পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী রাজনৈতিক দল পাকিস্তান তেহরিক-ই ইনসাফের (পিটিআই) প্রধান ইমরান খান বলেছেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারি এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ শক্তিশালী ও দেশপ্রেমিক সেনাপ্রধানকে ভয় পান।

মূলত সেনাপ্রধান দেশপ্রেমিক হলে বিদেশে লুট করা অর্থের জন্য নাওয়াজ-জারদারিকে জবাবদিহি করতে পারেন এমন শঙ্কা তাদের রয়েছে বলে দাবি ইমরানের। সোমবার (৫ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল।

রোববার এক জনসভায় ভাষণ দেওয়ার সময় ইমরান খান বলেন, চলতি বছরের নভেম্বরে পাকিস্তানে নতুন সেনাপ্রধান নিয়োগ হতে চলেছে এবং তারা (জারদরি ও নওয়াজ) যৌথভাবে পরবর্তী সেনাপ্রধান হিসাবে তাদের একজন প্রিয় (জেনারেলকে) নিয়োগ করতে চাচ্ছেন।

ইমরান দাবি করেন, জারদরি ও নওয়াজ উভয়েই কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি করেছে এবং তারা এমন একজন সেনাপ্রধান নিয়োগ করতে চায় যিনি তাদের এবং তাদের দুর্নীতিকে সুরক্ষা দিতে পারবে।

পিটিআই প্রধান অভিযোগ করেন, প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ, তার ভাই ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি জনসাধারণের অর্থ পাচারে জড়িত এবং এই দুই পরিবার গত ৩০ বছর ধরে পাকিস্তানের জাতীয় কোষাগার লুট করে চলেছে।

তিনি আবারও দাবি করেন, শুধুমাত্র নতুন নির্বাচনই পাকিস্তানে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার অবসান ঘটাতে পারে। তিনি দেশের প্রকৃত স্বাধীনতা অর্জনের জন্য তরুণদের তার ডাকের জন্য প্রস্তুত থাকতে বলেন।

টানা দুই মাস ধরে বড় ধরনের বন্যা মোকাবিলা করছে পাকিস্তান। ভয়াবহ এই বন্যায় ইতোমধ্যেই প্রায় ১৩শ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। আর এই বন্যার জন্য জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবকে দায়ী করা হচ্ছে।

রোববার ফয়সালাবাদের এই সমাবেশে ইমরান খান বলেন, পিটিআই সরকার পাকিস্তানে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কমাতে ১০ বিলিয়ন গাছ রোপণ করেছে। আমাদের আরও বাঁধ নির্মাণ করতে হবে। আমাদের সরকার ১০টি বাঁধ নির্মাণ করেছিল। এছাড়া এই ধরনের বিপর্যয় এড়াতে সারা দেশে একটি সঠিক নিষ্কাশন ব্যবস্থা দরকার বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

ইমরান খান দাবি করেন, ‘আমরা যখন ২০১৮ সালে নির্বাচনী প্রচারণার জন্য ফয়সালাবাদে আসি, তখন শহরের মানুষ বেকারত্বের মুখোমুখি হয়েছিল এবং টেক্সটাইল শিল্পগুলোও বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল। পিটিআই সরকারের সাড়ে ৩ বছরে, ফয়সালাবাদের টেক্সটাইল শিল্পের উন্নয়ন করা হয়েছে, এখানকার লোকেরা কর্মসংস্থান পেয়েছে এবং কৃষকরা সময়মতো অর্থ হাতে পেয়েছে।’

তবে গত চার মাসে জাতীয় অর্থনীতি ধ্বংসের জন্য বর্তমান সরকারকে দায়ী করেছেন পিটিআই প্রধান। তিনি বলেন, ম্যানচেস্টারের মতো পাকিস্তানের শিল্প শহর ছিল ফয়সালাবাদ। তিনি প্রতিশ্রুতি দেন, পিটিআইকে আবার দেশ শাসন করার সুযোগ দেওয়া হলে ফয়সালাবাদে কারখানা স্থাপন করা হবে এবং লোকেরা কর্মসংস্থান পাবে।

উল্লেখ্য, গত এপ্রিলে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে দেশজুড়ে রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ করে আসছেন ইমরান খান। এসব সমাবেশে তিনি ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতা থেকে বিতাড়িত হয়েছেন বলেও অভিযোগ করেন। এ নিয়ে দেশটির রাজনীতিতে উত্তাপ বিরাজ করছে।

মূলত, আগামী বছরের অক্টোবরে পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচন ঘিরে দেশজুড়ে নির্বাচনী সমাবেশ করছেন ইমরান খান। তার এসব সমাবেশ ঘিরে দেশটিতে রাজনৈতিক উত্তেজনা তুঙ্গে রয়েছে। তবে ইমরান খান বলছেন, তার জনপ্রিয়তায় ভীত হয়ে পড়েছে সরকার।

টিএম