ছবি: রয়টার্স

শ্বাসতন্ত্রের প্রাণঘাতী রোগ করোনা উত্তর কোরিয়া থেকে বিদায়ের পথে রয়েছে। আর অল্প কিছুদিনের মধ্যেই দেশটির জনগণ এই রোগের কবল থেকে মুক্তি পাবেন বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে উত্তর কোরিয়ার সরকারি বার্তাসংস্থা কেসিএনএ।

কেসিএনএর প্রতিবেদনে বলা হয়, এপ্রিলের শেষ থেকে জুনের শেষ পর্যন্ত উত্তর কোরিয়ায় যে ৪ লাখ ৭৭ হাজার মানুষ ‘জ্বরে’ আক্রান্ত হয়েছিলেন, তাদের মধ্যে ৯৯ দশমিক ৯৮ ভাগই সুস্থ হয়ে উঠেছেন।

আন্তর্জাতিক বিশ্ব থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন পূর্ব এশিয়ার এই দেশটিতে দেশটিতে করোনা টেস্ট খুবই কম হওয়ায় এখন পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যায়নি যে মহামারি শুরু হওয়ার পর কতজন মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন কিংবা এই কোভিডজনিত অসুস্থতায় কতজনের মৃত্যু হয়েছে।

তবে কেসিএনএর প্রতিবেদনে সরকারের করোনা সংক্রমণ রোধ বিষয়ক অভিযানকে ‘সফল’ বলে দাবি করে বলা হয়েছে, ‘সরকারের সফল করোনাবিরোধী অভিযানের ফলেই শেষ পর্যন্ত এই সংকটের সমাধান সম্ভব হয়েছে।’

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) অবশ্য উত্তর কোরিয়ার এই দাবির সত্যতা নিয়ে ইতোমধ্যেই সন্দেহ প্রকাশ করেছে। সংস্থার এক কর্মকর্তা এ সম্পর্কে রয়টার্সকে বলেন, ‘(এ দাবির সত্যতা যাচাইয়ের জন্য) কোনো নিরপেক্ষ তথ্য আমাদের কাছে নেই। দ্বিতীয়ত, গত মাসেও উত্তর কোরিয়ার করোনা পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছিল। হঠাৎ এক মাসেরও কম সময়ের মধ্যে রাতারাতি কীভাবে দেশটি করোনাকে বিদায় জানানোর মতো পর্যায়ে পৌঁছে গেল, তা আমাদের বোধগম্য হচ্ছে না।’

উত্তর কোরিয়ার নিকটতম প্রতিবেশী দক্ষিণ কোরিয়ার ধারণা, করোনা সংক্রমণের কারণে বন্ধ থাকা অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড ফের পুরোদমে চালু করতেই এই ঘোষণা দিয়েছে কিম জং উনের নেতৃত্বাধীন উত্তর কোরীয় সরকার।

দক্ষিণ কোরিয়ার থিঙ্কট্যাংক সংস্থা সেজং ইনস্টিটিউটের নর্থ কোরিয়া স্টাডি সেন্টার বিভাগের পরিচালক চিওং সেওং-চ্যাং বলেন, ‘এমন একটি ঘোষণা যে আসতে পারে, তা আমি কয়েক দিন আগেই ধারণা করেছিলাম।’

‘করোনা মহামারি শুরুর পর থেকে সীমান্ত বন্ধ রেখেছে দক্ষিণ কোরিয়া। ফলে দেশটির অর্থনীতি ও বৈদেশিক বাণিজ্য বর্তমানে প্রায় তলানিতে ঠেকেছে। কিম জং উন এখন ফের সীমান্ত খুলে বৈদেশিক বাণিজ্য শুরু করতে চাইছেন। আমার ধারণা, এ কারণেই করোনা বিদায়ের ঘোষণা দিয়েছে দেশটির সরকার।’

গত ১২ মে দেশে প্রথমবারের মতো করোনা প্রাদুর্ভাবের কথা নিশ্চিত করে উত্তর কোরিয়ার সরকারি প্রশাসন। ওই দিন কেসিএনএর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজধানী পিয়ংইয়ংয়ে করোনাভাইরাসের সবচেয়ে সংক্রামক ধরন ওমিক্রন শনাক্ত হয়েছে।

করোনা শনাক্তের খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশজুড়ে লকডাউন জারি করেন উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উন। দক্ষিণ কোরিয়ার বিশেষজ্ঞদের মতে, জনগণ যেন লকডাউন ঠিকমতো মেনে চলে, তা নিশ্চিতে ব্যাপকমাত্রায় তৎপর ছিল কিমের নেতৃত্বাধীন প্রশাসনের কর্মীরা।

গত ২৭ মে চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল— চার মাসের বৈদেশিক বাণিজ্যের বিবরণ সম্বলিত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে বলা হয়, জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারির মধ্যে চীন থেকে কয়েক কোটি মাস্ক, ৩ লাখেরও বেশি করোনা টিকা ও ১ হাজার ভেন্টিলেটর কিনেছে উত্তর কোরিয়া।

তারপর৩০ মে প্রথমবারের মতো টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয় উত্তর কোরিয়ায়।

অবশ্য কেসিএনএর সোমবারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মে মাসের মাঝামাঝি থেকেই উত্তর কোরিয়ায় করোনার দৈনিক সংক্রমণ হ্রাস পাওয়া শুরু করেছিল।

এসএমডব্লিউ