উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উন (ফাইল ছবি)

বিশ্বব্যাপী টানা দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে করোনাভাইরাস মহামারি চললেও একমাত্র উত্তর কোরিয়াই ছিল ‘করোনা মুক্ত’ দেশ। তবে গত মে মাসে পূর্ব এশিয়ার এই দেশটিতে করোনা সংক্রমণ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। সেসময় দেশটিতে প্রতিদিনই বহু মানুষ ‘অজানা জ্বরে’ আক্রান্ত হয়েছেন।

উত্তর কোরিয়ার সাধারণ মানুষের মতো কোভিড প্রাদুর্ভাবের সময় ‘জ্বরে’ আক্রান্ত হয়েছিলেন দেশটির সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উনও। এমনকি তিনি ‘গুরুতর অসুস্থ’ হয়ে পড়েছিলেন বলেও জানিয়েছেন কিমের বোন কিম ইয়ো-জং। বৃহস্পতিবার (১১ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উত্তর কোরিয়ার কিম জং উন কোভিড প্রাদুর্ভাবের সময় ‘জ্বরে’ আক্রান্ত হন বলে তার বোন জানিয়েছেন। বোন কিম ইয়ো-জং বলেন, তার ভাই ‘গুরুতর অসুস্থ’ হয়ে পড়লেও দেশের মানুষের কথা চিন্তা করে দায়িত্বপালন অব্যাহত রেখেছিলেন।

মূলত ইয়ো-জংয়ের এই বক্তব্যের মাধ্যমে কোভিড প্রাদুর্ভাবের সময় কিম অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন বলে প্রথমবারের মতো তথ্য সামনে এলো। এছাড়া তার এই অসুস্থতা ভাইরাসজনিত ছিল বলেই মনে করা হচ্ছে।

সংবাদমাধ্যম বলছে, কিমের অসুস্থতার খবর এমন এক সময়ে সামনে এলো যখন উত্তর কোরিয়ার এই নেতা কোভিডের বিরুদ্ধে দেশের যুদ্ধে বিজয় ঘোষণা করেছেন। উত্তর কোরিয়ার সরকারি সংবাদমাধ্যম দ্য কোরিয়ান সেন্ট্রাল নিউজ এজেন্সি (কেসিএনএ) জানিয়েছে, বুধবার স্বাস্থ্যকর্মী এবং বিজ্ঞানীদের সাথে একটি বৈঠকে বক্তৃতায় ভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ‘উজ্জ্বল বিজয়’ ঘোষণা করেন কিম।

এসময় দেশে করোনা বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়ার পাশাপাশি মাত্র ৭৪ জনের ভাইরাসজনিত মৃত্যুর ‘অলৌকিক ঘটনা’কেও স্বাগত জানান উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ এই নেতা।

মূলত পরমাণু অস্ত্র কর্মসূচির জন্য ব্যাপকভাবে নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়ে বাকি বিশ্ব থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন উত্তর কোরিয়ার চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা এবং ভ্যাকসিনের অভাব নিয়ে প্রথম থেকেই উদ্বেগ ছিল। এর সঙ্গে যোগ হয় করোনা শনাক্তকরণ পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের অপ্রতুলতা। আর এ কারণেই করোনাভাইরাস শব্দ ব্যবহারের পরিবর্তে ‘জ্বর’ উল্লেখ করে দেশটি।

রাষ্ট্রীয় বার্তাসংস্থা কেসিএনএ’র প্রকাশিত একটি রিপোর্টে বলা হয়, কোভিড প্রাদুর্ভাবের সময় ‘জ্বরে’ আক্রান্ত হয়ে কিম জং উনের গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ার খবরটি সামনে আনেন তারই বোন কিম ইয়ো-জং। উত্তর কোরিয়ার ক্ষমতা কাঠামোয় অত্যন্ত প্রভাবশালী এই নারী তার ভাইয়ের প্রশংসাও করেন।

তিনি বলেন: ‘যদিও তিনি (কিম) প্রচণ্ড জ্বরে গুরুতর অসুস্থ ছিলেন, তবুও তিনি এক মুহূর্তের জন্যও শুয়ে থাকতে পারেননি কারণ কিম জনগণের কথা ভাবছিলেন। মহামারির বিরুদ্ধে লড়াইরত মানুষের যত্নের কথা ভেবেছেন।’

এসময় উত্তর কোরিয়ায় করোনা ছড়িয়ে পড়ার দায় দক্ষিণ কোরিয়ার ঘাড়েও চাপান কিম ইয়ো-জং। তিনি বলেন, দক্ষিণ কোরিয়া বাতাসে উড়িয়ে উত্তরে পাঠানো বেলুনের কারণেই দেশে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছিল। আর তাই এগুলোকে ‘মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ’ বলেও আখ্যায়িত করেন তিনি।

ইয়ো জং সতর্ক করে বলেন, করোনা ছড়িয়ে দেওয়ার দায়ে দক্ষিণ কোরিয়ার বিরুদ্ধে ‘একটি শক্তিশালী প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ’ নেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করছে পিয়ংইয়ং। তিনি আরও বলেন, এই ধরনের বেলুন পাঠানো অব্যাহত থাকলে, ‘আমরা কেবল ভাইরাস নয়, দক্ষিণ কোরিয়ার কর্তৃপক্ষকেও নির্মূল করে দেবো।’

কেসিএনএ দাবি করেছে, চলতি বছরের এপ্রিলের শেষ থেকে উত্তর কোরিয়ায় ৪৮ লাখ করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে মারা গেছেন মাত্র ৭৪ জন। পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেশটিতে মৃত্যুর হার ০.০০২%। যা পুরো বিশ্বের মধ্যে সর্বনিম্ন।

অনেক বিশেষজ্ঞ এই পরিসংখ্যান বিশ্বাস করা কঠিন বলে মনে করেন। তারা বলছেন, বিশ্বের অন্যতম খারাপ স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা রয়েছে উত্তর কোরিয়ায়। পূর্ব এশিয়ার এই দেশটিতে খুবই কম সরঞ্জামে সজ্জিত হাসপাতাল, কয়েকটি নিবিড় পরিচর্যা ইউনিট (আইসিইউ) রয়েছে। এছাড়া দেশটিতে করোনা চিকিৎসার ওষুধ বা ভ্যাকসিনও নেই।

এমনকি দেশটি মহামারি চলাকালীন কোনো টিকাদান কর্মসূচি চালুও করেনি। টিকাদানের পরিবর্তে লকডাউন জারি ও দেশীয় চিকিৎসার ওপর নির্ভর করেই মহামারির ‘অবসান’ ঘোষণা করেছে উত্তর কোরিয়া।

টিএম