মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য ইলহান ওমর

সাংবাদিক জামাল খাশোগির হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স ও দেশটির প্রকৃত নেতা মোহাম্মদ বিন সালমানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রস্তাব করেছেন মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য ইলহান ওমর। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (২ মার্চ) এ বিষয়ে একটি বিল উত্থাপনের কথা জানান তিনি।

মিনেসোটা থেকে নির্বাচিত ডেমোক্র্যাটদলীয় এই আইনপ্রনেতা এক বিবৃতিতে বলেন, ‘এটা আমাদের মানবিকতার পরীক্ষা। যুক্তরাষ্ট্র যদি সত্যি-সত্যিই বাক-স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারে বিশ্বাসী হয়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের বাসিন্দা ও সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগির হত্যায় জড়িত থাকার অপরাধে মোহাম্মদ বিন সালমানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ না করার কোনো কারণ নেই। কারণ এই হত্যাকাণ্ডে সৌদি যুবরাজের জড়িত থাকার তথ্য আমাদের নিজস্ব গোয়েন্দা প্রতিবেদনেই উঠে এসেছে।’

সংবাদ সম্মেলনে সৌদি যুবরাজের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ না করার বিষয়ে সোমবার এক সাংবাদিকের প্রশ্ন শুনছেন মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র নেড প্রাইস

ডেমোক্র্যাটদলীয় আইনপ্রণেতা হলেও তার এই দাবি প্রেসিডেন্ট বাইডেন এবং মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের পুরোপুরি বিপরীত। কারণ সোমবার ওয়াশিংটন ডিসিতে সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র নেড প্রাইস বলেন, সৌদি-মার্কিন সম্পর্কে বিচ্ছেদ নয়, পুনরুদ্ধারের কাজ করছে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের প্রশাসন। তার মতে, যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবের সম্পর্ককে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনতে কাজ হচ্ছে।

অভিযোগ থাকার পরও যুবরাজ সালমানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র কেন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে না- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে প্রাইসের দাবি, বাইডেন প্রশাসন যদি সৌদি যুবরাজের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের মতো নাটকীয় এবং কঠোর কোনো সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে সেটা (নিষেধাজ্ঞা) রিয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব ব্যাপকভাবে কমিয়ে দেবে।

এর আগে যুবরাজ বিন সালমান নির্বাসিত সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে ‘হত্যার অনুমোদন’ দিয়েছিলেন বলে শুক্রবার প্রকাশিত এক গোয়েন্দা প্রতিবেদনে জানায় যুক্তরাষ্ট্র। এরপরই মধ্যপ্রাচ্যে ওয়াশিংটনের মিত্র এই দেশটির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে বাইডেন প্রশাসন। তবে যুবরাজ সালমানের অনুমোদনে খাশোগিকে হত্যা করা হয় বলে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে জানানো হলেও তার বিরুদ্ধে কোনো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেনি দেশটি।

এদিকে ব্যাপকভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে সৌদি আরবকে জবাবদিহিতায় বাধ্য করতে আরও একটি বিল সামনে এনেছেন ডেমোক্র্যাটিক আইনপ্রণেতা টম ম্যালিনোস্কি। সৌদি আরবে মানবাধিকার নিশ্চিত করাই এই বিলের লক্ষ্য। মানবাধিকার নিশ্চিতে বাধ্য করতে প্রয়োজনে সৌদি যুবরাজকে যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণে নিষিদ্ধ করার কথাও বিলটিতে বলা হয়েছে।

ডেমোক্র্যাটিক আইনপ্রণেতা টম ম্যালিনোস্কি

ম্যালিনোস্কি বলেন, সৌদি যুবরাজ সালমানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা না হলে সেটা বাইডেন প্রশাসনের ভাবমূর্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে। কারণ, আমরা এমবিএসকে একটি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করলাম, কিন্তু জবাবদিহিতায় বাধ্য করতে কিছুই করলাম না।

ব্যাপকভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রতি আহ্বানও জানান তিনি। ম্যালিনোস্কি বলেন, সারা বিশ্বকে আমেরিকার এটাই জানিয়ে দেওয়া উচিত যে, অপরাধী কোনো প্রেসিডেন্ট হোক আর যুবরাজ; কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়।

সূত্র: আলজাজিরা

টিএম