৩৮ বছর পর তুষার-সমাধি থেকে ভারতীয় সেনার মরদেহ উদ্ধার
স্বাধীনতার ৭৫ বছর উপলক্ষে ‘অমৃত মহাৎসব’ উদযাপন করছে ভারত। এ দিনে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করছে ভারতবাসী। আর সেই সময়ই ৩৮ বছরের দীর্ঘ অপেক্ষা শেষ হলো উত্তরাখণ্ডের হলদওয়ানির এক পরিবারের। খোঁজ মিলল ভারতকে সুরক্ষিত করতে নিজের সর্বস্ব ত্যাগ করা এক নায়কের। ১৯৮৪ সালে ‘অপারেশন মেঘদূত’ এর মাধ্যমে কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাশ্মিরের সিয়াচেন হিমবাহ দখল করেছিল ভারতীয় সেনাবাহিনী। তবে অভিযানে গিয়ে হারিয়ে যান ল্যান্স নায়েক চন্দ্র শেখর।
শনিবার (১৩ আগস্ট) এই হিমবাহের একটি পুরোনো বাঙ্কার থেকে মিলল তার দেহাবশেষ।
বিজ্ঞাপন
চন্দ্র শেখরের স্ত্রীর বয়স এখন ৬৫ বছর। তার দুই কন্যাও আছে। ১৯৮৪ সালে যখন পাহাড়ের বুকে হারিয়ে গিয়েছিলেন ল্যান্স নায়েক তখন তাদের বয়স খুব কম ছিল। ছোট মেয়ের বয়স ছিল মাত্র ৪, বড় মেয়ের ৮ বছর। বাবার হারিয়ে যাওয়ার কথা তাদের সেভাবে মনে না থাকলেও মায়ের সঙ্গে তারাও বাবার জন্য গত ৩৮ বছর ধরে অপেক্ষা করছিলেন। আর অপেক্ষায় ছিলেন চন্দ্র শেখরের ইউনিটের আরও বেশ কয়েকজন সঙ্গী। অবশেষে এখন তারা ল্যান্স নায়েককে বিদায় জানাতে চলেছেন। এর জন্য তার বাসভবনে একটি বড় সমাবেশের আয়োজন করা হচ্ছে। সেখানেই ল্যান্স নায়েকের দেহাবশেষ আনা হবে।
আরও পড়ুন: আইফেল টাওয়ারের চেয়েও উঁচু রেল সেতু কাশ্মীরে
কী ঘটেছিল ল্যান্স নায়েক চন্দ্র শেখরের সঙ্গে
পাক অধিকৃত কাশ্মির এবং চীন অধিকৃত কাশ্মির– দুই জায়গার উপরেই নজরদারির জন্য কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলো সিয়াচেন হিমবাহ। চীন-পাকিস্তানের অর্থনৈতিক করিডোরও এই হিমবাহের কাছ দিয়েই গেছে। সিয়াচেন দখলে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল পয়েন্ট ৫৯৬৫। পাকিস্তানিদের নজর ছিল এই এলাকাটির ওপর। পাকিস্তানিদের আগে ওই এলাকাটি দখল করার জন্য ভারতীয় সেনাবাহিনীর ১৯ কুমায়ুন রেজিমেন্টের একটি দলকে সেখানে পাঠানো হয়েছিল। এই দলেরই অংশ ছিল ল্যান্স নায়েক চন্দ্র শেখর। ‘অপারেশন মেঘদূত’ এর অন্যতম প্রথম পদক্ষেপ ছিল এই অভিযান।
— Subodh Srivastava (@SuboSrivastava) August 14, 2022
১৯৮৪ সালের ২৯ মে তাদের সেখানে পাঠানো হয়েছিল। পয়েন্টটি দখল করার পর রাতে তারা সেখানে ছিলেন। কিন্তু ভারতীয় সেনাবাহিনীর সেই সেনারা ওই রাতে প্রবল তুষারধসের মুখে পড়েছিলেন। সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট পিএস পুন্ডির-সহ ১৮ জন ভারতীয় সেনা সদস্য ওই ঘটনায় নিহত হয়েছিলেন। ১৪ জনের মরদেহ পাওয়া গেলেও চার জন নিখোঁজ ছিলেন। তাদেরই একজন ছিলেন ল্যান্স নায়েক চন্দ্র শেখর।
মূলত গ্রীষ্মকালে তুষার গলে যায়। এসময়ে অনেক হারিয়ে যাওয়া সেনাদেরই খোঁজ চলে সুউচ্চ পার্বত্য এলাকায়। গত ১৩ আগস্ট সিয়াচেনে ১৬,০০০ ফুটেরও বেশি উচ্চতায় অনুসন্ধান অভিযান চালানো সম্ভব হয়েছিল। সেই সুযোগেই একটি পুরোনো বাঙ্কারে এক ভারতীয় সেনার কঙ্কালের দেহাবশেষ পাওয়া যায়।
ভারতীয় সেনাবাহিনীর এক কর্মকর্তা বলেন, গ্রীষ্মের মাসগুলোতে তুষার গলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নিখোঁজ সৈন্যদের শনাক্ত করার জন্য টহলদার বাহিনীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। সিয়াচেন হিমবাহের একটি পুরোনো বাঙ্কারের ভেতরে একটি কঙ্কালের দেহাবশেষ পাওয়া যায়।
দেহাবশেষের সঙ্গে সেনাবাহিনীর নম্বর দেওয়া একটি ধাতব চাকতিও পাওয়া গেছে। ওই নম্বর দেখেই শনাক্ত করা গেছে ওই দেহাবশেষ আর কারোর নয়, ৩৮ বছর ধরে নিখোঁজ থাকা ল্যান্স নায়েক চন্দ্র শেখরের।
এসএসএইচ