সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে তিন সপ্তাহের বেশি সময় ধরে বিক্ষোভে উত্তাল মিয়ানমারে পুলিশের গুলিতে আজও এক বিক্ষোভকারীর প্রাণহানি ঘটেছে। জাতিসংঘে নিযুক্ত দেশটির রাষ্ট্রদূত অভ্যুত্থানকারীদের থামাতে ‘যে কোনও ব্যবস্থা’ নেওয়ার আহ্বান জানানোর পর শনিবার পুলিশের গুলিতে একজন নারী নিহত হয়েছেন বলে খবর দিয়েছে ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

গত ১ ফেব্রুয়ারি সামরিক বাহিনী অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাগ্রহণের পর থেকে অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে মিয়ানমার। অভ্যুত্থানের পর দেশটির নির্বাচিত নেত্রী অং সান সু চি ও তার দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসির (এনএলডি) নেতাকর্মীদের আটক করে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী। গত ৮ নভেম্বর দেশটিতে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জালিয়াতির মাধ্যমে এনএলডি জয়ী হয়েছে বলে অভিযোগ করে অভ্যুত্থানের পক্ষে সাফাই গাইছে সেনাবাহিনী।

এদিকে, দেশটির নেত্রী অং সান সু চি এখন কোথায় আছেন তা নিয়ে অনিশ্চয়তা বাড়ছে। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম মিয়ানমার নাউ শুক্রবার এনএলডির কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে বলেছে, চলতি সপ্তাহে সু চিকে গৃহবন্দি থেকে অজ্ঞাত স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

দেশটিতে অভ্যুত্থানের পর লাখ লাখ মানুষ রাস্তায় নেমে সামরিক জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু করেন; যা তিন সপ্তাহ পর এখনও অব্যাহত আছে। পশ্চিমা বিশ্বের বিভিন্ন দেশ মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের নিন্দা জানানোর পাশাপাশি বেশ কিছু নিষেধাজ্ঞাও আরোপ করেছে।

ইয়াঙ্গুন-সহ দেশটির যেসব এলাকায় বিক্ষোভকারীরা অবস্থান নেন, শনিবার সকাল থেকেই পুলিশ সেসব স্থান দখলে নেয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, শনিবার বেশ কয়েকজন বিক্ষোভকারীকে আটক করেছে পুলিশ। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন গণমাধ্যম কর্মীও রয়েছেন।

স্থানীয় তিনটি গণমাধ্যম বলছে, শনিবার মনওয়া শহরের প্রাণকেন্দ্রে পুলিশের গুলিতে একজন নারী নিহত হয়েছেন। তবে এ ব্যাপারে তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশের কোনও মন্তব্য পাওয়া যায়নি। এর আগে এই শহরে বিক্ষোভে অংশ নেওয়া একজন বলেন, শনিবার বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে জল কামান ছুড়েছে পুলিশ।

মনওয়ার বাসিন্দা আয়ে আয়ে রয়টার্সকে বলেন, শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে জল কামান ব্যবহার করেছে পুলিশ। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের এ ধরনের আচরণ করা উচিত নয়।

অন্যদিকে, ইয়াঙ্গুনে পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে লোকজন রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করছেন। এ সময় তারা জান্তাবিরোধী বিভিন্ন ধরনের স্লোগান ও গান গেয়ে শহরের রাস্তায় রাস্তায় অবস্থান নেন। 

বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ টিয়ার গ্যাস, স্টান গ্রেনেড এবং ফাঁকা গুলি ছোড়ে। একই ধরনের দৃশ্য দেখা গেছে দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম শহনর মান্দালয়সহ আরও বেশ কয়েকটি শহরে।

মিয়ানমারের জান্তা প্রধান জেনারেল মিন অং হ্লেইং বলেছেন, কর্তৃপক্ষ সর্বনিম্ন বলপ্রয়োগ করছে। কিন্তু গত কয়েক সপ্তাহের বিক্ষোভে পুলিশি সহিংসতায় দেশটিতে অন্তত তিন বিক্ষোভকারীর প্রাণহানি ঘটেছে। সহিংসতায় পুলিশের এক সদস্যও নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে সেনাবাহিনী।

এসএস