গত ৬ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের আইনসভা ক্যাপিটল হিলে হামলার সময় ‘যুদ্ধের প্রস্তুতি’ ছিল ট্রাম্প সমর্থকদের। যুক্তরাষ্ট্রের আইনসভা কংগ্রেসের এক শুনানিতে এই তথ্য জানিয়েছেন হামলার দিন ক্যাপিটল হিলে নিরপত্তার দায়িত্বে থাকা চার পুলিশ কর্মকর্তা।

সিনেটের মঙ্গলবারের (২৩ ফেব্রুয়ারি) শুনানিতে সাক্ষ্য দেওয়ার সময় ক্যাপিটল পুলিশের সাবেক প্রধান স্টিভেন সুন্ড বলেন, ওইদিন ক্যাপিটল হিল পুলিশের ‘বিক্ষোভ’ সামলানোর প্রস্তুতি ছিল; কিন্তু ট্রাম্পের সমর্থকেরা সেদিন যা করেছেন, তাকে স্বতঃস্ফূর্ত বিক্ষোভ না বলে ‘পরিকল্পিত ও সমন্বিত সামরিক হামলা’ বলাই অধিক যুক্তিযুক্ত।

যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যান্ড গভর্নমেন্টাল অ্যাফেয়ার্স কমিটির উদ্যোগে এই শুনানি চলছে। কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটের সদস্য অ্যামি ক্লোবুশার এই শুনানি পরিচালনা করছেন।

হামলার পর চাকরি থেকে পদত্যাগ করা ক্যাপিটল পুলিশ বাহিনীর চার সাবেক কর্মকর্তা মঙ্গলবার শুনানিতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। এরা হলেন—ক্যাপিটল পুলিশ বাহিনীর সাবেক প্রধান ডেভিড সুন্ড, সাবেক পুলিশ ক্যাপ্টেন কার্নিয়েশা মেন্ডোজা, হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভসের সাবেক সার্জেন্ট-অ্যাট-আর্মস পল আরভিং এবং সাবেক সিনেটের সাবেক সার্জেন্ট-অ্যাট-আর্মস মাইকেল স্টেংগার।

শুনানিতে সাক্ষ্য দেওয়ার সময় ডেভিড সুন্ড জানান, ক্যাপিটল হিলে প্রবেশের আগেই ভবনের চারপাশে নিরাপত্তা কর্মীদের লক্ষ্য করে পাইপ বোমা ছুঁড়েছিলেন ট্রাম্পের সমর্থকরা; যার ফলে কিছু সময়ের জন্য ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় পুলিশের নিরাপত্তা বলয়।

তিনি বলেন, ‘আমি আমার জীবনে যত বিক্ষোভকারী দেখেছি, তাদের কারোর সঙ্গেই ওইদিনের ঘটনার কুশীলবদের (ট্রাম্প সমর্থক) আচরণ মেলানো যাবে না। আমরা একটি বিক্ষোভ সামলানোর প্রস্তুতি নিয়ে অপেক্ষা করছিলাম, কিন্তু সেদিন যা ঘটেছে— তাকে বিক্ষোভ না বলে পরিকল্পিত ও সমন্বিত সামরিক হামলা বলাই যুক্তিযুক্ত।’

‘দাঙ্গাকারীদের কারণে যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তার জন্য ক্যাপিটল পুলিশের দুর্বল প্রস্তুতির দায় যতখানি, তারচেয়েও অনেক বেশি দায়ী যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা ব্যবস্থার দায়িত্বে থাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলো।’

তিনি জানান, দাঙ্গার তিন দিন আগেই, ৩ জানুয়ারি এ বিষয়ে দেশটির পুলিশ বিভাগকে সতর্ক করে প্রতিবেদন দিয়েছিল ক্যাপিটল পুলিশের অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা বিভাগ। প্রতিবেদনের অনুলিপি হাতে পাওয়ার পর কংগ্রেসের শীর্ষ নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের তা অবহিতও করেছিলেন তিনি, কিন্তু তখন কেউ তার কথা ‘বিশ্বাস’ করেনি।

কার্নিয়েশা মেন্ডোজা শুনানিতে সাক্ষ্য দেওয়ার সময় বলেন, ‘আমি এই বিভাগে কাজ করেছি প্রায় ১৯ বছর। আমার দীর্ঘ পেশাজীবনে ও ব্যক্তিগত জীবনে যত নিকৃষ্ট পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছি, সেদিনের ঘটনা ছিল সবচেয়ে নিকৃষ্ট, বলা যায় নিকৃষ্টের মধ্যেও নিকৃষ্ট।’

দাঙ্গাকারীরা সেদিন মেন্ডোজাসহ অনেক পুলিশ সদস্যকে লক্ষ্য করে রাসায়নিক পদার্থ ছুড়েছিলেন, যার ফলে তাদের ত্বক পুড়ে গেছে। ক্যাপিটল পুলিশের সাবেক ক্যাপ্টেন জানান, তিনি এখনও ওই ক্ষত থেকে সম্পূর্ণ সুস্থ হননি।  

মেন্ডোজা বলেন, ‘সেদিন ক্যাপিটল হিলে যতসংখ্যক পুলিশ সদস্য ছিলেন, দাঙ্গাকারীদের সংখ্যা ছিল অন্তত তার দশগুন; এবং আমি বিশ্বাস করি ক্ষয়ক্ষতি যা হয়েছে, তা আরও বেশি হতে পারত।’

সাবেক দুই সার্জেন্ট-অ্যাট-আর্মস পল আরভিং এবং মাইকেল স্টেংগার উভয়ই নিজ নিজ সাক্ষ্যে বলেন, ‘আমরা সবাই এ বিষয়ে একমত যে যুক্তরাষ্ট্রের আইনশৃঙখলা বাহিনীর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো ক্যাপিটল পুলিশকে সহযোগিতা করেনি। সেদিন তারা যদি তাদের সদস্যদের পাঠাতেন, ক্ষয়ক্ষতি অনেক কম হতো।’

চার সাবেক পুলিশ কর্মকর্তার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে অ্যামি ক্লোবুশার জানান, আসছে সপ্তাহে পেন্টাগন ও হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সার্ভিস কর্মকর্তাদের সাক্ষ্য নেওয়া হবে।

গত ৬ জানুয়ারি ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটল ভবনে যুক্তরাষ্ট্রের আইনপ্রণেতারা যখন নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জো বাইডেনের জয় আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদন করতে এক যৌথ অধিবেশনে বসেছিলেন, ঠিক তখনই ট্রাম্পের শত শত সমর্থক কংগ্রেসের ক্যাপিটল ভবনে ঢুকে পড়েন।

সেদিন সকালের বেশ আগেই হাজার হাজার ট্রাম্প সমর্থক ‘আমেরিকা বাঁচাও’ নামের একটি গণজমায়েত কর্মসূচিতে অংশ নিতে ওয়াশিংটনে এসেছিলেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ওই জনসভায় ভাষণ দিয়ে জো বাইডেনের বিজয় অনুমোদন করার বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখেন।

এরপরই সমাবেশস্থল থেকে একটু দূরে একটু দূরে কয়েক হাজার ট্রাম্প সমর্থক ক্যাপিটল ভবনে নিরাপত্তা ব্যারিকেড ভেঙে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হন। একপর্যায়ে কংগ্রেসের অধিবেশন চলার মধ্যেই পুলিশের বাধা ভেঙে ক্যাপিটল ভবনে ঢুকে পড়েন ট্রাম্প সমর্থকরা। এ সময় তাদের অধিকাংশের হাতে ছিল ট্রাম্পের পতাকা।

সেদিন ট্রাম্পের সমর্থক ও হামলাকরীদের সংঘাতে দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ ৬ জন নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন আরো ১৩ জন।

সূত্র: বিবিসি

এসএমডব্লিউ