সন্ত্রাসবাদের অর্থায়নের অভিযোগে পর্যবেক্ষণকারী আন্তর্জাতিক ওয়াচডগ সংস্থা ফিন্যান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্সের (এফএটিএফ) ধূসর তালিকা থেকে সরতে সক্ষম হয়েছে পাকিস্তান। তালিকায় ঢোকার চার বছর পর মিলল এই মুক্তি।

শুক্রবার প্যারিসে এফএটিএফের সভায় পাকিস্তানকে এই তালিকা থেকে সরানোর সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। পরে  এক বিবৃতিতে সংস্থাটির পক্ষ থেকে এ সম্পর্কে বলা হয়, ‘মুদ্রাপাচার প্রতিরোধ এবং বিশেষ করে সন্ত্রাসবাদে অর্থায়ন বন্ধে পাকিস্তান তার কার্যক্রম জোরদার করেছে এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এই দেশটির যেসব ঘাটতি এফএটিএফ ২০১৮ সালে শনাক্ত করেছিল, সেগুলোও ভালোভাবে মোকাবিলা করা শুরু করেছে।’

‘সন্ত্রাসবাদে অর্থায়ন বন্ধে এফএটিএফের পক্ষ থেকে যে ৩৪টি পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল, তার ফলাফলও সন্তোষজনক। এ কারণে এফএটিএফ মনে করছে, (সন্ত্রাসবাদে অর্থায়নের অভিযোগে) পাকিস্তানকে আর নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখার কোনো প্রয়োজন নেই।’

শুক্রবার এফএটিএফ এই বিবৃতি দেওয়ার কিছু সময়ের মধ্যেই এক টুইটবার্তায় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ ধূসর তালিকা থেকে মুক্তির জন্য দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টো এবং সেনাপ্রধান কামার আহমেদ বাজওয়াকে অভিনন্দন জানান।

শেহবাজ বলেন, ‘আমি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টো এবং সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান কামার আহমেদ বাজওয়াকে বিশেষভাবে শুভেচ্ছা জানাব; পাশাপাশি দেশের সব রাজনৈতিক দলকেও ধন্যবাদ দেবো এই ধূসর তালিকা থেকে মুক্তির জন্য, আলহামদুলিল্লাহ।’

পরে আরেক টু্ইটবার্তায় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বছরের পর বছর ধরে বেসামরিক ও সামরিক নেতৃত্বের আন্তরিক প্রচেষ্টার ফসল এই সাফল্য। আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক অভিনন্দন।’

এফএটিএফের ধূসর তালিকা থেকে অপসারণের ফলে কার্যত বিশাল একটি সংকট কাটিয়ে উঠেছে পাকিস্তান। কারণ, এখন থেকে বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ), এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক এডিবি থেকে ঋণ পেতে আর কোনো সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে না দেশটিকে।

আর পাকিস্তানের অর্থনীতি বর্তমানে যে ভঙ্গুর অবস্থায় পৌঁছেছে, তাতে ঋণ না পেলে ভয়াবহ বিপর্যয়ের মধ্যে পড়বে দেশটি।

ফ্রান্সভিত্তিক সংস্থা এফএটিএফের সদস্যরাষ্ট্রের সংখ্যা ৩৯টি। শুক্রবার প্যারিসে বৈঠকের সময়ে পাকিস্তানকে সন্ত্রাসবাদের ধূসর তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার ব্যাপারে অবশ্য আপত্তি তুলেছিল সংস্থাটির সদস্যরাষ্ট্র ও পাকিস্তানের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দেশ ভারত। কিন্তু সেই আপত্তি ধোপে টেকেনি।

২০১৮ সালে পাকিস্তানকে ধূসর তালিকাভূক্ত করার পর দেশটিকে ৩৪টি পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল এফএটিএফের তরফ থেকে। সেসব পদক্ষেপের মধ্যে ২৭টি ছিল সন্ত্রাসবাদে অর্থায়ন বন্ধ সংক্রান্ত, আর বাকি ৭টি ছিল মুদ্রাপাচার সম্পর্কিত।

সবগুলো পদক্ষেপেই পাকিস্তানের ফলাফল ‘সন্তোষজনক’ বলে শুক্রবারের বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে সংস্থাটি।

এসএমডব্লিউ