থিসিস নকল করে পিএইচডি ডিগ্রি, অবশেষে ধরা খেলেন অধ্যাপক
পিএইচডি ডিগ্রি নিয়েছেন অন্য গবেষকের থিসিস হুবহু নকল করে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে ধরা পড়ে জালিয়াতি। তার জেরেই অভিযুক্ত গবেষককে ডিন পদ থেকে অপসারণ করা হয়েছে। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত অধ্যাপক।
জানা গেছে, থিসিস নকল করার অভিযোগ উঠেছে ভারতের কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক দেবপ্রসাদ শিকদারের বিরুদ্ধে। তিনি দু’বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা অনুষদের ডিন পদে কর্মরত। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাতত্ত্ব বিভাগের অধীনে ১৯৯৯ সালের মার্চ মাসে ‘এ কম্পারেটিভ স্টাডি অব টিচিং বায়োলজি ইন ডিফারেন্ট কোর্সেস অ্যাট হায়ার সেকেন্ডারি লেভেল ইন ওয়েস্ট বেঙ্গল’ শীর্ষক শিরোনামে একটি থিসিস বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিয়েছিলেন দেবপ্রসাদ। ওই বছরই তিনি পিএইচডি ডিগ্রি পেয়ে যান। এরপর অধ্যাপক হিসেবে নিজের কাজ চালিয়ে যান। বছর দুয়েক আগে তিনি শিক্ষাতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষা অনুষদের ডিন হয়েছেন।
বিজ্ঞাপন
অধ্যাপক দেবপ্রসাদ শিকদার অন্যের থিসিস নকল করেছেন— এমন অভিযোগ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে আনেন অধ্যাপক শান্তিনাথ সরকার। অভিযোগ, ১৯৯৫ সালে অধ্যাপক স্বদেশরঞ্জন সামন্ত ‘অ্যা কম্পারেটিভ স্টাডি অব টিচিং ফিজিক্স ইন ডিফারেন্ট কোর্সেস অ্যাট দা হায়ার সেকেন্ডারি লেবেলস ইন ওয়েস্ট বেঙ্গল’ নামে থিসিস পরীক্ষকদের কাছে জমা দিয়েছিলেন এবং সেটা মূল্যায়িত হয়েছিল। থিসিস জালিয়াতি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে আরটিআই করেছিলেন শান্তিনাথ সরকার। তিনি বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ জানিয়ে আসছিলাম। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের আগের প্রশাসন তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এরকম থিসিস জালিয়াতি করে পিএইচডি ডিগ্রি লাভের দৃষ্টান্ত খুব কম।
আরও পড়ুন: ভারতের বাজারে পাকিস্তানের তৈরি রুহ আফজার বিক্রি বন্ধের নির্দেশ
বিজ্ঞাপন
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, অধ্যাপক অলোককুমার বন্দ্যোপাধ্যায় ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য থাকাকালে থিসিস নকলের অভিযোগের তদন্ত করা হয়েছিল। কিন্তু রাজনৈতিক চাপে সেই তদন্ত প্রতিবেদন ধামাচাপা পড়ে যায় বলে অভিযোগ। ইদানিং আবার সেই থিসিস নকলের অভিযোগ ওঠে। অভিযোগের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে।
তদন্ত কমিটি দুটি থিসিস খতিয়ে দেখে বুঝতে পারেন, অধ্যাপক দেবপ্রসাদ সিকদারের থিসিস এবং অধ্যাপক স্বদেশরঞ্জন সামন্তের থিসিসের প্রায় ১০০ শতাংশ মিল রয়েছে। দুটি থিসিসের মধ্যে পার্থক্য শুধু একটাই, দেবপ্রসাদ শিকদারের থিসিসের শিরোনামে ‘বায়োলজি’ উল্লেখ রয়েছে, আর অধ্যাপক স্বদেশ মোহন সামন্তের শিরোনামে উল্লেখ রয়েছে ‘ফিজিক্স’। সোমবার (১২ সেপ্টেম্বর) তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মসমিতির বৈঠকে পেশ করা হয়।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেস পাবলিশিং কমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক সুজয় মণ্ডল জানান, থিসিস নকল করে পিএইচডি ডিগ্রি নেওয়ার অভিযোগ আসছিল দীর্ঘদিন ধরেই। সেই অভিযোগের তদন্ত করার জন্য তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছিল। তদন্ত প্রতিবেদন দেখার পর কর্মসমিতি বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, নতুন অর্ডার না আসা পর্যন্ত শিক্ষাতত্ত্ব বিভাগের অনুষদের ডিন পদে থাকবেন না দেবপ্রসাদ শিকদার। কর্মসমিতির বৈঠকে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, সেই সিদ্ধান্ত উচ্চশিক্ষা দপ্তরের মুখ্যসচিবকে জানানো হবে।
এ বিষয়ে বুধবার (১৪ সেপ্টেম্বর) বিকেলে অধ্যাপক দেবপ্রসাদ সিকদার বলেন, আমাকে এভাবে অপসারণ করা যায় না, অপসারণ করতে পারে উচ্চশিক্ষা দপ্তর। আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে, সেটা সঠিক নয়।
ইতোমধ্যে থিসিস নকল করার অভিযোগ তদন্ত কমিটিতে প্রমাণিত হওয়ায় অভিযুক্ত ওই অধ্যাপকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি উঠেছে। যদিও ভারতের উচ্চশিক্ষা দপ্তর এ বিষয়ে কি সিদ্ধান্ত নেয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
এসএসএইচ