ডলারের বিপরীতে পাকিস্তানি রুপির অবমূল্যায়ন দেশটির যাবতীয় অতীত রেকর্ড ভেঙে ফেলেছে। গত চার দিন ধরে টানা নেমে চলেছে রুপির মান, যার প্রভাবে ধস নেমেছে পাকিস্তানের পুঁজিবাজারে।

ব্যাপক এই অর্থনৈতিক চাপের জন্য দেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতাই দায়ী বলে মনে করেন পাকিস্তানি অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞরা।

চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যম সিনহুয়ার বরাত দিয়ে ভারতের অনলাইন পত্রিকা দ্য প্রিন্ট এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, কয়েকদিন স্থিতাবস্থা থাকার পর সোমবার থেকে ফের পতন শুরু হয়েছে রুপির; এবং টানা চার দিন ধরেই তা চলছে। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার ডলারের বিপরীতে রুপির মান পৌঁছেছে ২২৬ দশমিক ৮১, অর্থাৎ পাকিস্তানে এখন এক ডলার কিনতে গেলে ব্যয় করতে হবে প্রায় ২২৭ রুপি।

১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে স্বাধীনতা লাভের পর গত ৭৫ বছরের ইতিহাসে ডলারের বিপরীতে নিজ দেশের মুদ্রার এই পরিমাণ পতন দেখেনি পাকিস্তান। এদিকে রুপির টানা এ দরপতনের প্রভাবে ব্যাপক চাপে পড়েছে পাকিস্তানের পুঁজিবাজার পাকিস্তান স্টক এক্সচেঞ্জ (পিএসএক্স)। বৃহস্পতিবার পিএসএক্সের সব মূল সূচক লাল তালিকায় (রেড জোন) ছিল।

সিনহুয়ার প্রতিবেদনে বলা হয় বুধবার যাবতীয় লেনদেন শেষে পিএসএক্সের বেঞ্চমার্ক কেসই ১০০ সূচক ৪০ হাজার ৪৫৯ পয়েন্টের ঘরে ছিল। কিন্তু বৃহস্পতিবার ৬২৭ দশমিক ৯৫ পয়েন্ট কমে এই সূচক পৌঁছেছে ৩৯ হাজার ৮৩১ পয়েন্টে।

পাকিস্তানের অর্থনীতিবিদ ও রাজনীতি বিশ্লেষকদের মতে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণ পেতে দেরি হওয়া, বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ অব্যাহতভাবে কমতে থাকা, জঙ্গিবাদে অর্থয়ন বিষয়ক আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক সংস্থা ফিন্যান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্সের (এফটিএফ) ধূসর তালিকায় থাকা ও দেশটির অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে চলমান অস্থিরতাই দেশটিতে উদ্ভূত এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী।

পাকিস্তানের রাজনৈতিক অর্থনীতিবিদ ফারহান বোখারি সিনহুয়াকে বলেন, ‘পাকিস্তান ও আইএমএফের সাম্প্রতিক চুক্তির ভিত্তিতে আইএমএফের ঋণ এলে দেশের বর্তমান এই অর্থনৈতিক চাপ প্রশমিত হবে।’

‘তবে বিদেশি ‍ঋণদাতা বিভিন্ন সংস্থা পাকিস্তানের ওপর আস্থা করতে পারে— সেই ব্যবস্থা যদি সরকার না নেয়, অর্থাৎ সরকারি নীতিতে যদি প্রয়োজনীয় সংস্কার না আসে, তবে এই প্রশমন টেকসই হবে না।’

এদিকে, পাকিস্তানের ব্যবসায়ীদের সংস্থা ফেডারেশন অব পাকিস্তান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফপিসিসি) শঙ্কা—শ্রীলঙ্কায় বর্তমানে যে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে, পাকিস্তানের অর্থনীতিও সে পথেই যাচ্ছে এবং দেশটিতে শ্রীলঙ্কার মতো অচলাবস্থা তৈরি হওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র।

এফপিসিসিআইয়ের প্রেসিডেন্ট ইরফান ইকবাল শেখ সিনহুয়াকে বলেন, ‘শ্রীলঙ্কায় বর্তমান যে পরিস্থিতি, তা থেকে আমরা দূরে নেই। সরকার যদি দ্রুত কোনো ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে দিন দিন অবস্থা আরও খারাপ হবে।’

পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় অর্থ ও রাজস্ব মন্ত্রী মিফতাহ ইসমাইল বুধবার এক বিবৃতিতে বলেছেন, রুপির বর্তমান যে দরপতন— সেজন্য অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা নয়, বরং রাজনৈতিক অস্থিরতাই দায়ী।

এসএমডব্লিউ