বিশ্বজুড়ে চলমান করোনাভাইরাস মহামারির মাঝে পশ্চিম আফ্রিকার দেশ ঘানায় প্রাণঘাতী মারবার্গ নামের আরেকটি ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। দেশটিতে ইবোলা ভাইরাসের মতো অতি-সংক্রামক এই ভাইরাসে আক্রান্ত এক শিশু মারা গেছে বলে মঙ্গলবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে।

গত মাসে ঘানায় প্রথমবারের মতো এই রোগের প্রাদুর্ভাব শনাক্ত হয়। সেই সময় এই ভাইরাস দুজনের শরীরে ধরা পড়ে। পরে দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় আশান্তি অঞ্চলের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তারা। ফলে এনিয়ে দেশটিতে মোট তিনজনের প্রাণ কাড়ল মারবার্গ।

মারবার্গের এই প্রাদুর্ভাব পশ্চিম আফ্রিকার দুটি দেশে শনাক্ত হয়েছে। গত বছর ওই অঞ্চলে প্রথমবারের মতো ভাইরাসটির সংক্রমণ ধরা পড়ে গিনিতে। নতুন করে এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ায় স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মাঝে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।

প্রাণঘাতী এই ভাইরাস ফলখেকো বাদুড়ের মাধ্যমে মানবদেহে সংক্রমণ ঘটায়। পরে শরীরের তরলের মাধ্যমে মানুষ থেকে মানুষে এই ভাইরাস ছড়ায়। ভাইরাসটি মাথাব্যথা, জ্বর, পেশী ব্যথা, রক্ত বমি ​​এবং রক্তপাতের মতো গুরুতর সমস্যা তৈরি করে। অনেক সময় মারাত্মক অসুস্থতা ডেকে আনে।

সর্বশেষ মৃত শিশুটির লিঙ্গ অথবা বয়স প্রকাশ করা হয়নি। তবে গত সপ্তাহে দেশটিতে দুজনের মারবার্গ শনাক্ত হয়েছে বলে জানিয়েছিল ডব্লিউএইচও। মৃত শিশুটি সেই দুই রোগীর একজন।

ডব্লিউএইচওর চিকিৎসক ইব্রাহিমা সোসি ফাল সাংবাদিকদের বলেছেন, গত সপ্তাহে আমি আরও দুজনের মারবার্গ শনাক্তের কথা বলেছিলাম। এর মধ্যে একজন হলেন নারী এবং অপরজন তার শিশু সন্তান। দুর্ভাগ্যজনকভাবে শিশুটি মারা গেছে। তবে ওই নারী এখনও বেঁচে আছেন এবং তার শরীরের উন্নতি হচ্ছে।

ঘানার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দেশটিতে মাত্র তিনজন মারবার্গ রোগী শনাক্তের তথ্য নিশ্চিত করেছে। এছাড়া সন্দেহভাজন চতুর্থ রোগীর আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা বাকি আছে বলে জানিয়েছেন সোসি।

এর আগে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছিল, দেশটির আশান্তি অঞ্চলে প্রথম যে দুই রোগী শনাক্ত হয়েছিলেন তাদের উভয়েরই ডায়রিয়া, জ্বর, বমি বমি ভাব এবং বমির মতো কিছু উপসর্গ ছিল। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায়ই তারা মারা যান।

অতীতে আফ্রিকার অ্যাঙ্গোলা, কঙ্গো, কেনিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং উগান্ডায় মারবার্গ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব এবং বিক্ষিপ্ত সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছিল বলে জানিয়েছে ডব্লিউএইচও। তবে ১৯৬৭ সালে বিশ্বে প্রথমবার এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছিল জার্মানিতে। সেই সময় দেশটিতে এই ভাইরাসে অন্তত সাতজনের প্রাণহানি ঘটে।

২০০৫ সালে মারবার্গের প্রাদুর্ভাবে অ্যাঙ্গোলায় ২০০ জনের বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটে। ডব্লিউএইচও বলছে, এটাই ছিল এ যাবৎকালের সবচেয়ে প্রাণঘাতী মারবার্গ প্রাদুর্ভাব।

মারবার্গ ভাইরাসের কোনও চিকিৎসা এখনও আবিষ্কার হয়নি। তবে চিকিৎসকরা বলছেন, পর্যাপ্ত পানি পান এবং নির্দিষ্ট উপসর্গের চিকিৎসার মাধ্যমে একজন রোগীর বাঁচার সম্ভাবনা বৃদ্ধি করা যায়।

সূত্র: রয়টার্স।

এসএস