মিয়ানমারের অব্যাহত রাজনৈতিক সংকট নিরসনে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের ভূমিকায় হতাশা প্রকাশ করেছেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ইসমাইল সাবরি ইয়াকুব। শুক্রবার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৭তম অধিবেধশনে এই হতাশা প্রকাশ করেছেন তিনি।

অধিবেশনে ইসমাইল সাবরি ইয়াকুব বলেছেন, মিয়ানমারের পরিস্থিতি মোকাবিলায় নিরাপত্তা পরিষদ ‘গুরুত্বপূর্ণ কোনও পদক্ষেপ’ নেয়নি। জাতিসংঘের এই ভূমিকাকে ‘অত্যন্ত দুঃখজনক’ বলে অভিহিত করেছেন তিনি।

মালয়েশিয়ার এই প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, নিরাপত্তা পরিষদ (মিয়ানমার ইস্যুতে) হাত গুটিয়ে নিয়ে বিষয়টি দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর সংস্থা আসিয়ানের কাছে হস্তান্তর করেছে বলেও কেউ কেউ মনে করছেন।

মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে অং সান সু চি নেতৃত্বাধীন নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতা দখলে নিয়েছে। এর ফলে দেশটিতে নতুন করে রাজনৈতিক সংকট শুরু হয়েছে। সামরিক শাসনবিরোধীদের সঙ্গে সংঘাত গৃহযুদ্ধে রূপ নিয়েছে বলে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা মন্তব্য করেছেন। যেখানে হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছে।

ইসমাইল সাবরি ইয়াকুব বলেছেন, মিয়ানমারে অবিলম্বে সহিংসতা বন্ধ, বিশেষ দূত নিয়োগ এবং সব অংশীদারদের সাথে আলোচনাসহ আসিয়ানের ‘পাঁচ-দফা ঐক্যমত’ রয়েছে। দেশটির চলমান সংকটের অবসানে এই পাঁচ-দফা ঐক্যমতকে পুনরুজ্জীবিত করা দরকার।

তিনি বলেন, মিয়ানমারের জান্তা সরকার কর্তৃক আসিয়ানের পাঁচ দফা ঐকমত্য বাস্তবায়নে কোনও ফলপ্রসূ অগ্রগতি না হওয়ায় মালয়েশিয়া হতাশ। বর্তমান পরিস্থিতিতে আসিয়ানের পাঁচ দফা ঐকমত্য বাস্তবায়ন আর চলতে পারে না।

মিয়ানমারের সামরিক প্রশাসনের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে আসছে মালয়েশিয়া। মিয়ানমারের ক্ষমতা থেকে অপসারিত নির্বাচিত রাজনীতিকদের প্রতিষ্ঠিত জাতীয় ঐক্য সরকারের (এনইউজি) সাথে আলোচনায় যুক্ত হওয়ার জন্য আসিয়ানের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে মালয়েশিয়া।

মিয়ানমারের জেনারেলদের বিরুদ্ধে দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া এবং সিঙ্গাপুরও জোর দিয়ে আসছে। মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এই সংকট মিয়ানমারের লাখ লাখ শরণার্থীর জন্য পরিস্থিতি আরও খারাপ করেছে। এই শরণার্থীদের বেশিরভাগই  মুসলিম রোহিঙ্গা; যাদের প্রায় ১০ লাখ এখন বাংলাদেশে শরণার্থী শিবিরে বসবাস করছে।

তিনি বলেন, মালয়েশিয়া ১৯৫১ সালের কনভেনশন অন দ্য স্ট্যাটাস অব রিফিউজি এবং ১৯৬৭ সালের প্রোটোকলে স্বাক্ষরকারী দেশ না হয়েও কেবল মানবিক দিক বিবেচনা করে প্রায় ২ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে। 

মিয়ানমারের গণতন্ত্রকামী নেত্রী অং সান সু চি ও তার মন্ত্রিসভা ও রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) পাঁচ সদস্যকে কারাবন্দী করে রেখেছে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা। অভ্যুত্থানের পর গ্রেপ্তার করা মিয়ানমারের এসব নেতার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থরনের অভিযোগ আনা হয়েছে। দেশটির সমালোচকরা বলেছেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে মিথ্যা অভিযোগে দেশটির গণতন্ত্রকামীদের কারাবন্দী করে রাখা হয়েছে।

চলতি সপ্তাহের শুরুর দিকে মিয়ানমারে নিযুক্ত জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষ দূত টম অ্যান্ড্রুস বলেছিলেন, সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখলে নেওয়ায় মিয়ানমারের ৫ কোটি ৪০ লাখ মানুষের অবস্থা ‘খারাপ থেকে খারাপের পর আরও ভয়াবহ’ হয়ে উঠেছে।

জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের বৈঠকে অ্যান্ড্রুস বলেন, মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের কারণে সৃষ্ট সংকটে বৈশ্বিক পদক্ষেপ একেবারে ব্যর্থ হয়েছে।

সূত্র: আলজাজিরা, রয়টার্স।

এসএস