জাতিকে চরম অর্থনৈতিক সংকটের দিকে পরিচালিত করার অভিযোগে শ্রীলঙ্কার সাবেক প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে ও তার ভাই সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসেসহ সাবেক মন্ত্রিসভা ও প্রশাসনের কয়েকজন উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলার অনুমতি দিয়েছে দেশটির শীর্ষ আদালত।

শুক্রবার বার্তাসংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, শ্রীলঙ্কার মানবাধিকার সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল সম্প্রতি দেশটির সুপ্রিম কোর্টে শাসনতান্ত্রিক অব্যবস্থাপনা এবং তার ফলে সৃষ্ট ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটের জন্য গোতাবায়া রাজাপাকসেসহ রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক নেতৃত্বের কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তি ও কর্মকর্তাকে দায়ী করে মামলার আবেদন করেছিল।

মামলায় আসামির তালিকায় গোতাবায়া রাজাপাকসে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে, সাবেক অর্থমন্ত্রী বাসিল রাজাপাকসে এবং শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক দুই গভর্নরসহ সাবেক মন্ত্রিসভার কয়েকজন সদস্য, সরকারি প্রশাসনের কয়েকজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাসহ মোট ৩৯ জনের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

শুক্রবার সেই আবেদনের ওপর শুনানি হয় সুপ্রিম কোর্টে। প্রধান বিচারপতি জয়ন্থা জয়াসুরিয়া এসময় এজলাসে উপস্থিত ছিলেন। শুনানি শেষে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশালকে মামলার অনুমতি দিয়ে তার কার্যক্রম শুরুর আদেশ দেন প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন ৫জন বিচারপতির একটি বেঞ্চ।

রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক অব্যবস্থাপনা, করোনা মহামারিজনিত সংকট সামাল দিতে চরম ব্যর্থতা এবং ভুল নেতৃত্বের মাধ্যমে দেশকে অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক সংকটে মুখে ঠেলে দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে। সেই সঙ্গে বর্তমান এই সংকটের জন্য আসামিদের কাছে জবাবদিহিতাও তলব করা হয়েছে।

ত্রুটিপূর্ণ করনীতি ও অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনার ফলে গত বছরের শেষ থেকেই তলানিতে ঠেকে গিয়েছিল শ্রীলঙ্কার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। তার জেরে চলতি ২০২২ সালের শুরু থেকেই অর্থনৈতিক সংকট শুরু হয় শ্রীলঙ্কায়। গত এপ্রিলে দেশটির সরকার নিজেকে দেউলিয়া ঘোষণা করার পর তা রীতিমত নজিরবিহীন সংকটে রূপ নেয়।

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ না থাকায় খাদ্য, জ্বালানি ও ওষুধের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি করার মতো অর্থও ছিল না শ্রীলঙ্কার সরকারের হাতে।

চরম সংকটকালীন এই পরিস্থিতিতে শ্রীলঙ্কায় সরকারবিরোধী আন্দোলন দিন দিন তীব্র হতে থাকে। এবং ব্যাপক এই গণ আন্দোলনের মুখে গত জুলাই মাসে গোপনে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন গোতাবায়া রাজাপাকসে। তার বড় ভাই মাহিন্দা রাজাপাকসে এবং ছোট ভাই বাসিল রাজাপাকসে অবশ্য তার অনেক আগেই পদত্যাগ করেছিলেন।

দেশ থেকে পালিয়ে সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ডে কয়েক সপ্তাহ কাটিয়ে মাসখানেক আগে নিজের দেশে ফেরেন গোতাবায়া। তার অপর দুই ভাই অবশ্য দেশ ছাড়ার সুযোগ পাননি।

এসএমডব্লিউ