ঈদুল আজহায় পশু কোরবানি করার অভিযোগে পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের ফয়সালাবাদ জেলায় আহমদিয়া সম্প্রদায়ের তিন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ঈদে পশু কোরবানির মাধ্যমে সংখ্যাগুরু মুসলিমদের ‘ধর্মানুভূতিতে’ আঘাত দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের এই তিন জনের বিরুদ্ধে।

এ অভিযোগের জেরে ইতোমধ্যে মামলা করা হয়েছে থানায়। সেই মামলার আসামি হিসেবেই তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে সোমবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে পাকিস্তানের জাতীয় দৈনিক ডন।

মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়, ফয়সালাবাদের তিকরিওয়ালা এলাকায় ঈদুল আজহার জামাত চলার সময় হঠাৎ চাউর হয়ে যায়, নিকটবর্তী আহমদিয়া কলোনির একটি বাড়িতে পশু কোরবানি করা হচ্ছে।

অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়েছে, ‘মামলার বাদিপক্ষের বেশ কয়েকজন তারপর কলোনিতে যায় এবং সেই বাড়ির আশপাশের কয়েকটি বাড়ির ছাদে উঠে দেখতে পায়, সেই বাড়ির উঠানের একদিকে একটি ছাগল জবাই করা হচ্ছে এবং অপরদিকে কয়েকজন ব্যক্তি খানিকক্ষণ আগে কোরবানি করা একটি ছাগলের মাংস কাটছেন।’

‘এই দৃশ্য দেখে প্রত্যক্ষদর্শীদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগে। কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী এই ঘটনার ভিডিও করেছেন এবং সেই ভিডিও ফুটেজের কপি থানায় জমাও দিয়েছেন।’

‘আহমদিয়া হওয়া সত্ত্বেও ঈদুল আজহায় পশু কোরবানির মাধ্যমে তারা নিজেদেরকে মুসলিম হিসেবে পরিচিত করতে চেয়েছেন। মুসলিম উম্মাহর ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী এটি একটি জ্ঞাত অপরাধ এবং এই কাজের মাধ্যমে তারা মুসলিমদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেছেন।’

পাকিস্তানের আহমদিয়া সম্প্রদায়ের মুখপাত্র সালিম উদ্দিন ডনকে বলেন, ‘গোপনে বাড়ির ভেতরে এই কোরবানির আয়োজন করা হয়েছিল, জনসমাগমপূর্ণ স্থানে নয়। আমাদের সম্প্রদায়কে শেষ করে দেওয়ার চক্রান্ত চলছে। এই মামলা তার সর্বশেষ নমুনা।’

১৯৭৩ সালে আহমদিয়াদের সাংবিধানিক ভাবে ‘অমুসলিম’ এবং ‘অবিশ্বাসী’ বলে ঘোষণা করা হয় পাকিস্তানে। তার পর থেকে গত কয়েক দশক জুড়ে নানামুখী নির্যাতনের শিকার হচ্ছে এই গোষ্ঠী। আর এসব নির্যাতন ঘটছে দেশটির সংখ্যাগুরু মুসলিমদের হাতে।

পাকিস্তানের বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত দেশটিতে কেবল আহমদিয়া হওয়ার কারণে নিহত হয়েছেন ১৩ জন, এবং আহত হয়েছেন আরও ৪০ জন।

২০২১ সালের ২৩ আগস্ট পাকিস্তানের ইতিহাসবিদ ও আইনজীবী ইয়াসির লতিফ হামদানি এক সাক্ষাৎকারে বিবিসি উর্দুর তাহির ইমরান মাইন ও মানবাধিকারকর্মী রাবিয়া মেহমুদকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘পাকিস্তান একদিকে বিশ্বজুড়ে বাড়তে থাকা ইসলামোফোবিয়ার বিরুদ্ধে কথা বলে, অন্যদিকে নিজ দেশে সংখ্যালঘু ও আহমদিয়াদের নির্যাতন-নিপীড়ন করে।

এসএমডব্লিউ