ছবি: রিপাবলিক ওয়ার্ল্ড

ইউক্রেনের চার প্রদেশের রুশ ভূখণ্ডে যুক্ত হওয়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান। এই ব্যাপারটিকে ‘কূটনীতির ব্যর্থতা’ বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি।

সম্প্রতি তুরস্কের প্রেসিডেন্টের একটি সাক্ষাৎকার নিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের তুরস্ক শাখা সিএনএন তুর্ক। সেখানে এ সম্পর্কিত প্রশ্নের উত্তরে পুতিনের মিত্র বলে পরিচিত এরদোয়ান বলেন, ‘ইউক্রেনের দখলকৃত অঞ্চলে গণভোট এবং তারপর সেসব অঞ্চলকে রাশিয়া অন্তভূক্ত করার যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে এটি আমাদের সবার জন্যই উদ্বেগজনক এবং….আমি একে আন্তর্জাতিক কূটনীতির ব্যর্থতা বলব।’

‘ব্যাপরটি উদ্বেগজনক এই কারণে যে, আমি পুতিনকে জানি। একবার যদি তিনি কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন, তাহলে সেখান থেকে ফিরে আসা বা মত পরিবর্তন করা তার স্বভাবে নেই।’

‘ফলে ইউক্রেনের চারটি প্রদেশ রাশিয়া যুক্ত হচ্ছে...এটা এখানেই থেমে থাকবে না। অদূর ভবিষ্যতে ইউক্রেনের আরও এলাকা রাশিয়ার অন্তর্ভুক্ত হবে।’

বৃহস্পতিবার রুশ প্রেসিডেন্টের কার্যালয় ক্রেমলিনের প্রেস সেক্রেটারি ও মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ মস্কোতে এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, খেরসন, ঝাপোরিজ্জিয়া, দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক— ইউক্রেনের এই চার প্রদেশকে রাশিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করার যাবতীয় প্রস্তুতির কাজ শেষ। আগামী শুক্রবার এসব প্রদেশকে রুশ ভূখণ্ডের অংশ হিসেবে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।

যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের জোট ন্যাটোকে ঘিরে দ্বন্দ্বের জেরে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করে রুশ বাহিনী। অভিযান শুরুর আগে পুতিন বলেছিলেন ইউক্রেনকে নাৎসীমুক্ত ও নিরস্ত্র করা এবং দেশটির স্বাধীনতাকামী দুই প্রদেশ দোনেৎস্ক ও লুহানস্ককে স্বীকৃতি দিতেই এই অভিযান পরিচালিত হচ্ছে।

৯ মাসের অভিযানে খেরসন, ঝাপোরিজ্জিয়া, দোনেৎস্ক ও লুহানস্কের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিতে সক্ষম হয়েছে রুশ বাহিনী। শতকরা হিসেবে এই চার প্রদেশের সম্মিলিত আয়তন ইউক্রেনের মোট আয়তনের ১৫ শতাংশ।

রুশ বাহিনীর অধিকৃত এই চার প্রদেশ রাশিয়ার সঙ্গে যোগ দিতে আগ্রহী কিনা— গত ২৩ সেপ্টেম্বর সে সম্পর্কিত গণভোটও হয়েছে এসব প্রদেশে। সেই গণভোটে রাশিয়ার পক্ষে ভোট পড়েছে ৯৬ শতাংশ।

গণভোটের পর থেকেই মস্কোর পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা চলছিল আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে। বৃহস্পতিবার পেসকভের সংবাদ সম্মেলনে সমাপ্তি ঘটে সেসব আলোচনার।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে তুরস্কের অবস্থান অন্যান্য দেশের থেকে আলাদা। কারণ, এই দেশটি একই সঙ্গে রাশিয়া ও ইউক্রেন— উভয়েরই ঘনিষ্ট মিত্র বলে পরিচিত। ইউক্রেনে রুশ অভিযানের শুরু থেকেই যুদ্ধ বন্ধ ও কূটনৈতিক উপায়ে দুই দেশের সমস্যার সমাধানের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল তুরস্ক।

এমনকি যুদ্ধ বন্ধে দুই দেশের সরকারি প্রতিনিধিদের মধ্যে যে কয়েক সপ্তাহব্যাপী বৈঠক হয়েছে, সেই বৈঠকেরও আয়োজক দেশ ছিল তুরস্ক। রাজধানী আঙ্কারায় দুই দেশের প্রতিনিধির বৈঠক থেকে অবশ্য শেষপর্যন্ত ইতিবাচক কোনো ফলাফল আসেনি।

বৃহস্পতিবার সিএনএন তুর্ককে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এরদোয়ান আরও জানান, জাতিসংঘ ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় ইউক্রেনে আটকে থাকা গম ছাড় বিষয়ক চুক্তির পর  পর উদ্ভুত পরিস্থিতি ইউক্রেন অভিযানের একটি বড় ইস্যু। এই ইস্যুতে পুতিন খুবই ক্ষুব্ধ এবং ব্যক্তিগতভাবে এরদোয়ান হতাশ।

এরদোয়ান বলেন, ‘আপনারা সবাই জানেন, ইউক্রেনের গম ছাড় বিষয়ক চুক্তি সম্পাদন করতে জাতিসংঘ এবং তুরস্ককে কী পরিমাণ কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। রাশিয়া ও ইউক্রেনের সঙ্গে আমাকে লাগাতার আলোচনা ও কূটনৈতিক প্রয়াস চালাতে হয়েছে। তারপর এক পর্যায়ে গিয়ে আমরা মস্কোকে চুক্তি স্বাক্ষরে রাজি করাতে পেরেছি।’

‘চুক্তি স্বাক্ষর হলো, ইউক্রেনের বিভিন্ন গুদামে আটকে থাকা গমও আন্তর্জাতিক বাজারে আসা শুরু হলো; কিন্তু এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক যে ইউক্রেনের গমের প্রায় পুরো চালানই গেল ইউরোপের ধনী দেশগুলোতে।’

‘এ ঘটনায় পুতিন খুবই ক্ষুব্ধ এবং আমিও ব্যক্তিগতভাবে হতাশ। কারণ আমরা আশা করেছিলাম, বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলোও এই গমের হিস্যা পাবে। ক্ষুধার যন্ত্রণা ধনী-দরিদ্র সবারই আছে।’

ইউক্রেনে রুশ বাহিনী যেন অভিযানের তীব্রতা আর না বাড়ায়, সেজন্য আঙ্কারাকে মস্কোর সঙ্গে আলোচনা করতে অনুরোধ জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।

সিএনএন তুর্ককে এ সম্পর্কে এরদোয়ান বলেন, ‘হ্যাঁ তিনি (জেলেনস্কি) আমাদের মস্কোর সঙ্গে আলোচনা করতে অনুরোধ করেছেন। আমিও এ ব্যাপারে (পুতিনের সঙ্গে) বিস্তারিত আলোচনা করতে চাই। দেখা যাক, কী হয়!’

এদিকে বৃহস্পতিবার মস্কোতে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, নিকট ভবিষ্যতে তুরস্কের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক বা আলোচনার কোনো শিডিউল নেই পুতিনের।

সূত্র : আরটি

এসএমডব্লিউ