ছবি : হাফপোস্ট ইউকে

যুক্তরাজ্যের নতুন প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাসকে অভিনন্দন জানিয়েছেন এই দৌড়ে তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী রিশি সুনাক। ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ (টোরি) পার্টির সব নেতাকর্মীকে নতুন প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি।

সোমবার এক টুইটবার্তায় ভারতীয় বংশোদ্ভূত এই টোরি এমপি বলেন, ‘আমি বরাবরই বলে এসেছি— কনজারভেটিভরা সবাই এক পরিবারের সদস্য। এখন আমাদের উচিত দেশের নতুন প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাসের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হওয়া। দেশের এক কঠিন পরিস্থিতিতে তিনি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়েছেন।’

লকডাউনের বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে মদের পার্টি কেলেঙ্কারি, উচ্চ মূল্যস্ফীতিসহ বিভিন্ন ইস্যুতে প্রচণ্ড চাপের মুখে থাকা বরিস জনসন গত ৭ জুলাই ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে অব্যাহতি নিতে বাধ্য হন। তার পদত্যাগের পর শুরু হয় দেশটির পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী বাছাইয়ের প্রক্রিয়া।

যুক্তরাজ্যের সংবিধান অনুযায়ী, কোনো প্রধানমন্ত্রী যদি তার মেয়াদ পূর্ণ করার আগেই ক্ষমতাচ্যুত হন, সেক্ষেত্রে সরকারি দলের আগ্রহী প্রার্থীরা প্রধানমন্ত্রীর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য এগিয়ে যান।  ক্ষমতাসীন দলের অন্তত দুই জন আইনপ্রণেতার সমর্থন রয়েছে— এমন যে কোনো পার্লামেন্ট সদস্য বর্তমান পরিস্থিতিতে নিজেকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করতে পারেন।

নতুন প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থীদের তারপর যেতে হয় বেশ কয়েক দফা ভোটে। যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট হাউস অব কমন্সের সরকারি দলের আইনপ্রণেতারা গোপন ব্যালটে ভোট দেবেন। সেসব ভোটের ফলাফলের গড় হিসাব করে যে প্রার্থী সবচেয়ে কম ভোট পাবেন, তার প্রার্থিতা বাতিল হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত প্রার্থীর সংখ্যা ২ জনে এসে না ঠেকছে ততক্ষণ চলতেই থাকবে এই ভোট।

শীর্ষ দুই প্রার্থী চুড়ান্ত হওয়ার পর তারা সমর্থন চাইবেন পার্লামেন্টের বাইরে সরকারি দলের যত সদস্য রয়েছেন তাদের। যে প্রার্থী সবচেয়ে বেশি সমর্থন লাভ করবেন, তিনিই হবেন যুক্তরাজ্যের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী।

লিজ ট্রাসের পূর্বসূরী প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনও এভাবেই প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। ২০১৯ সালে কনজারভেটিভ পার্টির নেত্রী ও দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী টেরিজা মে’র পদত্যাগের পর দলের এমপি ও সদস্যদের সমর্থন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী হন জনসন।

সরকারি দলের আইন প্রণেতাদের ভোটে একটি বড় সময় পর্যন্ত এগিয়ে ছিলেন তিন জন— রিশি সুনাক, লিজ ট্রাস এবং বর্তমান সরকারের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিষয়ক মন্ত্রী পেনি মরডাউন্ট। তবে এক পর্যায়ে মরডাউন্ট এই দৌড় থেকে ছিটকে পড়েন, টিকে থাকেন ট্রাস ও সুনাক।

পার্লামেন্ট সদস্যদের ভোটপর্ব শেষ হয় বেশ আগেই; এবং সেই ভোটের ফলাফলে সুনাক এগিয়ে ছিলেন। তিনি পেয়েছিলেন ১৩৭ ভোট, আর ট্রাস পান ১১৩ ভোট।

পার্লামেন্টের বাইরে সরকারি দলের যেসব ভোটার আছেন, তাদের ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে গত শুক্রবার। এই ভোটারদের মোট সংখ্যা ১৭ লাখ ২ হাজার ৪৩৭ জন।

সোমবার সেই ভোটের ফলাফল প্রকাশের পর দেখা গেছে ৮১ হাজার ৩২৬টি ভোট পেয়েছেন ট্রাস, আর সুনাকের ভাগে পড়েছে ৬০ হাজার ৩৯৯ টি ভোট। এছাড়া বাতিল হয়েছে ৬৫৪টি ভোট।

ফলে ৪২ বছর বয়সী সুনাকের চেয়ে ২০ হাজার ৯২৭টি ভোট বেশি পেয়ে যুক্তরাজ্যের তৃতীয় নারী প্রধানমন্ত্রী হলেন ৪৭ বছর বয়সী লিজ ট্রাস। তার আগের দুই নারী প্রধানমন্ত্রী হলেন টেরিজা মে ও মার্গারেট থ্যাচার। তারা দু’জনেই কনজারভেটিভ পার্টির ছিলেন।

সূত্র: পিটিআই

এসএমডব্লিউ