জার্মানি ও বেলজিয়ামের কাস্টমস কর্তৃপক্ষ দু’টি দেশের অন্যতম বৃহৎ দুই সমুদ্রবন্দর হামবুর্গ ও অ্যান্টওয়ার্প থেকে ২৩ টনেরও বেশি কোকেন জব্দ করেছে। ইউরোপে এই প্রথম কোকেনের এত বড় চালান জব্দ করা হলো বলে জানিয়েছেন দু’দেশের কাস্টমস কর্মকর্তারা।

জার্মানির হামবুর্গ সমুদ্রবন্দর বিভাগের কাস্টমস কর্তৃপক্ষ আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে জানিয়েছে, স্থানীয় সময় বুধবার বন্দরে দক্ষিণ আমেরিকার দেশ প্যারাগুয়ে থেকে আসা একটি মালবাহী জাহাজের পাঁচটি শিপিং কন্টেইনার থেকে ১ হাজার ৭০০টি প্রক্রিয়াজাত খাবারের টিনের বাক্স বা কৌটা জব্দ করেন কাস্টমস কর্মকর্তারা।

তারপর সেই বাক্সগুলো খোলা হয়। খোলার পর দেখা যায় ভেতরে আঠা দিয়ে লাগানো বিশেষ ফিল্টারের ভেতর রাখা আছে কোকেনের প্যাকেট। সবগুলো টিনের বাক্স থেকে উদ্ধার হয় মোট ১৬ টন কোকেন।

অন্যদিকে একই দিনে কাছাকাছি সময়ে বেলজিয়ামের অ্যান্টওয়ার্প বন্দরের কয়েকটি শিপিং কন্টেইনার থেকে ৭.২ টন কোকেন জব্দ করেন ওই বন্দরের কাস্টমস কর্মকর্তারা।    

কোকেন বিশ্বের অন্যতম দামী মাদক হিসেবে স্বীকৃত। হামবুর্গে যে পরিমাণ কোকেন উদ্ধার হয়েছে, আন্তর্জাতিক বাজারে তার মূল্য কয়েক বিলিয়ন ইউরো— উল্লেখ করে হামবুর্গ কাস্টমস কর্মকর্তারা বিবিসিকে বলেন, প্যারাগুয়ে থেকে নেদারল্যান্ডসগামী যে মালবাহী জাহাজটি থেকে উদ্ধার হয়েছে কোকেনগুলো, সেটি চলতি মাসের শুরুতে হামবুর্গ বন্দরে এসে পৌঁছেছিল। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে স্থানীয় সময় বুধাবর তারা ওই জাহাজে অভিযান চালান।

বেলজিয়ামে জব্দ হওয়া কোকেনগুলোর সন্ধানও একইভাবে পাওয়া গেছে; তবে যে জাহাজের কন্টেইনার থেকে সেগুলো উদ্ধার করা হয়েছে, সেটি পানামা থেকে নেদারল্যান্ডসের পথে যাত্রা করেছিল। মাসখানেক আগে সেটি অ্যান্টওয়ার্পে নোঙ্গর করে। জাহাজটির কয়েকটি কন্টেইনার থেকে বেশ কয়েকটি কাঠের প্যাকিং বাক্স উদ্ধার হয়। সেগুলো খোলার পরই কোকেনের সন্ধান পান তারা।

এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে নেদারল্যান্ডসে ২৮ বছর বয়সী এক যুবককে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করেছে দেশটির পুলিশ।

হামবুর্গ সমুদ্রবন্দরের কাস্টমস কর্মকর্তা রেনে ম্যাটক্স এএফপি নিউজকে বলেন, ‘এ পর্যন্ত ইউরোপে যত কোকেনের চালান জব্দ করা হয়েছে— তার মধ্যে এটি সর্ববৃহৎ। শুধু হামবুর্গে যে পরিমাণ কোকেন উদ্ধার হয়েছে— তার বাজারমূল্যই দেড় থেকে সাড়ে তিন বিলিয়ন ইউরো (১ দশমিক ৮- ৪ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার।’

তিনি জানান, ব্রাজিলভিত্তিক কয়েকটি মাদকপাচার গ্যাং ইউরোপে কোকেন ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। এই গ্যাংগুলো মধ্যে সবচেয়ে সক্রিয়টির নাম ফার্স্ট ক্যাপিটাল কমান্ড (পিএসসি)। প্রতিবেশী দেশ প্যারাগুয়েকে এই গ্যাংগুলো তাদের প্রধান ট্রানজিট রুট হিসেবে ব্যবসহার করে।

প্যারাগুয়ে থেকে কোকেনের চালান প্রথম আসে নেদারল্যান্ডসে। তারপর সেখান থেকে ছড়িয়ে পড়ে ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলোতে।

গতবছর অক্টোবরে অ্যান্টওয়ার্পে একটি মালবাহী জাহাজ থেকে সাড়ে ১১ টন কোকেন জব্দ করেছিল বন্দরটির কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। প্যারাগুয়ে থেকে এসেছিল জাহাজটি। তার আগের বছর ২০১৯ সালে হামবুর্গের একটি জাহাজে অভিযান চালিয়ে সয়াবিনের টিনভর্তি একটি কন্টেইনার থেকে সাড়ে চার টন কোকেন জব্দ করেছিল হামবুর্গ কাস্টমস।

সূত্র: বিবিসি

এসএমডব্লিউ