ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ নিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) প্রধান কৌঁসুলি ফাতৌ বেনসাওদা আনুষ্ঠানিকভাবে একটি তদন্ত শুরু করেছেন। যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে। ইসরায়েল অবশ্য এই তদন্তকে ইহুদিবিদ্বেষ হিসেবে অভিহিত করেছে। বুধবার (৩ মার্চ) এক অনলাইন প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে বিবিসি। 

বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী ফাতৌ বেনসাওদা বলেছেন, ২০১৪ সালের ১৩ জুন থেকে ইসরায়েল অধিকৃত ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীর, পূর্ব জেরুজালেম ও গাজা উপত্যকায় সংঘটিত যুদ্ধপরাধ এই তদন্তের আওতায় থাকবে। 

ফিলিস্তিন প্রশংসা করলেও এমন সিদ্ধান্ত খারিজ করে দিয়েছে ইসরায়েল। 

গত মাসে নেদারল্যান্ডসের হেগভিত্তিক এই আদালত রুল জারি করেছিল, উল্লিখিত অঞ্চলগুলোর ওপর নিজেদের ফৌজদারি বিচারব্যবস্থার প্রয়োগ করার অধিকার রয়েছে তাদের। যুদ্ধাপরাধের তদন্ত শুরু হওয়ায় ফিলিস্তিন এর প্রশংসা করলেও ফাতৌ বেনসাওদার এমন সিদ্ধান্ত খারিজ করে দিয়েছে ইসরায়েল। 

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) প্রধান কৌঁসুলি ফাতৌ বেন সাওদা

রোম নীতিমালার আওতায় কোন ব্যক্তি বা রাষ্ট্রের মাধ্যমে সংঘটিত গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্তদের বিচার করার এখতিয়ার রয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের। এছাড়া আইসিসি এ সংক্রান্ত অপরাধসূমহ সরাসরি আমলে নিয়ে তার বিচারকার্য সম্পন্ন করতে পারে।

তবে ইসরায়েল কখনোই রোম নীতিমালায় সমর্থন জানায়নি। কিন্তু ২০১৫ সালে জাতিসংঘের মহাসচিব ফিলিস্তিনিদের ওপর হওয়া যুদ্ধাপরাধের তদন্ত করার বিষয়টি গ্রহণ করে। তাই ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ওঠা যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ তদন্ত করে দেখার সুযোগ পেয়েছে আইসিসি। 

উল্লিখিত অভিযোগের তদন্ত শুরু করার জন্য যুক্তিসঙ্গত ভিত্তি থাকায় বিষয়টি নিয়ে পদক্ষেপ নিতে প্রধান কৌঁসুলি বাধ্য।

আইসিসির প্রধান কৌঁসুলি ফাতৌ বেনসাওদা

বুধবার এক বিবৃতি দিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের প্রধান কৌঁসুলি ফাতৌ বেনসাওদা বলেন, ‘যেখানে রাষ্ট্রীয় একটি পক্ষ বিদ্যমান পরিস্থিতি প্রসিকিউটরের কার্যালয়কে জানিয়েছে এবং উল্লিখিত অভিযোগের তদন্ত শুরু করার জন্য যুক্তিসঙ্গত ভিত্তিও রয়েছে, সেখানে বিষয়টি নিয়ে পদক্ষেপ নিতে প্রধান কৌঁসুলি বাধ্য।’    

ফাতৌ বেনসাওদা আরও বলেছেন, প্রায় পাঁচ বছর ধরে অনেক পরিশ্রম করে তিনি বিষয়টি নিয়ে প্রাথমিকভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজটি করেছেন এবং তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে কোনো ধরনের ভয় কিংবা পক্ষপাত ছাড়াই স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠভাবে তিনি এই অপরাধের তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করবেন।

তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে এমন অভিযোগ নিয়ে বিচারিক কার্যক্রম এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার যুক্তিসঙ্গত ভিত্তি রয়েছে এবং আমলে নেওয়ার মতো সম্ভাব্য অনেক অপরাধ ঘটেছে ওইসব অঞ্চলে।’

বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু আইসিসির তদন্ত শুরুর প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, এমন তদন্ত শুরুর সিদ্ধান্তটি ‘ইহুদীবিরোধী এবং ভণ্ডামির শামিল।’ এই সিদ্ধান্ত বদলে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি সতর্ক করে বলেছেন, ‘আজ রাতে ইসরায়েল রাষ্ট্রের ওপর হামলা হয়েছে।’

ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রিয়াদ আল-মালিকি অবশ্য এমন উদ্যোগের প্রশংসা জানিয়ে বলেছেন, ‘ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি দখলদার নেতাদের করা অপরাধ— যা চলমান, পদ্ধতিগত ও বিস্তৃত— এই তদন্তকে প্রয়োজনীয় ও জরুরি করে তুলেছে।’

এএস