মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ফ্ল্যাট দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন দেশটির কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হরদীপ সিং পুরি। বুধবার (১৭ আগস্ট) তার এ সংক্রান্ত টুইটের পরই সৃষ্টি হয়েছে দ্বন্দ্ব।

শরণার্থীদের ফ্ল্যাট ইস্যুতে বিরোধিতা করে ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকারের সঙ্গে কার্যত লড়াইয়ে নেমেছে দিল্লির রাজ্য সরকার। বৃহস্পতিবার (১৮ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।

সংবাদমাধ্যম বলছে, মিয়ানমার থেকে ভারতে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ফ্ল্যাট দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে তর্কযুদ্ধে জড়িয়েছে কেন্দ্রীয় বিজেপি সরকার ও দিল্লির ক্ষমতাসীন রাজ্য সরকার। বুধবার থেকেই দিল্লির ক্ষমতাসীন আম আদমি পার্টি (আপ) বিজেপি সরকারের সমালোচনায় লিপ্ত হয়। অন্যদিকে রোহিঙ্গাদের বসবাসের জায়গাকে ডিটেনশন সেন্টার ঘোষণা করা নিয়ে গড়িমসির জন্য আপ সরকারের সমালোচনা করেছে বিজেপি।

তবে কেন্দ্রীয় সরকারকে আক্রমণ করতে আম আদমি পার্টির নেতারা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হরদীপ সিং পুরীর বুধবার করা রোহিঙ্গাদের ফ্ল্যাট সংক্রান্ত টুইটকে হাতিয়ার করেছেন। সেই টুইটে রোহিঙ্গাদের ফ্ল্যাট দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়েছিল।

টুইটারে দেওয়া এক বার্তায় আবাসন ও নগর বিষয়ক এই মন্ত্রী বলেন, ‘আশ্রয় চাওয়া মানুষদের ভারত সর্বদাই স্বাগত জানিয়েছে।’ এছাড়া নয়াদিল্লিতে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য নতুন বিধানের রূপরেখাও দিয়েছিলেন তিনি।

হরদীপ সিং পুরি আরও বলেন, ‘১৯৫১ সালের জাতিসংঘের শরণার্থী কনভেনশনকে সম্মান করে ভারত। জাতি, ধর্ম বা বর্ণ নির্বিশেষে সকলকে আশ্রয় দিই আমরা।’

যদিও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মন্ত্রীর টুইটের দাবিকে নস্যাৎ করে জানায় ‘অবৈধ বিদেশি’ রোহিঙ্গাদের কোনো ফ্ল্যাট দেওয়া হবে না। বিপরীতে তারা এখন দিল্লির যে এলাকায় রয়েছেন, সেই এলাকাকে ডিটেনশন ক্যাম্প ঘোষণার জন্যও দিল্লি সরকারকে নির্দেশ দেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

হরদীপ সিং পুরীর টুইটের পরই কেন্দ্রীয় সরকারের সমালোচনা করে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের নেতৃত্বাধীন দিল্লি সরকারের অভিযোগ, রাজধানীতে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ‘গোপনে স্থায়ী বাসিন্দা’ করার চক্রান্ত চলছে।

দিল্লির উপ-মুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিসোদিয়া পুরীর টুইটকে উদ্ধৃত করে লেখেন, ‘সকালে কেন্দ্র এই খবরকে নিজেদের কৃতিত্ব হিসাবে তুলে ধরতে ক্লান্তি বোধ করছিল না। কিন্তু আপের প্রতিবাদের পর দিল্লি সরকারের ওপর দোষ চাপানোর চেষ্টা করছে কেন্দ্র। কিন্তু বিষয় হলো কেন্দ্রীয় সরকার গোপনে রোহিঙ্গাদের দিল্লির স্থায়ী বাসিন্দা বানানোর চেষ্টা চালাচ্ছে।’

তিনি আরও বলেছেন, ‘কেন্দ্রীয় সরকার এবং লেফটেন্যান্ট গভর্নরের ইশারায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীকে তা না দেখিয়েই লেফটেন্যান্ট গভর্নরের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। রোহিঙ্গাদের অবৈধ ভাবে দিল্লির বাসিন্দা বানানোর চক্রান্ত মানবে না দিল্লি সরকার।’

অন্যদিকে রোহিঙ্গাদের নিয়ে আবার দিল্লি সরকারকে দুষেছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। ডিটেনশন ক্যাম্প নিয়ে দিল্লির সরকারের গড়িমসিকে অভিযুক্ত করেছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

সংবাদমাধ্যম বলছে, দিল্লির মদনপুর খাদারের কাঞ্চন কুঞ্জ এলাকায় অধিকাংশ রোহিঙ্গা বসবাস করেন। সেখানে প্রায় ২৫০টি পরিবারে ১ হাজার ১০০ রোহিঙ্গা থাকেন। সেই এলাকাকে ডিটেনশন ক্যাম্প ঘোষণার জন্য দিল্লি সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্র। কিন্তু দিল্লি সরকার তা করছে না বলে অভিযোগ তুলেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেছেন, ‘ওই এলাকার রোহিঙ্গারা প্রায়ই বিভিন্ন দিকে চলে যায়। আর তাই ওই এলাকাকে ডিটেনশন ক্যাম্প ঘোষণা করলে রোহিঙ্গাদের ওপর নজর রাখার কাজে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার অনেক সুবিধা হবে। ক্যাম্পের মধ্যে তাদের চলাফেরায় কোনো বাধা থাকবে না। ফলে দিল্লি পুলিশ সহজেই যাচাইয়ের কাজ করতে পারবে।’

ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য, আইন অনুযায়ী অবৈধ বিদেশিদের ডিটেনশন ক্যাম্পে রাখার কথা। কিন্তু দিল্লি সরকার তা করতে ব্যর্থ হয়েছে। এ নিয়ে ওই কর্মকর্তা বলেছেন, ‘অনেক দিন ধরে আমরা ওই এলাকাকে ডিটেনশন ক্যাম্প ঘোষণা করার জন্য দিল্লি সরকারকে বলে আসছি। এমনকি তা দ্রুত করার জন্যও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’

টিএম