ইউক্রেনের জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রধানকে আটক করেছে রাশিয়া। ইউক্রেনের রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক নিয়ন্ত্রক পরিদর্শক সংস্থা এই তথ্য নিশ্চিত করেছে। শনিবার (১ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

ইউক্রেনের রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক নিয়ন্ত্রক সংস্থা এনেরহোয়াটম বলেছে, রুশ সেনারা ইউক্রেনের জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পরিচালক ইহোর মুরাশভকে আটক করেছে। এতে বলা হয়েছে, শুক্রবার স্থানীয় সময় বিকেল চারটার দিকে মুরাশভকে আটক করা হয়। মূলত নিজের গাড়িতে করে পারমাণবিক স্থাপনা থেকে নিকটবর্তী শহর এনেরহোদারে যাওয়ার সময় তিনি আটক হন।

এনেরহোয়াটম এর প্রেসিডেন্ট বিবিসিকে বলেছেন, আটকের পর ইহোর মুরাশভকে চোখ বেঁধে রাখা হয় এবং ধারণা করা হচ্ছে- তাকে এনেরহোদারের একটি কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

অবশ্য রাশিয়া এ বিষয়ে এখনও কোনো মন্তব্য করেনি।

সামরিক অভিযান শুরুর পরপরই মস্কো গত মার্চে ইউরোপের বৃহত্তম এই পারমাণবিক কেন্দ্র দখল করে এবং এই স্থাপনার ইউক্রেনীয় কর্মীদের আটকে রাখে।

যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের সামরিক জোট ন্যাটোকে ঘিরে দ্বন্দ্বের জেরে সীমান্তে আড়াই মাস সেনা মোতায়েন রাখার পর গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযান শুরুর ঘোষণা দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এই ঘোষণার দু’দিন আগে ইউক্রেনের রুশ বিচ্ছিন্নতাবাদী নিয়ন্ত্রিত দুই অঞ্চল দনেতস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেন তিনি।

এরপর গত মার্চের শুরুতে যুদ্ধের প্রথম দিকেই রাশিয়ার সামরিক বাহিনী জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎ স্থাপনার নিয়ন্ত্রণ নেয়। যদিও এই স্থাপনা এখনও ইউক্রেনীয় প্রকৌশলীরা পরিচালনা করছেন। এরপর গত আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে ইউরোপের বৃহত্তম পারমাণবিক এই বিদ্যুৎকেন্দ্রে আবারও হামলার ঘটনা ঘটে।

এর সপ্তাহখানেক পর স্থাপনাটিতে আবারও হামলার ঘটনা ঘটে। এসব হামলার জন্য ইউক্রেন রাশিয়াকে দায়ী করলেও হামলার দায় পাল্টা ইউক্রেনের ঘাড়েও চাপিয়ে আসছে মস্কো। আর এতে করে সেখানে পারমাণবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখা দেয়।

ইউক্রেনের রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক নিয়ন্ত্রক সংস্থা এনেরহোয়াটমের প্রধান পেট্রো কোটিন শনিবার এক বিবৃতিতে বলেছেন, পারমাণবিক কেন্দ্রের ‘পারমাণবিক এবং বিকিরণ সুরক্ষার জন্য প্রধান দায়িত্বই পালন করে থাকেন ইহোর মুরাশভ।

শুক্রবার রুশ সেনারা তাকে আটক করায় ‘ইউক্রেন এবং ইউরোপের বৃহত্তম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কার্যক্রমের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে’। এছাড়াও, তিনি বিবিসিকে বলেছেন, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন জাপোরিঝিয়া-সহ ইউক্রেনের চারটি অঞ্চলকে রাশিয়ার সঙ্গে সংযুক্ত করার ঘোষণা দেওয়ার কারণে এই আটকের ঘটনা ঘটেছে।

কোটিন বলেন, রাশিয়ার পারমাণবিক রাষ্ট্রীয় কোম্পানি রোসাটমের প্রতিনিধিরা ‘মাত্র দুই দিন আগে’ প্ল্যান্টটি পরিদর্শন করেছিলেন। তারা বলেছেন, এই অঞ্চলের সংযুক্তির সাথে সামঞ্জস্য রেখে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণ থেকে রোসাটমের নিয়ন্ত্রণে স্থানান্তর করা হবে।

ইউক্রেন বলেছে, রাশিয়ান সৈন্যরা পারমাণবিক এই স্টেশনটিকে একটি সামরিক ঘাঁটি হিসাবে ব্যবহার করছে এবং কর্মীদের বন্দুকের মুখে রাখা হয়েছে। তবে মস্কো এই দাবি অস্বীকার করেছে।

টিএম