ছবি: রয়টার্স

ইউক্রেনে চলমান সামরিক অভিযানে রুশ বাহিনী ইরানে তৈরি সমরাস্ত্র ব্যবহার করছে বলে যে অভিযোগ তুলেছিল যুক্তরাষ্ট্র, প্রথম দিকে তা অস্বীকার করলেও এখন স্বীকার করেছে ইরান।

বুধবার বার্তাসংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে সম্প্রতি ইরানের নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি ড্রোন আরাশ ২ এবং স্বল্পমাত্রার সার্ফেস টু সার্ফেস ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র জুলফগার ও ফাতেহ কিনতে সম্প্রতি তেহরানের সঙ্গে চুক্তিও স্বাক্ষর করেছে মস্কো।

গত ৬ অক্টোবর মস্কো সফরে গিয়েছিলেন ইরানের ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মোখবের এবং ইরানের প্রতিরক্ষা বাহিনীর এলিট ফোর্স রেভোল্যুশনারি গার্ডের দু’জন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা। সে সময়ই এই সমরাস্ত্র বিক্রয় সম্পর্কিত চুক্তি হয়েছে।

এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের কার্যালয় ক্রেমলিনের প্রেসসচিব ও মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল রয়টার্স। তিনি বলেন, ‘আমি যদ্দুর জানি (ইউক্রেন যুদ্ধে) রুশ বাহিনী রাশিয়ার অস্ত্রই ব্যবহার করছে। তবে এ ব্যাপারে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সঠিক উত্তর দিতে পারবে।’

সেই অনুযায়ী রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গেও যোগাযোগ করে রয়টার্স। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের কোনো মুখপাত্রই এ ব্যাপারে মন্তব্য করতে রাজি হননি।

তবে ইরানের নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তারা এই চুক্তির বিষয়টি স্বীকার করেছেন। এক কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, ‘তারা (রাশিয়া) আমাদের কাছ থেকে শত শত জুলফগার ও ফাতেহ ক্ষেপণাস্ত্র কিনতে চেয়েছে। জবাবে আমরা বলেছি, এই মুহূর্তে আমরা কয়েকশ ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করতে পারব এবং যেসব ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করতে পারব—সেগুলোর সবই স্বল্পমাত্রার, অর্থাৎ ১১০ বা তার থেকে খানিকটা বেশি দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম।’

‘এছাড়া মস্কোতে স্বাক্ষরিত অস্ত্র বিক্রি চুক্তিতে রাশিয়ায় ড্রোন রপ্তানির বিষয়টিও রয়েছে। তবে ঠিক কতসংখ্যক ড্রোন রাশিয়ায় পাঠানো হবে, তার সঠিক সংখ্যা আমি জানি না।’

কবে নাগাদ এসব অস্ত্র সরবরাহ করা হবে— এ প্রশ্নের উত্তরে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমি (সরবরাহের) সঠিক সময় বলতে পারব না, তবে দু’টি বা তিনটি চালানের মাধ্যমে এসব অস্ত্র খুব শিগগিরই পাঠানো হবে।’

চলতি বছর ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে রুশ বাহিনী ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযান শুরুর পর গত ৯ মাসে ইউক্রেনকে শত শত কোটি টাকার সমরাস্ত্র সহায়তা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ এবং ন্যাটো; এবং যতদিন যুদ্ধ চলবে, ততদিন ইউক্রেনকে অস্ত্র সহায়তা দেওয়া হবে বলেও বিভিন্ন সময়ে অঙ্গীকার করেছে এই তিন পক্ষ।

কিন্তু রাশিয়া বাইরের কোনো দেশের কাছ থেকে অস্ত্র কিনছে— এমন তথ্য এই প্রথম পাওয়া গেল।

এ ব্যাপারে মন্তব্য জানতে চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করেছিল রয়টার্স। মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, রাশিয়া ইতোমধ্যেই ইরানের তৈরি সমরাস্ত্র ব্যবহার করা শুরু করে দিয়েছে।

‘আমার জানামতে, সোমবার সকালে কিয়েভসহ অন্যান্য শহরে যে হামলা চালিয়েছিল রুশ বাহিনী, সেই হামলায় ইরানের ড্রোন ব্যবহার করা হয়েছিল।’ইউরোপের এক কূটনীতিক এ প্রসঙ্গে বলেন, যুদ্ধের এখন যে পর্যায় চলছে— তাতে ইরানের কাছ থেকে অস্ত্র কেনা রাশিয়ার জন্য খুবই ‘যৌক্তিক’ ব্যাপার।

‘কারণ, গত ৯ মাসের টানা যুদ্ধে রাশিয়ার অস্ত্র ভাণ্ডারে টান পড়া খুবই স্বাভাবিক এবং নতুন সমরাস্ত্র উৎপাদনের জন্য যেসব সরঞ্জাম প্রয়োজন, নিষেধাজ্ঞা থাকায় আন্তর্জাতিক বাজার থেকে সেসব জোগাড়ও করতে পারছেনা।’

‘অন্যদিকে, ইরান ও রাশিয়া— উভয়ের ওপরই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বিপুল পরিমাণ নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। সুতরাং এই অস্ত্র ক্রয়-বিক্রয়ের চুক্তিতে অবাক হওয়ার কিছু নেই, বরং এটাই স্বাভাবিক।’

তবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বাহিনীর এক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেছেন, ‘যেহেতু এ ব্যাপারে আমি এখনও নির্ভরযোগ্য কোনো উৎস থেকে কিছু জানতে পারিনি, তাই এ ব্যাপারে মন্তব্য করতে পারছি না।’

এসএমডব্লিউ