বুকার পুরস্কারজয়ী সাহিত্যিক সালমান রুশদির ওপর ছুরি হামলার ঘটনায় উদ্বেগ বোধ করছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত নির্বাসিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে তা প্রকাশও করেছেন তিনি।

শুক্রবার রাত সাড়ে ১১ টার দিকে এক টুইটবার্তায় তসলিমা নাসরিন বলেন, ‘এইমাত্র জানতে পারলাম, নিউইয়র্কে সালমান রুশদি হামলার শিকার হয়েছেন। আমি হতবাক; এমন ঘটতে পারে, কখনও ভাবতেও পারিনি। তিনি দীর্ঘদিন ধরে পশ্চিমে বসবাস করে আসছিলেন, এবং সুরক্ষা পেয়ে আসছিলেন সেই ১৯৮৯ সাল থেকে। যদি তার ওপর হামলা হয়, সেক্ষেত্রে ইসলামকে সমালোচনার দৃষ্টিতে দেখা যে কেউই হামলার শিকার হতে পারেন। আমার দুশ্চিন্তা হচ্ছে।’

যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের এক অনুষ্ঠানের মঞ্চে ছুরি হামলার শিকার হন ভারতীয় বংশোদ্ভূত উপন্যাসিক সালমান রুশদিন। স্থানীয় সময় শুক্রবার সকালে নিউ ইয়র্কের শাটাকোয়া ইনস্টিটিউটে এক অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দিতে গিয়েছিলেন বুকারজয়ী এই লেখক। যখন তাকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হচ্ছিল, তখনই এক লোক দৌড়ে স্টেজে উঠে ছুরি নিয়ে তার ওপর হামলা চালায়।

৭৫ বছর বয়সী রুশদির ঘাড়ে ও শরীরে জখম হয়েছে বলে নিউ ইয়র্ক পুলিশ জানিয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে তাকে হেলিকপ্টারে করে পেনসেলভেইনিয়ার ইরি হাসপাতালে নেওয়া হয়।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, রুশদির ঘাড়ে ও পেটে অন্তত একবার করে ছুরিকাঘাত করা হয়েছে। বর্তমানে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে আছেন তিনি।

তার বইয়ের এজেন্ট অ্যান্ড্রু ওয়াইলি এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, রুশদিকে ভেন্টিলেটরে রাখা হয়েছে এবং তিনি কথা বলতে পারছেন না; রুশদি এক চোখ হারাতে পারেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।

১৯৮৮ সালে প্রকাশিত স্যাটানিক ভার্সেস উপন্যাসের জন্য তিন দশকের বেশি সময় ধরে হত্যার হুমকি পেয়ে আসছিলেন এর লেখক রুশদি।

বিবিসি জানিয়েছে, এ ঘটনায় পুলিশ হাদি মাতার (২৪) নামের এক সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করেছে। সে নিউ জার্সির ফেয়ারভিউয়ের বাসিন্দা; একটি পাস কিনে অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশ করেছিল।

তবে ঠিক কী কারণে হাদি মাতার এই হামলা করল (হামলার মোটিভ), সে সম্পর্কে এখনও কোনো মন্তব্য করেনি নিউ ইয়র্ক পুলিশ।

বিষয়টির সমালোচনা করে তসলিমা নাসরিন বলেন, ‘তিনি (রুশদি) দীর্ঘদিন ধরে কট্টর ইসলামপন্থীদের লক্ষ্যবস্তু ছিলেন এবং তাদেরই একজন তার ওপর হামলা চালিয়েছে। এ ব্যাপারটি স্বীকার করতে লোকজনের এত রাখঢাক কেন?’

আহমেদ সালমান রুশদির জন্ম ১৯৪৭ সালে মুম্বাইয়ে এক কাশ্মিরি মুসলিম পরিবারে, ভারত ভাগের ঠিক আগে আগে। ১৯৮১ সালে তার দ্বিতীয় উপন্যাস ‘মিডনাইটস চিলড্রেন’ প্রকাশিত হলে লেখক হিসেবে তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে।

১৯৮৮ সালে প্রকাশিত রুশদির চতুর্থ উপন্যাস ‘স্যাটানিক ভার্সেস’ বিশ্বজুড়ে বিতর্কের জন্ম দেয়। বিভিন্ন দেশে মুসলমানদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।

বিক্ষোভ আর সহিংসতার মধ্যে বহু দেশে বইটি নিষিদ্ধ করে, রুশদির জন্মস্থান ভারতের সরকারই প্রথম সেই সিদ্ধান্ত নেয়।

ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ খোমেনি সে সময় এই লেখকের মৃত্যুদণ্ডের ফতোয়া ঘোষণা করেন। রুশদির মাথার দাম ঘোষণা করা হয় ৩০ লাখ ডলার। ইরানের সেই ঘোষণা এখনও বহাল আছে।

পরবর্তীতে ইরান সরকার খোমেনির ওই ঘোষণার বিষয়ে আর আগে না বাড়লেও সরকার সমর্থিত একটি ধর্মীয় ফাউন্ডেশন ২০২১ সালে পুরস্কারের ওই অংকের সঙ্গে আরও ৫ লাখ ডলার যোগ করার ঘোষণা দেয়।

ভারতের একটি মুসলিম পরিবারে জন্ম হলেও রুশদি নিজেকে একজন নিরীশ্বরবাদী হিসেবেই পরিচয় দেন। মত প্রকাশের স্বাধীনতার একজন কট্টর সমর্থক তিনি।

এসএমডব্লিউ