তাইওয়ানের চারদিকে সামরিক মহড়া চালাচ্ছে চীন। মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির সফরের জেরে শুরু হওয়া এই মহড়ায় তাইওয়ান প্রণালীতে দূরপাল্লার একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়েছে চীনা সামরিক বাহিনী।

এর মধ্যে বেশ কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্র ভূখণ্ডটির রাজধানী তাইপের ওপর দিয়ে উড়ে গেছে। আর এরপরই শুক্রবার (৫ আগস্ট) চীনকে ‘মন্দ প্রতিবেশী’ আখ্যা দিয়ে এর নিন্দা জানিয়েছে তাইওয়ান। শুক্রবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ন্যান্সি পেলোসির সফরের জেরে বৃহস্পতিবার থেকে তাইওয়ানের চারপাশে বেশ কয়েকটি পয়েন্টে সামরিক মহড়া শুরু করে চীন। তাজা গোলাবারুদ ব্যবহার করে চালানো এই মহড়ায় চীনা সেনারা তাইওয়ানের আশপাশের জলসীমায় একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে।

চীনের সর্বকালের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ এই সামরিক মহড়া থেকে নিক্ষিপ্ত এসব ক্ষেপণাস্ত্রের মধ্যে অন্তত চারটি ক্ষেপণাস্ত্র দ্বীপের রাজধানী তাইপের ওপর দিয়ে উড়ে যায়। এরপর শুক্রবার ভূখণ্ডটির সরকার তার ‘মন্দ প্রতিবেশী’র নিন্দা করে। 

রয়টার্স বলছে, চীনের এই সামরিক মহড়ার ওপর নজর রাখছে জাপানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। তারাই প্রথম জানায়, চীনা মহড়ার সময় চারটির মতো ক্ষেপণাস্ত্র তাইওয়ানের রাজধানীর ওপর দিয়ে উড়ে গেছে।

পূর্ব এশিয়ার এই দেশটি আরও বলেছে, জাপানি ভূখণ্ডের দিকে ছোঁড়া নয়টির মধ্যে পাঁচটি ক্ষেপণাস্ত্র জাপানের এক্সক্লুসিভ ইকনোমিক জোনে পড়েছে। এই ঘটনার কূটনৈতিক প্রতিবাদ জানায় টোকিও।

পরে তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, সামরিক মহড়ার সময় চীনের নিক্ষেপ করা ক্ষেপণাস্ত্রগুলো বায়ুমণ্ডলে বেশ উচুতে ছিল এবং এটি কোনো হুমকি সৃষ্টি করেনি। তবে গোয়েন্দা উদ্বেগের কারণে সেসব ক্ষেপণাস্ত্র ঠিক কোন পথ দিয়ে উড়ে গেছে সে বিষয়ে বিস্তারিত বিবরণ দেয়নি তাইওয়ান।

চীনের ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে এটিকে (চীন) ‘মন্দ প্রতিবেশী’ হিসাবে উল্লেখ করেন তাইওয়ানের প্রধানমন্ত্রী সু সেং-চ্যাং। শুক্রবার রাজধানী তাইপেতে সাংবাদিকদের কাছে তিনি অভিযোগ করেন, নির্বিচারে সামরিক মহড়ার মাধ্যমে বিশ্বের সর্বাধিক ব্যবহৃত জলপথ ধ্বংস করছে চীন।

চীনের এই কর্মকাণ্ড প্রতিবেশী দেশগুলোতে এবং বিশ্বজুড়ে নিন্দা করা হচ্ছে বলেও দাবি করেন সু।

বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া চীনা সামরিক বাহিনীর এই মহড়া চলবে রোববার দুপুর পর্যন্ত। অবশ্য চীন বরাবরই বলেছে, তাইওয়ানের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক একটি অভ্যন্তরীণ বিষয়।

উল্লেখ্য, তাইওয়ান ইস্যুতে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র-সহ পশ্চিমা দেশগুলোর দীর্ঘদিন ধরেই উত্তেজনা চলছে। তাইওয়ান পূর্ব এশিয়ার একটি দ্বীপ, যা তাইওয়ান প্রণালীর পূর্বে চীনা মূল ভূখণ্ডের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে অবস্থিত। অবশ্য তাইওয়ানকে বরাবরই নিজেদের একটি প্রদেশ বলে মনে করে থাকে বেইজিং।

গত বছরের অক্টোবরে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেছিলেন, মূল ভূখণ্ডের সাথে তাইওয়ানের পুনরেকত্রীকরণ অবশ্যই সম্পূর্ণ করতে হবে। এজন্য সামরিক পথে অগ্রসর হওয়ার বিষয়টিও খোলা রেখেছে বেইজিং।

অন্যদিকে চীনের প্রদেশ নয়, বরং নিজেকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র বলে মনে করে থাকে তাইওয়ান। চীনা প্রেসিডেন্টের এমন মন্তব্যের জবাবে সেসময় তাইওয়ান জানায়, দেশের ভবিষ্যৎ তার জনগণের হাতেই থাকবে।

তবে তাইওয়ানকে চীনের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত করতে বেইজিংয়ের চেষ্টার কমতি নেই। তাইওয়ান উপত্যাকার চারদিকে সামরিক কর্মকাণ্ড জোরদার করেছে চীন। এমনকি গত বছরের মতো চলতি বছরের শুরু থেকেই তাইওয়ানের এয়ার ডিফেন্স আইডেন্টিফিকেশন জোন (এডিআইজেড) লঙ্ঘন করে আসছে বৈশ্বিক এই পরাশক্তি দেশটি।

প্রসঙ্গত, ১৯৪৯ সালে চীনে কমিউনিস্টরা ক্ষমতা দখল করার পর তাইওয়ান দেশটির মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। যদিও তাইওয়ানকে বরাবরই নিজেদের একটি প্রদেশ বলে মনে করে থাকে বেইজিং। এরপর থেকে তাইওয়ান নিজস্ব সরকারের মাধ্যমে পরিচালিত হয়ে আসছে।

টিএম