যমজ সন্তানের জন্ম দিয়েছেন মা। পরিবারের নতুন এই সদস্যদের নিয়ে সবার আনন্দে মেতে থাকার কথা। কিন্তু জন্মের আগেই সন্তানের পিতৃত্ব নিয়ে সন্দেহ এবং সেখান থেকে ডিএনএ টেস্ট। আর এতেই বেরিয়ে এলো সত্য। এরপর আসল ঘটনা সামনে আনলেন ওই নারী।

ঠিক কী সেই ঘটনা? মূলত যমজ ওই দুই সন্তানের বাবা দুই ভিন্ন পুরুষ। অর্থাৎ ওই দুই সন্তান দু’জন ভিন্ন বাবার ঔরসজাত! এমনটাও কি হয়? হ্যাঁ শুনে বিস্মিত হওয়াটাই স্বাভাবিক। কিন্তু, কোনো গল্পকথা নয়। বাস্তবেই এমন ঘটনাই ঘটেছে।

আরও পড়ুন: নারী সহকর্মীর সঙ্গে প্রেম নিয়ে ২ কনস্টেবলের লড়াই, গুলিবর্ষণ

বুধবার (৭ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইল জানিয়েছে, ব্রাজিলে ১৯ বছর বয়সী এক নারী একই দিনে দুই ভিন্ন পুরুষের সঙ্গে যৌন মিলনের পরে যমজ দুই সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। তাদের পিতা ওই দুই ভিন্ন পুরুষ।

১৯ বছরের ওই নারী ব্রাজিলের গোইয়াস প্রদেশের ছোট্ট শহর মিনিরোসের বাসিন্দা। গর্ভধারণের আট মাস পর গর্ভে থাকা যমজ সন্তানের আসল বাবা কে সেটি নিয়ে তার মনে সন্দেহ হয়। পরে সেই সন্দেহ দূর করতে যে দুই পুরুষের সঙ্গে তিনি যৌন মিলন করেছিলেন, তাদের একজনের ডিএনএ পরীক্ষা করান তিনি।

এই নারীর দৃঢ় বিশ্বাস ছিল, ওই ব্যক্তিই তার দুই পুত্রসন্তানের জৈবিক বাবা হবেন। কিন্তু ফলাফল যা আসে তা অবিশ্বাস্য। ডিএনএ’র ফলাফলে দেখা যায়, দুই পুত্র সন্তানের মধ্যে একজনের সঙ্গে তার ডিএনএ মিলছে, অপরজনের সঙ্গে নয়।

আরও পড়ুন: বয়স্কভাতা পাচ্ছেন না, খোঁজ নিয়ে বৃদ্ধ জানলেন তিনি বেঁচে নেই

স্থানীয় নিউজ পোর্টাল গ্লোবো’কে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই নারী বলেন: ‘ডিএনএ পরীক্ষার ফল দেখে আমি খুবই অবাক হয়েছিলাম। এরকম যে ঘটতে পারে, সেই সম্পর্কে আমার কোনো ধারণাই ছিল না। বাচ্চারাও দেখতে একেবারে একই রকম।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রথম পুরুষের সঙ্গে এক সন্তানের ডিএনএ’র মিল না পাওয়ায় আমি অবাক হই। এরপর আমার মনে পড়ে, ওই একই দিন আমি অন্য এক পুরুষের সঙ্গেও যৌন সম্পর্ক করেছিলাম। এরপর, তাকে ডিএনএ পরীক্ষা করার জন্য ডাকি আমি। তার ডিএনএ-র সঙ্গে, আমার অপর সন্তানের ডিএনএ মিলে গেছে।’

১৯ বছর বয়সী এই মা বলছেন, আমি এই ফলাফলে বিস্মিত। আমি জানতামই না, এমন কোনো ঘটনা ঘটতে পারে।

তবে শেষ পর্যন্ত ওই যমজ পুত্র সন্তানের জন্মের নিবন্ধনপত্রে মায়ের সঙ্গে উভয় সন্তানের বাবা হিসেবে প্রথম পুরুষটির নামই নিবন্ধিত করা হয়েছে। ওই নারী বলছেন, ‘তিনি (প্রথম পুরুষ) তাদের দুজনেরই (দুই সন্তানের) অত্যন্ত যত্ন নেন। তাদের লালন পালনে আমায় খুবই সাহায্য করেন। ওদের প্রয়োজনীয় সকল সহায়তাও দেন।’

আরও পড়ুন: রাষ্ট্রবিজ্ঞান পরীক্ষায় ১০০ নম্বরের মধ্যে ১৫১ পেলেন শিক্ষার্থী

সংবাদমাধ্যম বলছে, অস্বাভাবিক গর্ভাবস্থা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা করছেন চিকিৎসক ও গবেষক টুলিও জর্জ ফ্রাংকো। তিনি বলছেন, এই নারীর ক্ষেত্রে যেটা ঘটেছে, তা অত্যন্ত বিরল এক গর্ভাবস্থা। তিনি এটিকে ‘ওয়ান ইন আ মিলিয়ন’ বা প্রতি দশ লাখে একবার ঘটে এমন ঘটনা বলে আখ্যায়িত করেছেন। বৈজ্ঞানিক পরিভাষায় একে বলে ‘হেটেরোপ্যারেন্টাল সুপারফেকুন্ডেশন’।

সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেছেন, ‘একই মায়ের দু’টি ডিম্বানু, ভিন্ন দুই পুরুষের শুক্রাণু দ্বারা নিষিক্ত হলে এই ধরনের গর্ভধারণের ঘটনা ঘটে। শিশুরা মায়ের জেনেটিক উপাদান ভাগ করে নেয়, কিন্তু তারা ভিন্ন প্লাসেন্টায় বেড়ে ওঠে। এই ক্ষেত্রে ওই নারীর গর্ভাবস্থা খুবই মসৃণ ছিল, কোনো জটিলতা ছিল না। দুই পুত্রসন্তানই সুস্থভাবে জন্মগ্রহণ করেছে এবং তাদের কোনো স্বাস্থ্যগত সমস্যাও ছিল না।’

আরও পড়ুন: প্লেনের খাবারে মিলল সাপের কাটা মাথা, ভিডিও ভাইরাল

এই ঘটনাটি খুবই বিরল এবং মানব ইতিহাসে এখন পর্যন্ত নথিভুক্ত হওয়া ২০তম ‘হেটেরোপ্যারেন্টাল সুপারফেকুন্ডেশনের’ ঘটনা বলেও জানিয়েছেন তিনি।

স্থানীয় মিডিয়ার বরাত দিয়ে ডেইলি মেইল জানিয়েছে, যমজ ওই শিশুর বয়স এখন ১৬ মাস। তবে ডা. ফ্রাংকো শুধুমাত্র চলতি সপ্তাহে এই ঘটনার বিষয়ে কথা বলেছেন। এছাড়া বর্তমানে ওই দুই বাবার একজন উভয় সন্তানের দেখাশোনা করেন এবং তাদের মাকেও সহযোগিতা করছেন।

তবে অন্য পুরুষটি এখন আর তাদের জীবনে কোনো ভূমিকা রাখছেন কিনা তা স্পষ্ট নয় বলে জানিয়েছে নিউইয়র্ক পোস্ট

টিএম