পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান এবং দেশটির সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া (ফাইল ছবি)

পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়ার মেয়াদ শেষ হচ্ছে চলতি বছরের শেষের দিকে। বাজওয়ার পর পরমাণু শক্তিধর এই দেশটির নতুন সেনাপ্রধান কে হতে চলেছেন তা নিয়ে ইতোমধ্যেই পাকিস্তানের রাজনীতিতে উত্তাপ দেখা দিয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে নতুন একটি পরিকল্পনা উত্থাপন করেছেন পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী রাজনৈতিক দল পাকিস্তান তেহরিক-ই ইনসাফের (পিটিআই) প্রধান ইমরান খান। এতে তিনি আপাতত বাজওয়াকেই মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও সেনাপ্রধান পদে বহাল রাখার কথা বলেছেন।

মঙ্গলবার (১৩ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের সেনাপ্রধান পদে জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়াকে আগামী নির্বাচন এবং নতুন সরকার প্রতিষ্ঠা করা পর্যন্ত রাখতে মেয়াদ বাড়ানো উচিত বলে মত দিয়েছেন ইমরান।

সোমবার একটি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ইমরান খান প্রশ্ন করেন, ‘(ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে) ৮৫টি আসন নিয়ে একজন পলাতক (রাজনীতিক) কীভাবে সেনাপ্রধান নির্বাচন করতে পারে? তারা (বর্তমান সরকার) নির্বাচনে জিতলে নতুন সেনাপ্রধান বেছে নিতে পারবে, আমার কোনো সমস্যা নেই।’

অনুষ্ঠান সঞ্চালক ইমরানকে প্রশ্ন করেন, ‘(সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার) ৯০ দিন পর নির্বাচন হবে কারণ তার আগে এটা সম্ভব নয়। তাহলে  জেনারেল বাজওয়ার অবসর নেওয়ার দিন কী হওয়া উচিত বলে মনে করেন আপনি?’

জবাবে ইমরান খান বলেন, ‘এর উপায় খুঁজে পাওয়া যাবে; এটি কোনো বড় বিষয় না। দেশের উন্নতির জন্য (মেয়াদ বাড়ানোর) বিধান পাওয়া যাবে। আইনজীবীরা আমাকে বলেছেন, নতুন সরকারকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়ে উপায় খুঁজে বের করা যাবে।’

জেনারেল বাজওয়ার মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়ে আবারও প্রশ্ন করা হলে ইমরান বলেন, ‘...আমি শুধু বলছি যে, দেশ অভূতপূর্ব পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছে। এই সময় আমাদের দেশকে সংকট থেকে বের করার জন্য কী সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার সেটি চিন্তা করা উচিত।’

তিনি আরও বলেন, যারা বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন তারা জ্বালানির দাম বাড়াতে চলেছে এবং যদি রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার সৃষ্টি হয়, তবে কেউ অর্থনীতি পরিচালনা করতে সক্ষম হবে না বলে আমরা সতর্ক করেছি।

ইমরান খান জোর দিয়ে বলেন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা না আসলে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাও আসবে না। তিনি আরও বলেন, আপনি যদি প্রথম পদক্ষেপ না নেন, তবে আপনার কোনো সুযোগ নেই। আর যদি অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জিত না হয় এবং পাকিস্তান খেলাপি (রাষ্ট্রে পরিণত) হয়, তাহলে পাকিস্তানের নিরাপত্তা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

পিটিআই চেয়ারম্যান বলেছেন, ব্যাপক বৃষ্টির কারণে সাম্প্রতিক এই বন্যা হয়েছে এবং এই বন্যার কারণে পাকিস্তানের খাদ্য নিরাপত্তাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারণ ফসল নষ্ট হয়ে গেছে এবং সময়মতো মাটি না শুকালে গম চাষ করা সম্ভব হবে না বলে আশঙ্কা রয়েছে।

অবিলম্বে নির্বাচন আয়োজনের বিষয়ে যে দাবি পিটিআইয়ের রয়েছে সে বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ইমরান বলেন, নির্বাচন একদিকে যেমন (সব দলগুলোর জন্য) একটি পরীক্ষা, অন্যদিকে দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে।

সাবেক এই পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রীর ভাষায়, ‘আমরা যখন ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিলাম, তখন পাকিস্তানি বন্ডের ওপর বৈশ্বিক স্তরে ছাড় ছিল ৪ শতাংশ, যা এখন ৫০ শতাংশে পৌঁছেছে। আর কারণেই পাকিস্তানের খেলাপি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’

তিনি অভিযোগ করেন, সরকার যেভাবে এগোচ্ছে তাতে তাদের কোনো সমাধান নেই এবং নির্বাচন দিয়েই কেবল দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আসতে পারে। তিনি উল্লেখ করেন, একদিকে বন্যা, অন্যদিকে ঋণ খেলাপি হলে আরও বড় বিপর্যয় ঘটতে চলেছে।

ইমরান খান বলেন, তিনি যা করবেন তা সংবিধানের আওতায় থাকবে। তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘তাদের আমাকে একটি রোডম্যাপ দেওয়া উচিত যে তারা কী পদক্ষেপ নেবে যা দিয়ে সামনে আলোর দেখা মিলবে। এই লোকেরা যত বেশি সময় সরকারে থাকবে, পাকিস্তান আরও গভীর সমস্যায় নিমজ্জিত হবে।’

এছাড়া চলমান এই বন্যার প্রকৃত প্রভাব শীতকালে দেখা যাবে বলেও জানান সাবেক এই তারকা ক্রিকেটার।

টিএম