পাকিস্তানের সেনাপ্রধান এবং চিফ অব আর্মি স্টাফ (সিওএএস) জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া (ফাইল ছবি)

পাকিস্তানের রাজনীতিতে সেনাবাহিনী ও দেশটির প্রভাবশালী গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টার সার্ভিস ইন্টেলিজেন্সের (আইএসআই) সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ বেশ পুরোনো। রাজনৈতিক বিভিন্ন কর্মসূচি এমনকি জাতীয় নির্বাচনেও সেনাকর্তাদের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টার অভিযোগও বেশ সাধারণ।

তবে এবার যেন সামরিক কর্মকর্তাদের সেই কর্মকাণ্ডে রাশ টেনে ধরতে চাইছে খোদ পাকিস্তান সেনাবাহিনী। সম্প্রতি সেনা কমান্ডারদের রাজনীতি থেতে দূরে থাকতে তেমনই এক নির্দেশনা দিয়েছেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান এবং দেশটির চিফ অব আর্মি স্টাফ (সিওএএস) জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া।

মঙ্গলবার (৫ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় বার্তাসংস্থা এএনআই। এতে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর কমান্ডার ও আইএসআই’র সঙ্গে সংশ্লিষ্টরাসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাদের রাজনীতি থেকে দূরে থাকতে এবং রাজনীতিবিদদের সঙ্গে যোগাযোগ এড়াতে নির্দেশ দিয়েছেন সিওএএস জেনারেল বাজওয়া।

পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশটির পাঞ্জাব প্রদেশের আসন্ন উপ-নির্বাচনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফকে (পিটিআই) ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য পাকিস্তানের সামরিক প্রতিষ্ঠানগুলো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সংশ্লিষ্ট হচ্ছে বলে খবর বের হওয়ার পর সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া এই নির্দেশ দেন।

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানও দাবি করেছেন, পাঞ্জাব প্রদেশের আসন্ন উপ-নির্বাচনে তার কিছু প্রার্থীকে অজ্ঞাত নাম্বার থেকে টেলিফোন কল পাওয়ার বিষয়ে তার কাছে অভিযোগ এসেছে। পিটিআই প্রধান আরও বলেছেন, উপনির্বাচনে কারচুপি করতেই তার দলের নেতা-কর্মীদের ওপর চাপ দেওয়া হচ্ছে।

দ্য নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা সূত্রগুলো এই অভিযোগের বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছে এবং জানিয়েছে, পিটিআই নেতারা লাহোরে নিযুক্ত আইএসআই’র সেক্টর কমান্ডারের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুললেও নিজের কিছু পেশাগত কাজের জন্য তিনি ১৫ দিনেরও বেশি সময় ধরে লাহোরে নয় বরং ইসলামাবাদে অবস্থান করছেন।

এর আগে, পাকিস্তানের প্রভাবশালী গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টার-সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্সকে (আইএসআই) রাজনীতি থেকে দূরে থাকার জন্য কঠোরভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। আইএসআই’র ডিজি গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তাদের সতর্ক করেছিলেন যে, রাজনীতি এবং রাজনৈতিক বিষয়ে কোনো হস্তক্ষেপ সহ্য করা হবে না।

পাকিস্তানের গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সংস্থাটির অননুমোদিত রাজনৈতিক ভূমিকা আইএসআই’র সুনাম নষ্ট করেছে। তবে, বর্তমান আইএসআই ডিজি অপ্রয়োজনীয় বিতর্ক থেকে দূরে থাকতে প্রতিষ্ঠানটিকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানা গেছে।

গত মাসে পাকিস্তান সামরিক বাহিনী জানায়, ২০১৮ সালের সাধারণ নির্বাচনের মতো দেশে আসন্ন ভোটের সময় নিরাপত্তা প্রদানের কাজে তারা জড়িত হতে চায় না। তবে নির্বাচনী কর্মকাণ্ডের সময় প্রয়োজন দেখা দিলে সামরিক বাহিনী নিরাপত্তার কাজে যুক্ত হওয়ার আশ্বাস দিয়েছে বলে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য ডনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

এর আগে ২০১৮ সালে পাকিস্তানের ভোট কেন্দ্রগুলোতে সশস্ত্র বাহিনীকে বিস্তৃত বিচারিক ক্ষমতা প্রদান করেছিল ইলেকশন কমিশন অব পাকিস্তান (ইসিপি)।

দ্য ডন জানিয়েছে, বিরল সেই পদক্ষেপের কারণে সেসময় মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলোর কাছ থেকে গুরুতর সমালোচনার মুখে পড়ে নির্বাচন কমিশন।

টিএম