুন ফটোগ্রাফার নিক উটিও ওয়াশিংটন পোস্টে লিখেছিলেন যে, ‘একটি ছবি বিশ্বকে বদলে দিতে পারে, আমি জানি কারণ আমি এমন একটি ছবি তুলেছি।’

এসএসএইচ