প্রতীকী ছবি

দুর্নীতির দায়ে চীনের সাবেক একজন মন্ত্রীকে আজীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেছেন আদালত। অভিযুক্ত সাবেক ওই মন্ত্রীর বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়া এবং নিজের ভাই-সহ অপরাধীদের অবৈধ কার্যকলাপ গোপন করার অভিযোগ আনা হয়েছে।

কারাদণ্ডপ্রাপ্ত সাবেক ওই চীনা মন্ত্রীর নাম ফু ঝেংহুয়া। তিনি চীনের সাবেক বিচারমন্ত্রী। চীনের রাষ্ট্রীয় মিডিয়ার বরাত দিয়ে বৃহস্পতিবার (২২ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনের সাবেক বিচারমন্ত্রী ফু ঝেংহুয়া দেশটিতে দুর্নীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন হাই-প্রোফাইল তদন্তের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তবে দুর্নীতির দায়ে তিনি নিজেই এখন দণ্ডিত। অবশ্য চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির আসন্ন কংগ্রেসকে ঘিরে দেশটিতে কর্মকর্তাদের মধ্যে শুদ্ধি অভিযান সম্প্রতি আরও তীব্র হয়েছে।

রয়টার্স বলছে, দুর্নীতির দায়ে ৬৭ বছর বয়সী ফুকে একটি স্থগিত মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এই রায় দুই বছর পর যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে রূপান্তরিত হবে এবং এতে প্যারোলে মুক্তির কোনো সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছে চীনের রাষ্ট্রীয় মিডিয়া।

২০১৮ সালে চীনের বিচার মন্ত্রী হয়েছিলেন ফু ঝেংহুয়া। তবে এই দায়িত্বে আসার আগে তিনি চীনের জননিরাপত্তা মন্ত্রণালয়ের উপপ্রধান ছিলেন এবং প্রায় এক দশক আগে সাবেক নিরাপত্তা জার এবং আধুনিক চীনের সবচেয়ে শক্তিশালী কর্মকর্তা ঝু ইয়ংকাং-এর বিরুদ্ধে তদন্তসহ বহু হাই-প্রোফাইল তদন্ত এবং দমন-পীড়নের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ফু।

তবে চলতি বছরের জুলাই মাসে ফু ঝেংহুয়া ১১৭ মিলিয়ন ইউয়ান (১৬.৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার)-এরও বেশি অর্থ ঘুষ গ্রহণের কথা স্বীকার করেন। চীনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় শহর চাংচুনের একটি আদালতে ফু-এর বিচার হয়।

এদিকে পৃথক এক প্রতিবেদনে বার্তাসংস্থা এপি জানিয়েছে, চায়না সেন্ট্রাল টেলিভিশন তার ওয়েবসাইটে বলেছে, ৬৭ বছর বয়সী ফু ২০০৫-২১ সাল পর্যন্ত চীনের রাজধানী বেইজিংয়ের মন্ত্রী ও পুলিশ প্রধানের দায়িত্বপালনের সময় নিজের ভাই এবং অন্যদের অপরাধ আড়াল করার জন্য ক্ষমতার অপব্যবহার করায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন।

আর এর বিনিময়ে ফু ১১৭ মিলিয়ন ইউয়ান (১৬.৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) অর্থ এবং সম্পত্তি অর্জন করেছে বলে গত জুলাই মাসে রিপোর্ট প্রকাশ করে সরকারি চায়না ডেইলি পত্রিকা। অবশ্য বৃহস্পতিবারের প্রতিবেদনে ফু এর ভাই, ফু ওয়েইহুয়াকে কী অপরাধে অভিযুক্ত করা হয়েছে তার কোনো বিবরণ দেওয়া দেয়নি।

এপি বলছে, ফু কে দুই বছরের অব্যহতিমূলক মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হলেও এই সময়ের মধ্যে যদি অপরাধী ব্যক্তি নিজেকে শুধরে নিয়েছেন বলে মনে করা হয় তবে সেই মৃত্যুদণ্ড সাধারণত দীর্ঘ কারাদণ্ডে পরিণত হয়।

সিসিটিভি জানিয়েছে, ফুকে প্যারোল ছাড়াই যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হবে।

রয়টার্স বলছে, ফু ঝেংহুয়া ঘুষ গ্রহণের কথা স্বীকার করলেও এর আগেই চীনের দুর্নীতিবিরোধী নজরদারি সংস্থা চলতি বছরের শুরুতে নিশ্চিত হন যে চীনা নিরাপত্তা ব্যবস্থার সবচেয়ে বিশিষ্ট কর্মকর্তাদের একজন সান লিজুনের একটি ‘রাজনৈতিক গ্যাং’-এর অংশ হিসেবে রয়েছেন ফু।

২০২০ সালে সানের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয় এবং তখন তিনি চীনের জননিরাপত্তা বিভাগের ভাইস মিনিস্টার ছিলেন। এরপর চলতি বছরের জানুয়ারিতে সান রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে স্বীকার করেন, ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্য তিনি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তার সাথে যোগসাজশ করেছিলেন।

এমনকি প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের কর্তৃত্ব গ্রহণ না করার জন্যও সানকে অভিযুক্ত করা হয়। তবে তিনি এখনও সাজা পাননি।

রয়টার্স বলছে, চীনের ক্ষমতাসীন দলের মধ্যে সানের প্রভাব এতটাই বিস্তৃত ছিল কর্তৃপক্ষ সেই প্রভাবকে ‘বিষাক্ত’ বলে বর্ণনা করে এবং সানকে একটি ‘ক্যান্সার’ এর মতো আখ্যা দিয়ে বলা হয়, এটিকে নির্মূল করা দরকার।

এদিকে বুধবার দুর্নীতির দায়ে সাংহাই, চংকিং এবং শানসি প্রদেশের তিনজন সাবেক পুলিশ প্রধানকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছেন চীনের আদালত। এর মধ্যে একজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

ফু-এর মতো এই পুলিশ কর্মকর্তাদেরও সানের চক্রের অংশ এবং প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের প্রতি অবিশ্বস্ত হওয়ার জন্য অভিযুক্ত করা হয়েছিল।

রয়টার্স বলছে, চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির কংগ্রেসের তিন সপ্তাহ আগে এসব রায়ের মাধ্যমে কর্মকর্তাদের মধ্যে শুদ্ধি অভিযান আরও জোরালো করা হলো। এই কংগ্রেস প্রতি পাঁচ বছরে একবার অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে এবং চীনের পরবর্তী নেতা হিসেবে এই কংগ্রেসে শি জিনপিং নজিরবিহীনভাবে তৃতীয়বারের মতো নির্বাচিত হবেন বলে ব্যাপকভাবে আশা করা হচ্ছে।

টিএম