দারুল আ’শোম স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা আব্দুল কাহফি সাংকেতিক ভাষায় বধির শিক্ষার্থীদের পড়াচ্ছেন। ছবিটি গত ২২ জুন তোলা

সুস্থ ও স্বাভাবিক শিশুদের পাশাপাশি শ্রবণ ও বাক প্রতিবন্ধী শিশুরাও সমাজেরই অংশ। তবে প্রতিবন্ধকতা থাকায় সুস্থ ও স্বাভাবিক বাচ্চাদের তুলনায় শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষা ব্যবস্থা বেশ জটিল। এমনকি প্রায়শই শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হতে হয় অনেককে।

একইভাবে ধর্মীয় শিক্ষা থেকেও বঞ্চিত হতে হয় শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিশুদের। আর এই সংক্রান্ত উদ্বেগ থেকেই সাংকেতিক ভাষায় শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের পবিত্র কোরআন শিক্ষা দিচ্ছে ইন্দোনেশিয়ার একটি স্কুল। মঙ্গলবার (৫ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইন্দোনেশিয়ার শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা কীভাবে প্রায়শই ধর্মীয় শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয় সে সম্পর্কে উদ্বেগ থেকেই একটি ইসলামিক বোর্ডিং স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন আব্দুল কাহফি নামে দেশটির এক ধর্মগুরু। মূলত সাংকেতিক ভাষা ব্যবহার করে পবিত্র কোরআন অধ্যয়ন এবং তেলাওয়াতে সহায়তা করতেই ওই স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন তিনি।

রয়টার্স বলছে, আব্দুল কাহফি নামে ইন্দোনেশীয় ওই ধর্মীয় ব্যক্তিত্বের প্রতিষ্ঠিত ইসলামিক বোর্ডিং স্কুলের নাম দারুল আ’শোম। ২০১৯ সালে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই দেশটির মধ্য জাভার যোগিয়াকার্তা শহরে স্কুলটি চালু করা হয়।

স্কুলটিতে এখন ১২ জন স্টাফ রয়েছেন এবং বিশ্বের বৃহত্তম মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এই দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলের ১১৫ জন শিক্ষার্থীকে সেখানে পবিত্র কোরআন শিক্ষা দেওয়া হয়। এসব শিক্ষার্থীর বয়স ৭ বছর থেকে ২৮ বছরের মধ্যে।

আব্দুল কাহফির আশা, স্কুলটি ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য ইসলাম সম্পর্কে জানা আরও সহজ করে তুলবে। তার স্কুলের প্রতি আগ্রহ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার বিষয়টি উল্লেখ করে রয়টার্সকে তিনি বলেন, ‘আজকাল শ্রবণ-প্রতিবন্ধী প্রাপ্তবয়স্করা খুব কমই ধর্মকে গভীরভাবে জানে কারণ স্কুল বয়স থেকে তারা কখনোই এটি সম্পর্কে শেখেনি।’

ইন্দোনেশিয়ায় পাবলিক স্কুলের পাঠ্যক্রমে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য সীমিত ধর্মীয় শিক্ষা প্রদান করা হয়ে থাকে। মূলত কিন্ডারগার্টেনের পরিবর্তে আট বা নয় বছর বয়সে এই ধরনের শিশুদের ধর্মীয় শিক্ষা শুরু হয়।

জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের জরিপ অনুসারে, ইন্দোনেশিয়ায় প্রতি ১০ জন প্রতিবন্ধী শিশুর মধ্যে মাত্র তিনজন স্কুলে যেতে সক্ষম। রয়টার্স বলছে, শ্রবণ-প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা সাধারণত স্কুলে কোরআন তেলাওয়াত শিখতে এবং মুখস্থ করতে প্রায় পাঁচ বছর সময় নেয়।

মোহাম্মদ ফরহাদ নামে ১০ বছর বয়সী এক ছাত্র বলছেন, ‘আমি পবিত্র কোরআনের ৩০টি পারা (অংশ) পড়তে এবং মুখস্ত করতে সক্ষম হয়েছি।’ এই শিক্ষার্থী আরও বলছেন, নিজের জ্ঞান অন্যদের কাছে পৌঁছে দিতে তিনি নিজেও ধর্মীয় প্রচারণার কাজে যুক্ত হতে চান।

উল্লেখ্য, ইন্দোনেশিয়ায় হাজার হাজার ইসলামিক বোর্ডিং স্কুল (মাদ্রাসা) এবং অন্যান্য ধর্মীয় স্কুল রয়েছে। আর এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রায়শই দরিদ্র পরিবারের শিশুদের শিক্ষা লাভের একমাত্র উপায় হিসেবে কাজ করে থাকে।

টিএম