উজবেকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় কারাকালপাকস্তান অঞ্চলের রাজধানী নুকুসে উজবেক নিরাপত্তা কর্মীদের দেখা যাচ্ছে। ছবিটি ৩ জুলাই তোলা

মধ্য এশিয়ার দেশ উজবেকিস্তানের কারাকালপাকস্তান প্রদেশে গত এক সপ্তাহ জুড়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে বিক্ষুব্ধ জনতার সংঘর্ষে ১৮ জন নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন আরও ২৪৩ জন। এছাড়া বিক্ষোভে সংশ্লিষ্টতা ও উসকানি দেওয়ার অভিযোগে গ্রেপ্তার হন ৫১৬ জন।

তবে গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের সবাইকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছে দেশটির প্রতিরক্ষা বাহিনী ন্যাশনাল গার্ড।

১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর যে ১৫টি স্বাধীন রাষ্ট্রের উদ্ভব হয়, সেসবের মধ্যে উজবেকিস্তানও একটি। স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর যে সংবিধান প্রণয়ন করেছিল উজবেকিস্তান—সেখানে প্রতিটি প্রদেশকে স্বায়ত্বশাসিত অঞ্চলের মর্যাদা দেওয়া হয়েছিল। পাশাপাশি, কোনো প্রদেশ যদি নিজেকে বিচ্ছিন্ন করতে চায়, তাহলে যথাযথ সাংবিধানিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সেটির বিচ্ছিন্ন হওয়ার অধিকারও স্বীকৃত ছিল উজবেকিস্তানের সংবিধানে।

গত সপ্তাহে দেশটির প্রেসিডেন্ট প্রেসিডেন্ট শাভকাত মিরজিয়োয়েভ নতুন অধ্যাদেশ প্রণয়নের মাধ্যমে কারাকালপাকস্তানের স্বায়ত্বশাসিত অঞ্চলের মর্যাদা ও উজবেকিস্তান থেকে সেটির বিচ্ছিন্ন হওয়ার সাংবিধানিক অধিকার বাতিলের উদ্যোগ নেওয়ার পর থেকেই বিক্ষোভ শুরু হয় উজবেকিস্তানের   উত্তরপশ্চিমাঞ্চলীয় এই প্রদেশটিতে।

গত শুক্রবার কারাকালপাকস্তানের প্রাদেশিক রাজধানী নুকুসে বিক্ষোভকারীরা স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন কার্যালয় দখলের চেষ্টা করে, এ সময় ন্যাশনাল গার্ডের সদস্যদের সঙ্গে ব্যাপক সংঘাত হয়ে তাদের।

এক প্রতিবেদনে বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে উজবেকিস্তানে সম্প্রতি যে মাত্রার বিক্ষোভ হয়েছে, গত দুই দশকের ইতিহাসে এমন বিক্ষোভ দেখেনি ৩ কোটি ৪০ লাখ মানুষ অধ্যুষিত মধ্য এশিয়ার এই দেশটি।

রিপাবলিক অব কারাকালপাকস্তানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রধান সুলতানবেক জিয়ায়েভ নিউজ ওয়েবসাইট দারিও ডট ইউজেডকে বলেছেন, বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষে আহতদের দিয়ে নুকুসের হাসপাতালগুলো ভরে গেছে।

গত শনিবার (২ জুলাই) প্রস্তাবিত নতুন অধ্যাদেশ বাতিল করেছেন শাভকান মিরজিয়োয়েভ। পাশাপাশি কারাকালপাকস্তান জুড়ে আগামী ১ মাস জরুরি অবস্থাও ঘোষণা করেছেন তিনি।

আরেকটি নিউজ ওয়েবসাইট কুন ডট ইউজেডে রোববার প্রকাশিত নুকুসের একাধিক ছবিতে সড়কে ব্যারিকেড, জ্বলন্ত ট্রাক এবং সাঁজোয় যানসহ ব্যাপক সেনা উপস্থিতি দেখা গেছে।

শাসকদের কঠোর নিয়ন্ত্রণে থাকা সাবেক সোভিয়েত প্রজাতন্ত্র উজবেকিস্তানের সরকার যে কোনো ধরনের ভিন্নমত শক্তহাতে দমনের জন্য পরিচিত।

কারাকালপাকস্তানের অবস্থান আরল সাগরের (হ্রদ) তীরে। এই হ্রদটি কয়েক দশক ধরে পরিবেশগত বিপর্যয়ে ভুগছে। কারাকালপাকস্তানে সংখ্যালঘু নৃগোষ্ঠী কারাকালপাকদের বসবাস। তাদের নৃতাত্ত্বিকভাবে তুর্কিক জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভূক্ত হলেও ভাষা ও সংস্কৃতিগতভাবে প্রতিবেশী দেশ কাজাখস্তানের বাসিন্দা কাজাখ জাতিগোষ্ঠীর কাছাকাছি।

মিরজায়োইয়েভ সোমবার কাজাখস্তানের প্রেসিডেন্ট কাসিম জোমার্ত তোকায়েভের সঙ্গে কথা বলেছেন। প্রবাসী কারকালপাকদের সবচেয়ে বড় অংশ কাজাখস্তানেই বসবাস করে। তোকায়েভের দপ্তর জানিয়েছে, কারাকালপাকস্তানে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে তাশখন্দের (উজবেকিস্তানের রাজধানী) নেওয়া সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন তিনি।     

এ নিয়ে চলতি বছর মধ্য এশিয়ায় অস্থিরতার দ্বিতীয় ঘটনা ঘটল। এর আগে জানুয়ারিতে কাজাখস্তান ব্যাপক বিক্ষোভ গুড়িয়ে দিয়েছিল; শৃঙ্খলা ফেরাতে কর্তৃপক্ষকে সহায়তায় রাশিয়া ও অন্যান্য সাবেক সোভিয়েত প্রজাতন্ত্র তখন দেশটিতে সেনাও পাঠিয়েছিল।

উজবেকিস্তানের সংঘাত  প্রসঙ্গে অবশ্য রোববার রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে— উজবেকিস্তানের বর্তমান যে পরিস্থিতি, সেটি একান্তভাবেই দেশটির অভ্যন্তরীণ ব্যাপার।

অন্যদিকে, পাল্টা এক বিবৃতিতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) জানিয়েছে— উজবেকিস্তান ইস্যুতে দ্রুত স্বাধীন একটি তদন্ত কমিশন গঠন করবে ইইউ।

আরও পড়ুন: কাজাখস্তানে দাঙ্গায় ১৬০ জনের বেশি নিহত 

সূত্র: রয়টার্স, বিবিসি

এসএমডব্লিউ