ছবি: রয়টার্স

জ্বালানি তেলের বাজার চাঙ্গা করতে এবার খনি উত্তোলন কমানোর চিন্তাভাবনা করছে জ্বালানি তেল উৎপাদন ও বিক্রয়কারী দেশগুলোর জোট ওপেক প্লাস। জোটের একাধিক সূত্রের বরাত দিয়ে সোমবার রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইরাক, ইরান, ভেনেজুয়েলা, ইকুয়েডর, কঙ্গো, নাইজেরিয়াসহ জ্বালানি তেল উত্তোলন ও রপ্তানিতে শীর্ষে থাকা বিশ্বের ১৪টি দেশের জোট অর্গানাইজেশন অব পেট্রোলিয়াম একপোর্টিং কান্ট্রিজ বা ওপেক। পরে জ্বালানি তেল উত্তোলন ও রপ্তানি বাণিজ্যে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় দেশ রাশিয়া এই জোটের সদস্য হওয়ার পর সংস্থার নতুন নাম হয় ওপেক প্লাস।

সংস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ সূত্র রোববার রয়টার্সকে জানিয়েছে, ওপেক প্লাসের বিভিন্ন দেশ তেলের দৈনিক উত্তোলন ১০ লাখ বা তারও বেশি হ্রাস করার সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে। আগামী ৫ অক্টোবর জোটের বৈঠক এই প্রস্তাব ওঠানো হবে এবং আশা করা হচ্ছে, ওপেক প্লাসের সব সদস্যরাষ্ট্রই এই প্রস্তাবের পক্ষে অবস্থান নেবে।

১৫৯ লিটারকে এক ব্যারেল হিসেবে ধরা হয়। ওপেক প্লাসের এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে বর্তমানে যে পরিমাণ জ্বালানি তেল বিশ্বজুড়ে প্রতিদিন উত্তোলন করা হচ্ছে, শতকরা হিসেবে তার হ্রাসের পরিমাণ হবে ১ শতাংশেরও বেশি।

মহামারি পরবর্তী পরিস্থিতির প্রভাব ও ডলারের লাগাতার মানবৃদ্ধির জেরে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বাজারে গত বেশ কয়েক মাস ধরে মন্দাভাব দেখা দিয়েছে।

মন্দাভাবের তীব্রতা আরও বেড়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর। যুদ্ধের আগ পর্যন্ত তেলের আন্তর্জাতিক লেনদেন সম্পূর্ণ ডলারভিত্তিক হলেও চলতি বছর মার্চে মস্কো ঘোষণা দেয়, এখন থেকে রুবলের বিনিময়ে তেল বিক্রি করবে রাশিয়া। ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর বিশেষ সামরিক অভিযানের জেরে রাশিয়ার ওপর যুক্তরাষ্ট্র ও তার ইউরোপীয় মিত্ররা একের পর এক নিষেধাজ্ঞা জারির পর নিজের অর্থনৈতিক ভারসাম্য রক্ষার তাগিদ থেকেই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে মস্কো।

মস্কোর এই সিদ্ধান্তের পর বিশ্বের বেশ কিছু দেশ ডলারের বিনিময়ে ওপেকভুক্ত বিভিন্ন দেশ থেকে তেল কেনা কমিয়ে রাশিয়া থেকে রুবলে তেল কেনা শুরু করে। এসব দেশের মধ্যে চীন ও ভারতের মতো বড় বড় আমদানিকারক দেশও রয়েছে।

রাশিয়া নিজেদের জ্বালানি তেল রুবলে বিক্রি শুরু করার পর থেকে ডলারভিত্তিক তেলের বাজারে জেঁকে বসে মন্দাভাব। অনেক ব্যবসায়ী রাশিয়ার কাছ থেকে কম দামে তেল কিনে তা পরিশোধন করে ইউরোপের বাজারে চড়া দামে বিক্রি করতে থাকে। ফলে এই মন্দাভাব আরও দীর্ঘস্থায়ী রূপ নেয়।

তবে ওপেক প্লাস এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন শুরু করলে তা যুক্তরাষ্ট্রের অসন্তোষের কারণ হবে বলে ধারণা করছেন আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশেষজ্ঞরা। কারণ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে তেলের সরবরাহে যেন কোনো ঘাটতি না থাকে, সেজন্য মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশকে একাধিকবার আহ্বান জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

গত আগস্টে সৌদি আরব সফরে গিয়েছিলেন তিনি। সেখানেও দেশটির যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে বৈঠকে তেলের উৎপাদন বাড়ানোর বিষয়ে বলেছিলেন। তিনি।

ওপেকের বর্তমান চেয়ার হিসেবে দায়িত্বে আছে সৌদি আরব। তেলের উৎপাদন কমানোর ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে সৌদি সরকারি মুখপাত্রদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল রয়টার্স। তবে কেউই মন্তব্য করতে রাজি হননি।

এসএমডব্লিউ